মেহেরপুরে ডায়রিয়ার প্রকোপ কমছে না : হাসপাতালে তিল ধরায় ঠাই নেই
মহাসিন আলী/মাজেদুল হক মানিক: মেহেরপুরে কোনোভাবেই কমছে না ডায়রিয়ার প্রকোপ। মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালে প্রতিদিন ৪০ থেকে ৫০ জন রোগী ভর্তি হচ্ছেন। এর মধ্যে গত বুধবার দুপুরে ও বৃহস্পতিবার সকালে দুজনের মৃত্যু হয়েছে। হাসপাতাল থেকে গঠিত দুটি তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন পেশ হলেও কমেনি ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা। গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত প্রায় ৮০ জন ভর্তি হয় মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালে। এর বেশির ভাগ মেহেরপুর শহরের বিভিন্ন পাড়ার বাসিন্দা।
মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালসূত্রে জানা গেছে, গত বুধবার সকালে শহরের সার্কিট হাউজপাড়ার ভাড়াটিয়া রাশেদ আহম্মেদের স্ত্রী পিংকি খাতুন (২৬) ডায়রিয়া আক্রান্ত হলে মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হন। চিকিৎসার এক পর্যায়ে বিকেলে তার মৃত্যু হয়। অপরদিকে সদর উপজেলার রাইপুর গ্রামের আরোজ আলী (৭০) বুধবার রাতে একই হাসপাতালে ভর্তির পর বৃহস্পতিবার সকালে তার মৃত্যু হয়। দু’জনের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেন হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) অলোক কুমার দাস। তবে তিনি জানান, ডায়রিয়ার পাশাপাশি হার্টস্ট্রোকে পিংকির মৃত্যু হয়েছে।
গত মাসের শেষের দিকে জেলার বিভিন্ন স্থানের নানা বয়সী মানুষ ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হতে থাকে। প্রথম দিকে হাসপাতালে কয়েকজন রোগী আসা শুরু হলেও সপ্তাখানেক পরে ব্যাপকতা বাড়তে থাকে। হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডের ১০ শয্যার বিপরীতে রোগী ভর্তি হয় অর্ধশত থেকে শতাধিক রোগী। বার্ষিক লক্ষ্যের চেয়ে রোগীর পরিমাণ কয়েকগুন ছাড়িয়ে যাওয়ায় তীব্র ওষুধ সঙ্কট দেখা দেয়। আশপাশের জেলা থেকে ওষুধ ধার নিয়ে চিকিৎসাসেবা চলছিলো কোনোমতে। বেড ও ওয়ার্ডে জায়গা না পেয়ে হাসপাতালের বারান্দার ওলি-গলিতে রোগীদের বিছানা দেয়া হয়। গেল ৪ মে রাতে মেহেরপুর শহরের চক্রপাড়া ও স্টেডিয়ামপাড়ার ৩০ জন ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী হাসপাতালে ভর্তি হলে পৌরসভার সরবরাহকৃত পানি পরীক্ষার দাবি ওঠে। ডায়রিয়া মহামারিরূপ নেয়ার আশঙ্কায় গত ৮ মে সিভিল সার্জন কার্যালয় ও জেনারেল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ পৃথক দুটি তদন্ত টিম গঠন করেন। ওই টিম দুদিন পরে প্রতিবেদন জমা দেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়, অতিরিক্ত গরম, বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ বেশি, অপরিষ্কার পরিবেশে বসবাস ও খাওয়া-দাওয়া এবং মরসুমি ফল খেয়ে মানুষ ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, গত সপ্তাহে ৪৮৩ জন রোগী ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়েছে। আক্রান্তদের মধ্যে মেহেরপুর পৌরসভা এলাকার রোগীর সংখ্যা ছিলো ১৪৩ জন। পৌরসভার বাইরের রোগীর সংখ্যা ২৩৩ জন ও শিশু রোগীর সংখ্যা ১০৭ জন। ডায়রিয়া ওয়ার্ডে ভর্তিরত রোগী ও তার আত্মীয়স্বজন এবং হাসপাতালে কর্মরত নার্সদের সাথে কথা বলে এ তদন্ত রিপোর্ট দেয়া হয়েছে বলে জানান ডা. অলোক কুমার দাস। তবে পানিবাহিত কোনো জীবাণু থেকে ডায়রিয়া হচ্ছে কি-না তা জানা যায়নি।
এদিকে মেহেরপুর পৌর মেয়র আলহাজ মোতাচ্ছিম বিল্লাহ মতু জানান, পৌরসভার পানি থেকে জীবাণু ছড়ায়নি। তারপরও অধিকতর নিশ্চিত হতে পানি বুয়েটে টেস্টের জন্য প্রেরণ করা হয়েছে। দু একদিনের মধ্যে পরীক্ষার প্রতিবেদন হাতে আসবে। মেহেরপুর সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ আজিজুর রহমান সিদ্দিকী জানান, খাদ্যাভ্যাস ও পারিপার্শ্বিক পরিবেশ বিবেচনায় রেখে খাওয়া-দাওয়া ও পরিশ্রম করা এবং সবসময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকলে ডায়রিয়ার ঝুঁকি এড়ানো যাবে।