প্রস্তাবিত বাজেটে অর্থ বরাদ্দের যে আশ্বাস তাতে আগামী বছরও এমপিও দেয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই

স্টাফ রিপোর্টার: সারাদেশে ৮ হাজারের বেশি স্কুল, কলেজ ও মাদরাসা আছে যারা এমপিও (বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বেতনের সরকারি অংশ) পাচ্ছেন না। এসব প্রতিষ্ঠানে কর্মরত লক্ষাধিক শিক্ষক-কর্মচারী অর্থ কষ্টে আছেন।

শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ সম্প্রতি বলেন, নতুন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে এমপিও দেয়ার কোনো সিদ্ধান্ত আমরা এখনও নিইনি। এই কাজটি অর্থ প্রাপ্তির ওপর নির্ভর করে। কিন্তু এ খাতে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ নেই। বর্তমান সরকার সর্বশেষ ২০১০ সালে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে এমপিও দিয়েছিলো। ওই বছর মোট ১৬২৬টি প্রতিষ্ঠানকে এ সুবিধা দেয়া হয়। এরপর থেকে এমপিও বন্ধ আছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, কেবল এ বছরই নয়, প্রস্তাবিত বাজেটে এই খাতে অর্থ বরাদ্দের যে আশ্বাস পাওয়া গেছে, তাতে আগামী বছরও এমপিও দেয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই।

আগামী ৪ জুন জাতীয় সংসদে নতুন অর্থবছরের বাজেট পেশ হবে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আসন্ন ওই বাজেটে নতুন এমপিও খাতে মাত্র ৩৫ কোটি টাকা অর্থ বরাদ্দের প্রস্তাব পাওয়া গেছে। চলতি অর্থবছরের শুরুতে এই খাতে বরাদ্দ ছিলো ৩১ কোটি ৩১ লাখ টাকা। এখান থেকে আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী এমপিও দিতে গিয়ে বেশির ভাগ টাকা খরচ হয়ে গেছে। ওই ব্যয় মিটিয়ে শেষ পর্যন্ত এই খাতে মাত্র ৯ কোটি টাকার মতো অবশিষ্ট থাকবে বলে সূত্র জানিয়েছে। প্রসঙ্গত, ২০১০ সালে ৬১ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে এমপিও দিয়েও তালিকা থেকে বাদ দেয়া হয়েছিল, তারা মামলা করে জয়লাভ করে এসেছে। ওইসব প্রতিষ্ঠানকে চলতি বছরের বরাদ্দ থেকে অর্থ দেয়া হয়েছে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এমপিও কার্যক্রমের দায়িত্ব পালন করেন যুগ্মসচিব রুহী রহমান। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, পুরনো দাবি মেটাতে গিয়ে নতুন এমপিও খাতের বেশির ভাগ অর্থ খরচ হয়ে গেছে। নতুন অর্থবছরে টাকা পাওয়া গেলে হয়তো নতুন সিদ্ধান্ত আসতে পারে। তবে এখন পর্যন্ত এমপিও দেয়ার কোনো প্রক্রিয়া আমরা নিইনি।

এদিকে নতুন এমপিও দেয়ার ব্যাপারে সরকারের যে নীতিমালা রয়েছে তা সংশোধনের কাজ বর্তমানে চলছে। মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, নতুন কারিকুলাম অনুযায়ী স্কুল-কলেজ-মাদরাসায় নতুন নতুন বিষয়ের অন্তর্ভুক্তিসহ বিভিন্ন কারণে এই নীতিমালা সংশোধনের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। নীতিমালার একটি খসড়া ইতোমধ্যে তৈরি হয়েছে। তা চূড়ান্ত করতে আগামী ২ জুন ঢাকায় একটি কর্মশালার আয়োজন করা হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, গত বছরের ৩০ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শিক্ষা মন্ত্রণালয় পরিদর্শনকালে এমপিওভুক্তির ব্যাপারে যেসব নির্দেশনা দিয়ে গেছেন, নীতিমালা প্রণয়নে এবার সেগুলো অগ্রাধিকার দেয়া হচ্ছে।

২০১০ সালে ঢাকঢোল পিটিয়ে বিগত মহাজোট সরকার এমপিও দেয়ার মাধ্যমে মূলত ৬ বছরের এমপিও-বন্ধ্যাত্ব ঘুচিয়েছিলো। অর্থ্যাৎ এর আগে ২০০৪ সালে সর্বশেষ চারদলীয় জোট সরকার এমপিও দেয়। এরপর আর্থিক সংকট, এমপিও নিয়ে দুর্নীতি, এমপিওর অপব্যবহার, অপচয়সহ নানা কারণে এক প্রকার ঘোষণা দিয়েই এমপিও দেয়া বন্ধ করে দেয়া হয়েছিলো। এ নিয়ে তৎকালীন বিরোধী দল আওয়ামী লীগের শিক্ষা সম্পাদক বর্তমান শিক্ষামন্ত্রীই অনেক বক্তৃতা দিয়েছেন। এখন সেই মন্ত্রীর আমলেই এমপিও বন্ধ রয়েছে বলে শিক্ষক-কর্মচারীরা বলে থাকেন।

শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, কোনো প্রতিষ্ঠান একবার এমপিওভুক্ত করা হলে আর কখনোই সরকারি বরাদ্দের বাইরে রাখা যায় না। মন্ত্রণালয়ে যে পরিমাণ অর্থ রয়েছে, তা দিয়ে যে কোনো সময়েই এমপিও দেয়া যায়। কিন্তু পরবর্তী অর্থবছরে এদের বেতন-ভাতা চালিয়ে নেয়ার ব্যাপারে অর্থ বরাদ্দ প্রাপ্তির নিশ্চয়তা পেতে হবে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে। নইলে এমপিও দেয়া যায় না।

এমপিওহীন প্রতিষ্ঠান কত: সর্বশেষ এমপিও উপলক্ষে দেশের প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছ থেকে আবেদন চাওয়া হয়েছিলো। ২০১০ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি থেকে ২৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চূড়ান্তভাবে আবেদন জমা পড়েছিলো ৭ হাজার ৫৩৩টি। ওইসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে তখন প্রায় ৪ হাজারকে বৈধ হিসেবে বাছাই করা হয়েছিলো। এরমধ্যে ১ হাজার ৬২৫টি এমপিও পেয়েছে। বৈধ হিসেবে বাকি থাকে প্রায় আড়াই হাজার। আবার সারাদেশে এমপিওহীন প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৪ হাজার ৬৯৩টি রয়েছে, যা কোনো স্তরেই এমপিওভুক্ত নয়। এর বাইরে গত সাড়ে ৩ বছরে সারা দেশে আরও সহস্রাধিক স্কুল গড়ে উঠেছে বলে জানা গেছে। সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী স্কুল ম্যাপিং, দূরত্ব কিংবা ছাত্র-শিক্ষক সংখ্যা ইত্যাদি বিচারে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপিত হওয়ার কথা। উল্লিখিত প্রতিষ্ঠানের বেশির ভাগই সরকারি বিধি-বিধান মেনে প্রতিষ্ঠিত নয়। এর বাইরে স্বীকৃতিপ্রাপ্ত কিন্তু নিম্নস্তরে এমপিওভুক্ত- এমন প্রতিষ্ঠান রয়েছে ৪ হাজার ৪৩৮টি। বর্তমানে সারাদেশে এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে ২৭ হাজার ৩০৭টি।