বেতন বৃদ্ধির পর মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধির আশঙ্কাও অমূলক নয়

 

সচিব কমিটি সুপারিশকৃত সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন বেতন কাঠামো অনুমোদনের জন্য মন্ত্রিপরিষদে উঠতে যাচ্ছে। এটি অনুমোদনের ক্ষেত্রে ধারাবাহিকতা অনুযায়ী অর্থমন্ত্রী দেখার পর আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকে এ কাঠামো নিয়ে আলোচনার পরই মন্ত্রিপরিষদে উঠবে। গণমাধ্যমে প্রকাশিত এ সংক্রান্ত প্রতিবেদনে জানা যায়, বেতন ও চাকরি কমিশন সর্বোচ্চ ৮০ হাজার এবং সর্বনিম্ন ৮ হাজার ২শ টাকা মূল বেতন ধরে নতুন বেতন কাঠামোর সুপারিশ করলেও সচিব কমিটি এর পরিমাণ সর্বোচ্চ ৭৫ হাজার এবং সর্বনিম্ন ৮ হাজার ২শ ৫০ টাকা সুপারিশ করেছে। নতুন বেতন স্কেলে বর্তমানের ২০টি গ্রেড রাখার পক্ষে মত দেয়া হয়েছে। এটি কেবিনেটে যেতে মাস দুয়েক লাগবে এবং ১ জুলাই থেকে কার্যকর হবে বলে অর্থমন্ত্রী গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন। আর এটি বাস্তবায়িত হলে সরকারি চাকরিজীবীর বেতন ৮৭ থেকে ১০১ শতাংশ বাড়বে।

অনস্বীকার্য যে, পণ্যের বাজারদরের সাথে সঙ্গতি রেখে চলতে গেলে বেতন বাড়ানোর কোনো বিকল্প থাকে না। কিন্তু এ ক্ষেত্রে অতিরিক্ত যে পরিমাণ অর্থ প্রতি মাসে রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে বের হয়ে যাবে, তা পূরণের জন্য রাষ্ট্রের নানা ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব পড়ার বিষয়টিও বিবেচনায় নিতে হবে।

অন্যদিকে, সরকারি বেতন কাঠামো পুনর্বিন্যাসের ক্ষেত্রে পণ্যের বাজারদরের ওঠানামার বিষয়টিও আমাদের দেশে নতুন নয়। সামান্য অজুহাতেই যেখানে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ার নজির রয়েছে, সেখানে বেতন বৃদ্ধির পর মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধির আশঙ্কাও অমূলক নয়। ফলে এ প্রবণতা রোধেও সরকারকে আগে থেকে প্রস্তুতি নেয়া জরুরি বলেই প্রতীয়মান হয়। চাকরিজীবীদের কর্মদক্ষতা বাড়াতে হলে তাদের আকর্ষণীয় বেতন দেয়া দরকার পে-কমিশনের চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন এমনটিই বলেছেন। একই সাথে অর্থমন্ত্রী বলেছেন, প্রত্যেকেরই বেতন বাড়ানো উচিত। প্রতিবেদনে এটি সুপারিশ করা হয়েছে। কমিশনের সুপারিশ কার্যকর হলে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী সবাই উপকৃত হবেন এ কথা নিঃসন্দেহে বলা যায়। এছাড়া সরকারি চাকরিজীবীরা দুর্ঘটনার শিকার হলে যাতে আর্থিক সুবিধা পান, সেজন্য বীমা সুবিধার সাথে বিদ্যমান বাড়িভাড়া, চিকিৎসা ভাতা, যাতায়াত, আপ্যায়ন, উৎসব, শান্তি, বিনোদন, টেলিফোন, গাড়ি, মোবাইলফোনসহ অন্যান্য আর্থিক সুবিধা যৌক্তিক করারও প্রস্তাব থাকছে এ সুপারিশে। এটি নিঃসন্দেহে একটি শুভ উদ্যোগ।
সরকারি বিধি মোতাবেক পাঁচ বছর পরপর সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য নতুন বেতন নির্ধারণ করার কথা। এখন যে বেতন কাঠামো কার্যকর রয়েছে তা ২০০৯ সালে করা, ফলে এটাও মানতে হবে যে, নতুন বেতন কাঠামো কার্যকর জরুরি হয়ে পড়েছে। বর্তমান কাঠামোয় সর্বোচ্চ ৪০ হাজার এবং সর্বনিম্ন ৪ হাজার ১শ টাকা স্কেল নির্ধারিত রয়েছে। বেতন-ভাতাসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধাও যুক্ত আছে। এতে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বাজারদরের সাথে মিলিয়ে জীবন ধারণের বিষয়টি সত্যিই কষ্টসাধ্য হয়ে উঠেছে। সরকার এ বিষয়টিকেই আমলে নিয়েছে। সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য নতুন বেতন কাঠামো কার্যকর করা বর্তমান সরকারের রাজনৈতিক অঙ্গীকারও বটে।

লক্ষণীয় যে, গত অর্থবছরের বাজেটে পে-কমিশনের ঘোষণা দেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। গত বছরের নভেম্ব্বরে এ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিনকে চেয়ারম্যান নিয়োগ করে পে-কমিশন কার্যকর করা হয়। কমিশনের প্রতিবেদন পর্যালোচনা কমিটি প্রায় পাঁচ মাস পর জমা হওয়া এ প্রতিবেদন পাওয়ার পর অর্থমন্ত্রী বলেছেন, সময়ের সাথে বেতন বাড়াটা খুবই জরুরি। তবে তিনি এর সাথে বাজারের ওপর কোনো প্রভাব পড়বে না বলে মন্তব্য করেছেন। আমরাও মনে করি অর্থমন্ত্রীর কথা সত্য হোক। কারণ নতুন বেতন কাঠামো কার্যকর হওয়ার সাথে সাথে বাজারে এর বিরূপ প্রভাব পড়লে নিম্নআয়ের মানুষ ও দরিদ্রদের নাভিশ্বাস ওঠার আশঙ্কা উড়িয়ে দেয়া যায় না। নতুন বেতন স্কেল কার্যকর সরকারের অঙ্গীকার হলেও সাধারণ মানুষের বিষয়টি আগে বিবেচনায় নিতে হবে। মূল্যস্ফীতি রোধে এখন থেকেই কার্যকর ও সতর্ক উদ্যোগের কোনো বিকল্প নেই। এ ব্যাপারে সরকারের আন্তরিকতাই আমাদের প্রত্যাশা।

Leave a comment