ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে বাণিজ্যিকভাবে শুরু ড্রাগন চাষ

শিপলু জামান: ফলটি পুষ্টিগুণে ভরা হলেও নামটা কেনো ভয়ঙ্কর প্রাণী ড্রাগনের নামের সাথে মিল হলো? এ প্রশ্নের জবাব খোঁজার চেয়ে বাংলার মাটিতে কীভাবে এই ফল বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন করা যায় তা দেখতে নেমেই চমকে দিয়েছেন ঝিনাইদহ কালীগঞ্জের সৌখিন ফলচাষি বোরহান উদ্দীন।

১ বিঘা জমিতে ব্যতিক্রমী ফল ড্রাগনচাষ করে নজর কেড়েছেন অনেকের। ড্রাগনের চাষ এলাকায় এটাই প্রথম বলে দাবি বোরহানের। ড্রাগনের ধবধবে শাদা ফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে ভোর বেলা ক্ষেতের পাশে এলাকার মানুষ ভিড় জমায়। ড্রাগনের ফুল রাতে ফুটে ভোরের আলোতেই নষ্ট হয়ে যায়। বিদেশি এই ফলচাষে এলাকায় রীতিমত সাড়া ফেলে দিয়েছেন বোরহান উদ্দিন। ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে উপজেলার নিশ্চিন্তপুর গ্রামের বাসিন্দা বোরহান উদ্দিন কালীগঞ্জ উপজেলার খামার মুন্দিয়া গ্রামের মাঠে গত বছর ১ বিঘা জমিতে ৫৮০টি ড্রাগনের চারা রোপণ করেছিলেন। সঠিক পরিচর্যা করায় ১৬ মাসে গাছে পরিপুষ্ট ফল এসেছে। রফতানিযোগ্য এই ফলের ভবিষ্যত বাণিজ্যিক সম্ভাবনা নিয়ে আশাবাদী এ সৌখিন ফলচাষি প্রথম বছরই লাভের আশা করছেন।

বোরহান কালীগঞ্জ উপজেলার ইউনিভার্সেল পোল্ট্রি হ্যাচারিজ লিমিটেডের মার্কেটিং ম্যানেজার হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। সেই সুবাদে ওই প্রতিষ্ঠানের পরিচালক কৃষিবিদ ড. রুস্তম আলীর পরামর্শ পান। তারই পরামর্শে ও সহযোগিতায় ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে উপজেলার খামার মুন্দিয়া গ্রামের মাঠে এক বিঘা জমি লিজ নিয়ে ড্রাগনচাষ শুরু করেন। তিনি জানান ড.রুস্তম আলী গত বছর ময়মনসিংহ কৃষিবিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্ম থেকে তাকে ৫৮০টি ড্রাগনের চারা এনে দেন। তার নির্দেশিত চাষ পদ্ধতি অনুসরণ করে নির্দিষ্ট সময়ের আগেই গাছে ফল এসেছে। বোরহান জানান, বছরের যেকোনো সময়ই গ্রীষ্মকালীন এ ফলের চাষ করা যায়। সাধারণত জুলাই আগস্টে ফল পাকতে শুরু করে। ফল আসার ৪০ থেকে ৪৫ দিনের মাথায় ফল পেকে যায়।

একটি পরিপুষ্ট পাকা ফলের ওজন প্রায় ৩শ থেকে ৪শ গ্রাম হয়। এক নাগাড়ে প্রায় ৩ থেকে ৪ মাস ফল সংগ্রহ করা যায়। বোরহানের ১ বিঘা জমিতে ড্রাগন চাষ করতে জমি প্রস্তুত, সার, ওষুধ, সেচ, সিমেন্টের পিলার, মোটরসাইকেলের টায়ার পরিচর্যা বাবদ প্রায় ২ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। তিনি জানান, গাছে যেভাবে ফল এসেছে তাতে এক বিঘা জমিতে প্রায় ৫শ থেকে ৬শ কেজি ফল পাওয়া যেতে পারে। প্রতি কেজি ফল ৪শ টাকা দরে বিক্রি হলেও এ বছরে প্রায় অর্ধলাখ টাকা লাভ পেতে পারেন বলে জানান তিনি। ড্রাগনের চারা একবার রোপণ করলে ১৫-২০ বছর পর্যন্ত এক নাগাড়ে ফল দেয়। সেক্ষেত্রে ২য় বছর থেকে চাষ বাবদ খরচ একেবারেই কম লাগে। এ কারণে এ ফল চাষ যথেষ্ঠ লাভজনক হবে বলে তিনি আশাবাদি। এ বছরে নিজের উৎপাদিত ১ হাজার চারা ড.রুস্তম আলীর কাছে বিক্রিও করেছেন। প্রতিটি চারার বাজার দর ৬০/৭০টাকা। আগামী বছরে ঝিনাইদহ জেলাব্যাপি এ ফলের চাষ ছড়িয়ে দেয়ার লক্ষ্যে বেশ কিছু চারা উৎপাদন করছেন তিনি।

এ ব্যাপারে কালীগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোশাররফ হোসেন জানান, বাংলাদেশে এ ফলের চাষ এখনও সেভাবে শুরু হয়নি। কালীগঞ্জ উপজেলায় বোরহান ও স্বপন নামের ২ জন চাষি ক্যাকটাস প্রজাতির এ ফলের চাষ শুরু করেছেন। অধিক পুষ্টিগুণ সম্পন্ন এ ফল চোখকে সুস্থ রাখে, শরীরের চর্বি কমায়, রক্তের কোলেস্টেরল কমায়, উচ্চ রক্তচাপ কমানোসহ রোগ প্রতিরোধ করে। এছাড়া এ ফল ডায়াবেটিস রোগীর ভাতের পরিবর্তে এ ফল প্রধান খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করা যায় বলে অচিরেই এ ফলের স্থানীয় বাজার সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। স্থানীয় বাজার সৃষ্টির মাধ্যমে ফল বিক্রির ব্যবস্থা করা গেলে এ ফল চাষে কৃষকেরা লাভবান হবেন বলে তিনি জানান।