মেহেরপুরে গ্রেটার কুষ্টিয়া নিউজ ও মেহেরপুরের শিকড় পরিবারের আয়োজনে
মেহেরপুর অফিস: গ্রেটার কুষ্টিয়া নিউজ ও মেহেরপুরের শিকড় পরিবারের আয়োজনে গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যা ৭টায় মেহেরপুর জেলা শিল্পকলা একাডেমীতে গ্রেটার কুষ্টিয়া অঞ্চলের গুণীদের সংবর্ধনা প্রদান করা হয়েছে। গুণী সংবর্ধনা প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন মেহেরপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) হেমায়েত হোসেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন মেহেরপুরের প্রবীণ সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন মীরু। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মেহেরপুর পৌর মেয়র মোতাছিম বিল্লাহ মতু, মেহেরপুর জেলা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাড. পল্লব ভট্টাচার্য ও দৈনিক আলোকিত বাংলাদেশের বার্তা সম্পাদক তারিক-উল ইসলাম। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন শিকড়’র সম্পাদক মুজাহিদ মুন্না। অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সাপ্তাহিক মুক্তিবাণী’র নির্বাহী সম্পাদক ও গ্রেটার কুষ্টিয়া নিউজের সম্পাদক মুহম্মদ রবিউল আলম, জেলা শিল্পকলা একাডেমির সহসভাপতি প্রভাষক নূরুল আহমেদ, সাবেক সাধারণ সম্পাদক সহকারী অধ্যাপক সাইদুর রহমান, খুলনা বিভাগীয় প্রেসক্লাব ফেডারেশনের যুগ্মমহাসচিব ও দৈনিক প্রথম আলো’র মেহেরপুর প্রতিনিধি তুহিন অরণ্য, মেহেরপুর প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে সম্মাননা ক্রেস্ট গ্রহণ করেন বিশিষ্ট সাংবাদিক ও কবি দৈনিক বাংলাদেশ বার্তার সম্পাদক আবদুর রশীদ চৌধুরী, বিশিষ্ট কথা সাহিত্যিক অধ্যাপক হাবিব আনিসুর রহমান, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ আব্দুল মতিন মাস্টার, বিশিষ্ট গবেষক ও শিক্ষাবিদ অধ্যক্ষ হামিদুল হক মুন্সী, বিশিষ্ট কথা সাহিত্যিক, কবি ও শিক্ষাবিদ রফিকুর রশীদ, বিশিষ্ট চিকিৎসক আবদুস শহীদ, বিশিষ্ট ক্রীড়া সংগঠক আব্দুর রহমান। বিশিষ্ট গবেষক ও শিক্ষাবিদ ড. মুহাম্মদ ফজলুল হক অনুষ্ঠানে উপস্থিত হতে না পারায় তাঁর পক্ষে মুজাহিদ মুন্না সম্মাননা ক্রেস্ট গ্রহণ করেন।
এদিকে বিশিষ্ট সাংবাদিক ও দৈনিক মাথাভাঙ্গার সম্পাদক সরদার আল আমিন অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে না পারায় তাঁর পক্ষে দৈনিক মাথাভাঙ্গার মেহেরপুর অফিস প্রধান সাংবাদিক মহাসিন আলী সম্মাননা ক্রেস্ট গ্রহণ করেন। সাপ্তাহিক মুক্তিবাণী’র নির্বাহী সম্পাদক ও গ্রেটার কুষ্টিয়া নিউজের সম্পাদক মুহম্মদ রবিউল আলম তার বক্তব্যে মেহেরপুরে রেললাইন ও স্থলবন্দর বাস্তবায়ন, মুজিবনগর ভিত্তিক কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন এবং মেহেরপুর, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদহ ও মাগুরা জেলাকে নিয়ে মুজিবনগর বিভাগ নামকরণের দাবি জানান। সম্মাননা ক্রেস্ট পাওয়ার পরে সংবর্ধিত গুণীজনরা তাঁদের অনুভুতি ব্যক্ত করতে গিয়ে বলেন- ইতিহাস-ঐতিহ্য খ্যাত মেহেরপুরের মুজিবনগরকে শুধু বুকে ধারণ করলে হবে না। এর উন্নয়নে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।
বিশিষ্ট গবেষক ও শিক্ষাবিদ অধ্যক্ষ হামিদুল হক মুন্সী এবং বিশিষ্ট সাংবাদিক ও কবি দৈনিক বাংলাদেশ বার্তা’র সম্পাদক আবদুর রশীদ চৌধুরী মুজিবনগরকে বিভাগ হিসেবে দেখতে একমত পোষণ করেন। তাঁরা স্বাধীনতার সূতিকাগার মুজিবনগর তথা মেহেরপুরসহ গ্রেটার কুষ্টিয়া অঞ্চলের উন্নয়ন দাবী করেন। অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি আলহাজ মো. মোতাচ্ছিম বিল্লাহ মতু মেহেরপুরের উন্নয়নে সকলের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। মুজিবনগরকে বিভাগ করার দাবিও করেন তিনি। গুণীদের সম্মাননা দেয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করে তিনি বলেন- যেখানে গুণীদের সংবর্ধনা দেয়া হবে, সেখানে গুণী জন্মাবে। তিনি অনুষ্ঠানের আয়োজকদের ধন্যবাদ দেন।
দৈনিক আলোকিত বাংলাদেশ’র বার্তা সম্পাদক তারিক-উল ইসলাম মেহেরপুরের সন্তান হিসেবে মেহেরপুরের উন্নয়ন কামনা করেন। তিনি বলেন- মেহেরপুরে অনেক গুণী ব্যক্তি জন্ম নিয়েছেন। এ অঞ্চলের শিক্ষা-সাহিত্য ও সাংস্কৃতির কথা বলতে শিকড় পত্রিকা অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি মেহেরপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক হেমায়েত হোসেন এমন গুণী সংবর্ধনার প্রশংসা করে আয়োজকদের সাধুবাদ জানান। তিনি সরকারের পাশাপাশি বেসরকারিভাবে বিভিন্ন সংঠনকে গুণীদের মূল্যায়ণ করার জন্য এগিয়ে আসার অহ্বান জানান। পরে শিকড়’র আয়োজনে সেখানে কুইজ প্রতিযোগিতা শেষে পুরস্কার বিতরণ ও মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।
যারা পদক পেলেন
আবদুর রশীদ চৌধুরী : জন্ম ১৬ নভেম্বর ১৯৪৫। বিশিষ্ট সাংবাদিক, কবি, সাংস্কৃতিক সংগঠক ও সমাজ সেবক। তিনি দৈনিক বাংলাদেশ বার্তা, সাপ্তাহিক জাগরনী ও দি বাংলাদেশ রিভিও পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশক। তিনি এ অঞ্চলের সাংবাদিকতা আন্দোলনের অন্যতম নেতা। তিনি ১৯৪৫ সালের ১৬ই নভেম্বর কুষ্টিয়ায় জন্মগ্রহণ করেন। প্রায় ৪ দশক ধরে ‘দৈনিক সংবাদ’ এর নিজস্ব সংবাদদাতা ও জেলা বার্তা পরিবেশক, আড়াই দশক যাবত বাংলাদেশ টেলিভিশনে কুষ্টিয়া জেলা প্রতিনিধি হিসাবে কর্মরত। তিনি দীর্ঘকাল ধরে কবিতা রচনা করে আসছেন। তাঁর কাব্য গ্রন্থঃ নির্জনে আমি একা; প্রেক্ষিতে মুখর নদী, আয়নায় নিসর্গ রমণ (সম্পাদিত)। তাঁর সম্পাদিত দৈনিক বাংলাদেশ বার্তা এ অঞ্চলের একটি জনপ্রিয় দৈনিক। তিনি বাংলাদেশ সম্পাদক পরিষদের সহ-সভাপতি ও বাংলাদেশ সংবাদপত্র পরিষদের নির্বাহী সদস্য। তিনি বিভিন্ন সমাজ সেবামূলক সংগঠনের সাথে জড়িত। তিনি একজন চিত্রশিল্পী ও এক্ষেত্রে তিনি উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করেন। তিনি ঢাকা থেকে বিএফএ ডিগ্রী অর্জন করেন এবং ভারত থেকে ডিপ্লোমা ইন-জানালিজম লাভ করেন। তিনি কুষ্টিয়া লায়ন্স ক্লাব জেলা ৩১৫ এর সভাপতি ছিলেন। বর্তমানে কুষ্টিয়া রাইফেল ক্লাবের সহ-সভাপতি ও কুষ্টিয়া ক্লাবের সাংস্কৃতিক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি ঐতিহ্য পরিষদ, কুষ্টিয়ার সাধারণ সম্পাদক। তিনি সাংবাদিকতায় কবি জসিমউদ্দিন পদক ছাড়াও ভারত থেকে চারটি পদক পান। স্থানীয়ভাবে ঢাকাস্থ কুষ্টিয়া জেলা সমিতি, কুষ্টিয়া জেসিস ক্লাব, হাজি মোকাদ্দেস ফাউন্ডেশন মেধা, ড. আলাউদ্দিন আহম্মেদ ফাউন্ডেশন পদক, উত্তরবঙ্গ সাংস্কৃতিক সংঘ পদক ছাড়াও ২০টি পদক পেয়েছেন। সাংবাদিকতা ও সমাজ সেবায় বিশেষ অবদান রাখার জন্য দেশে ও দেশের বাইরে তাঁকে অন্ততঃ ২৫ টি সংবর্ধনা জ্ঞাপন করা হয়। পিআইবি প্রকাশিত সাংবাদিক অভিধানে কুষ্টিয়া জেলার একমাত্র জীবিত সাংবাদিক হিসেবে তাঁর নাম অন্তর্ভূক্ত রয়েছে। তিনি জাগরনী প্রকাশনের স্বত্ত্বাধিকারী ও জাগরনী সাহিত্য সংসদের সভাপতি। তাঁর স্ত্রী তসলিমা চৌধুরী বুলবুল কবি ও সাংবাদিক। এ অঞ্চলে সাংবাদিকতা ও সমাজসেবার ক্ষেত্রে আবদুর রশীদ চৌধুরী দীর্ঘ চার দশক ধরে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছেন। তার সম্পাদিত দৈনিক বাংলাদেশ বার্তা এই অঞ্চলের সাহিত্য, সাংস্কৃতি, অর্থনীতি, রাজনীতিসহ সব ক্ষেত্রে অন্যতম মুখপত্র হিসেবে দীর্ঘ কালধরে কাজ করে চলেছে।
প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ফজলুল হক : এদেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পপতি, শিক্ষাবিদ, সমাজ সেবক ও রাজনীতিবিদ। ঢাকার উত্তরা বিশ্ববিদ্যালয়ের চেয়ারম্যান ড. মুহাম্মদ ফজলুল হক ১৯৩৭ সালের ১৫ই আগষ্ট বর্তমান কুষ্টিয়া জেলার দৌলতপুরের বাগোয়ান গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন। তার পিতা মরহুম আলহাজ্ব আমির উদ্দিন আহমদ। ড. মুহম্মদ ফজলুল হক ছাত্র জীবনে মেধাবী ছিলেন। কলেজ জীবন শেষ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে অনার্সসহ এম এ ডিগ্রী লাভ করেন। এছাড়া তিনি অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কৃষি অর্থনীতিতে পোষ্ট গ্রাজুয়েট ডিগ্রী লাভ করেন। তার সুদীর্ঘ ও বৈচিত্রময় কর্মজীবনে তিনি বহু গুরুত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। তিনি ১৯৬২ সালে পাকিস্তান হাই কমিশনে রিক্রুটমেন্ট অফিসার হিসেবে যোগদান করেন। পরে ১৯৬৫ সালে পূর্ব পকিস্তান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে, ১৯৭৩ সালে লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের (ডুব পড়ষষধমব) এ যোগদান করেন। তিনি ১৯৭৪ সালে আমেরিকায় (ঊঅঝঅগঝ) কোম্পানীতে কনসালট্যান্ট হিসাবে কর্মরত ছিলেন। পরে ১৯৭৫ সালে মালয়েশিয়ার চবৎঃধহরড়হ বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিদর্শক প্রভাষক হিসেবে যোগদান করেন। ১৯৭৬ সালে তিনি ফিলিপাইন বিশ্ববিদ্যালয়ে এটলস ব্যানাস এর পরিদর্শক প্রফেসর হিসেবে যোগ দেন। ১৯৭৮ সালে তিনি মালয়েশিয়ার চীফ প¬ানিং ডিভিশনে যোগদান করেন। ১৯৮৯ সালে তিনি এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের কনসালট্যন্ট হিসেবে কাজ করেন। তিনি ছাত্র জীবনে ছাত্রদের স্বার্থে বিভিন্ন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে নেতৃত্ব দেন। তিনি তার ব্যক্তিগত ও সরকারী অনুদানে তাঁর এলাকাসহ কুষ্টিয়ায় স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা মসজিদ এতিমখানা প্রতিষ্ঠা করেছেন। অনেক সময় সরকারী অনুদানের পাশাপাশি ব্যক্তিগতভাবে বিভিন্ন ক্ষেত্রে অনুদান দিয়ে প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন। এছাড়া ব্যক্তিগতভাবে তিনি ড. মুহম্মদ ফজলুল হক গার্লস ডিগ্রী কলেজ ও ডাঃ একরামুল হক মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়, মিসিরুল¬াহ মেমোরিয়াল মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি বহু গবেষনামূলক প্রবন্ধ ও গ্রন্থ প্রকাশ করেছেন। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ হচ্ছে- ছড়ানো পৃথিবী, নবাব সিরাজউদ্দৌলা ও বাংলার মসনদ এবং আমার জীবন স্মৃতি। বাংলাদেশের জাতীয় দৈনিক ইত্তেফাক, সংবাদ, ইনকিলাবসহ গত দুই দশকে তাঁর অসংখ্য আর্টিকেল ছাপা হয়েছে। তিনি ইউরোপ আমেরিকা ও এশিয়ার বিভিন্ন দেশ ভ্রমণ করেছেন। বর্তমান তিনি আমির গ্রুপ অব কোম্পানির চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক। তিনি জাতীয় পার্টি (এরশাদ) এর কেন্দ্রীয় কমিটির সম্মানীত উপদেষ্টা। তিনি ব্যক্তিগত জীবনে বিবাহিত। তাঁর স্ত্রী ডঃ নাজমা ইয়াসমিন হক রেডিয়ান্ট ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের প্রিন্সিপাল। ড. হক তিন ছেলের জনক। দুই ছেলে আমেরিকা প্রবাসী। বর্তমান তিনি ঢাকার উত্তরাতে বসবাস করছেন। তিনি সাপ্তাহিক পলাশীর সম্পাদক ও প্রকাশক। তিনি উত্তরা বিশ্ববিদ্যালয় ও ড. মুহম্মদ ফজলুল হক গালর্স ডিগ্রী কলেজের প্রতিষ্ঠাতা। তিনি ডা. একরামুল হক মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান।
অধ্যক্ষ হাবিব আনিসুর রহমান : মেহেরপুরে জন্ম গ্রহণ করেন ১৯৫৩ সনে। ১৯৭৫ সনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাসে এম.এ করার পর তিনি পেশা হিসেবে বেছে নেন অধ্যাপনা। পাবালিক সার্ভিস কমিশনের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে তৎকালিন ‘বাংলাদেশ এডুকেশন সার্ভিস’-এ যোগ দেন ১৯৭৯ সনে। প্রথম কর্মস্থল চট্টগ্রাম সরকারি কলেজে প্রায় দশ বছর অধ্যাপনা করেন। পরে কুষ্টিয়া সরকারি কলেজ ও যশোর সরকারি এম, এম কলেজেও অধ্যাপনা করেন। তিন বছর তিনি কুষ্টিয়া সরকারি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করেন। স্বেচ্ছাবসর নিয়ে এখন ঢাকাতে বসবাস করছেন। অধুনালুপ্ত সাপ্তাহিক বিচিত্রা ও পাক্ষিক শৈলীসহ প্রায় প্রতিটি জাতীয় দৈনিকের সাহিত্য পাতায় লিখে আসছেন নিয়মিত। তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থগুলো হলো- গুলেনবারি সিনড্রোম ও অন্যান্য গল্প (২০০২); অষ্টনাগ ষোলচিতি (গল্প গ্রন্থ, ২০০৫); পোড়ামাটির জিলাপি ও অন্যান্য গল্প (২০০৭); বন্দিভূতের ফন্দি (কিশের উপন্যাস, ২০০৮); পক্ষী ও সারমেয় সমাচার (উপন্যাস, ২০১০); পুষ্পরাজ সাহা লেন (উপন্যাস, ২০১১); পেয়ারী বেগমের বাঘবন্দি খেলা (গল্পগ্রন্থ, ২০১২) ভালোবাসেন বই পড়তে ও লিখতে আর সেতার শুনতে।
আবদুল মতিন মাষ্টার ঃ বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও ক্রীড়া সংগঠক। ১৯৫০ সালের ৩০ জুলাই তৎকালীন মেহেরপুর মহকুমার করিমপুর থানার বিশোরপুর গ্রামে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। মেহেরপুর জেলা পর্যায়ে চারবার শ্রেষ্ঠ শিক্ষকের পুরস্কার অর্জন করেছেন। তিনি মেহেরপুর সরকারী বিএম সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক হিসেবে ১৯৬৬ সালে চাকুরিতে যোগদান করেন। এই বিদ্যালয় থেকেই চাকুরি থেকে অবসর নেন ২০০৭ সালে। ১৯৮৫, ১৯৮৭, ১৯৯৩ ও ১৯৯৮ সালে জেলার শ্রেষ্ঠ শিক্ষক নির্বাচিত ছাড়াও ১৯৮১ সালে গণশিক্ষায় জেলার শ্রেষ্ঠ শিক্ষক হিসেবে রাষ্ট্রপতি পদক পান। ১৯৭১ সালে ‘মুজিবনগর কর্মচারী’ ডিগ্রী লাভ করেন। তিনি স্থানীয় বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনের সাথে জড়িত রয়েছেন। এই অঞ্চলের খেলাধূলার মান উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে চলেছেন।
অধ্যক্ষ হামিদুল হক মুন্সী : বিশিষ্ট গবেষক, শিক্ষাবিদ ও কবি। চুয়াডাঙ্গা জেলার ইতিহাস গ্রন্থসহ মুক্তিযুদ্ধে চুয়াডাঙ্গা, চুয়াডাঙ্গা’৭১, একাত্তরের বিজয় গাঁথা, চুয়াডাঙ্গা গেজেট, নড়াইল পরিচিতি প্রভৃতি গ্রন্থের লেখক ও চুয়াডাঙ্গার ইতিহাস রচনার অন্যতম প্রধান পথিকৃৎ হামিদুল হক মুন্সী। ১৯৫৭ সালে ১৬ মার্চ আলমডাঙ্গা উপজেলার বাঁচামারী গ্রামে মাতুলালয়ে জন্ম গ্রহণ করেন। মরহুম হাজী লুৎফল হক মুন্সী তাঁর বাবা এবং হামিদা খাতুন মা। আলমডাঙ্গা উপজেলার গাংনী ইউনিয়নের মোচাইনগর গ্রামে আদি বাড়ি। বর্তমানে চুয়াডাঙ্গা শহরের হাসপাতালপাড়ায় বাড়ি করে বসবাস করছেন। আসমানখালী প্রাথমিক বিদ্যালয়, নতিপোতা হাই স্কুল, চুয়াডাঙ্গা একাডেমী, চুয়াডাঙ্গা কলেজ, যশোর এম এম কলেজ ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি পড়ালেখা করেন। ছাত্র জীবন থেকেই লেখালেখির সাথে যুক্ত তিনি। তিনি প্রায় এক যুগ “দৈনিক সংবাদ”-এর সাংবাদিক ছিলেন। চুয়াডাঙ্গা থেকে প্রকাশিত ‘দৈনিক মাথাভাঙ্গা’-এর তিনি প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক। চুয়াডাঙ্গা ইতিহাস পরিষদ, চুয়াডাঙ্গা সাহিত্য পরিষদ, মুক্তবাণী সাহিত্য ও সংস্কৃতি বাসর, চুয়াডাঙ্গা সাংবাদিক ইউনিয়ন -এর তিনি প্রতিষ্ঠাতা। বাংলা একাডেমী ও এশিয়াটিক সোসাইটির সাথে যুক্ত হামিদুল হক মুন্সী। চুয়াডাঙ্গা প্রেস ক্লাব, বাংলাদেশ সোভিয়েত মৈত্রী সমিতি, জেলা শিল্পকলা একাডেমীর সাবেক মূখ্য কর্মকর্তা। ১৯৮৩ সালে দর্শনা কলেজ এবং একই সালে চুয়াডাঙ্গা পৌর কলেজে বাংলা বিভাগে যোগ দেন। দীর্ঘদিন তিনি চুয়াডাঙ্গা পৌর কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ও ১৯৯০ সালে থেকে ২০০২ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নড়াইল আব্দুল হাই ডিগ্রী কলেজে অধ্যক্ষ হিসেবে কর্মরত ছিলেন। বর্তমানে সিরাজগঞ্জ জেলার উল্ল¬াপাড়া বিজ্ঞান কলেজে অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। পেশাগত নিষ্ঠা ও একাগ্রতার কারণে তিনি ইতিমধ্যে শ্রেষ্ঠ কলেজ শিক্ষক, শ্রেষ্ঠ অধ্যক্ষ, শ্রেষ্ঠ শিক্ষা সংগঠক, শ্রেষ্ঠ প্রশিক্ষণার্থী অধ্যক্ষ ও গুণী শিক্ষক হিসেবে একাধিকবার পুরস্কৃত হয়েছেন। শিক্ষা ক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের জন্য তিনি মধুসূদন পদক লাভ করেন। এ পর্যন্ত তাঁর ২০টি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া তিনি অর্ধশতাধিক সাময়িকী সম্পাদনা করেছেন।
এ অঞ্চলের ইতিহাস রচনা, শিক্ষা ও সাহিত্য ক্ষেত্রে অধ্যক্ষ হামিদুল হক মুন্সী নিবেদিতভাবে কাজ করে চলেছেন। তিনি বর্তমানে চাঁদপুরের হাজিগঞ্জস্থ নাসিরপোর্ট শহীদ স্মৃতি ডিগ্রী কলেজের অধ্যক্ষ হিসাবে কর্মরত রয়েছেন।
রফিকুর রশীদ : কথা সাহিত্যিক, গীতিকার, শিক্ষাবিদ। মেহেরপুর জেলার গাংনী থানার গাঁড়াডোব গ্রামে ১ জানুয়ারী ১৯৫৮ তিনি জন্ম গ্রহণ করেন। তিনি গাংনী মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে ১৯৭৩ সালে মাধ্যমিক, মেহেরপুর কলেজ থেকে ১৯৭৫ সালে উচ্চ মাধ্যমিক, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৭৯ সালে বাংলা ভাষা ও সাহিত্য স্নাতক (সম্মান) ও ১৯৮০ সালে স্নাতকোত্তর ডিগ্রী লাভ করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যায়ন অবস্থাতেই কথা সাহিত্য জগতে বিশেষ অংশ গ্রহণ এবং বিভিন্ন জাতীয় পত্রিকায় ছোটগল্প প্রকাশ করেন। বিশিষ্ট কথাশিল্পী ও গীতিকার হিসেবে তিনি বিশেষ খ্যাতি লাভ করেছেন। তার গল্প হৃদয়কে স্পর্শ করে। তিনি বাংলাদেশ বেতারের ‘ক’ শ্রেণীর একজন গীতিকার।
তার প্রকাশিত গ্রন্থ গুলো হচ্ছে গল্প (১) হলুদ দোয়েল (১৯৮৯) (২) মুক্তিযুদ্ধের গল্প (২০০০), (৩) অন্যযুদ্ধ (২০০৩), (৪) দিন যাপনের দায় (২০০৩), উপন্যাস (১) হৃদয়ের একুল ওকুল (১৯৯৬) (২) দাঁড়াবার সময় (১৯৯৯) (৩) পাপী পিয়া এবং পদ্মফুল (২০০৪) শিশু সাহিত্য (১) জন্মদিনের ছড়া (১৯৯৬), (২) যুদ্ধদিনের ছড়া (১৯৯৬), (৩) নূর হোসেন এক কাব্য লেখা (১৯৯৬), (৪) ভাষার লড়াই ছড়ায় ছড়াই (২০০৩), (৫) প্রভাতফেরি (গল্প গ্রন্থ ২০০২), (৬) মশা (গল্প গ্রন্থ ২০০৩), (৭) প্রজাপতি (গল্পগ্রন্থ ২০০৩), (৮) ইচ্ছে পুতুল (গল্পগ্রন্থ ২০০৪), (৯) নির্বাচিত কিশোর গল্প (২০০৪), (১০) চার গোয়েন্দার কান্ড (২০০৫), (১১) নজরুল জীবনের গল্প (২০০৫), (১২) ইতিহাস, (১) মেহেরপুর জেলার মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস। ১৯৮২ সালে সিলেটের এক চা বাগানে সহকারী ম্যানেজার হিসেবে তিনি কর্মজীবন শুরুকরেন। ১৯৮৩ সাল থেকে তিনি মেহেরপর জেলার গাংনী ডিগ্রী কলেজ বাংলা বিভাগে অধ্যাপনায় রত। তিনি গাংনীর মুক্তিযুদ্ধের শহীদস্মৃতি পাঠাগরের সভাপতি ও বাংলা একাডেমীর সদস্য। এলাকায় সাহিত্য-সাংস্কৃতিক আন্দোলনে বিশেষ ভূমিকা রেখে চলেছেন। পুরস্কার ও সম্মাননা ঃ ১ প্রভাত ফেরি গ্রন্থের জন্য এম নূরুল কাদের শিশু সাহিত্য পুরস্কার ২০০৩ লাভ। ২। সাতক্ষীরা সাহিত্য একাডেমী থেকে ‘সাতক্ষীরা সাহিত্য একাডেমী স্মরক ও সম্মাননা ২০০৪ লাভ। কথা সাহিত্যিক রফিকুর রশীদ দেশের প্রধান প্রধান পত্র-পত্রিকা ও ম্যাগাজিনে নিয়মিতভাবে গল্প ও উপন্যাস রচনা করে ও বেশ কিছু সংখ্যক গ্রন্থ প্রকাশ করে জাতীয় পর্যায়ের সাহিত্যের ধারায় তাঁর নামকে সমুজ্জ্বল করতে সক্ষম হয়েছেন।
ডা. আবদুস শহীদ : বিশিষ্ট চিকিৎসক ও সমাজসেবক। তিনি ১৯৫৫ সালের ১ মার্চ মেহেরপুরে জন্মগ্রহণ করেন। পিতার নাম মৃত নজিমুদ্দীন সরকার। তিনি মেহেরপুর হাইস্কুল থেকে ১৯৭০ সালে এস.এস.সি, মেহেরপুর কলেজ থেকে ১৯৭৩ সালে এইচ.এস.সি ও রাজশাহী মেডিকেল কলেজ থেকে ১৯৮০ সালে এম.বি.বি.এস ডিগ্রী অর্জন করেন। কর্মজীবনের শুরুতে রাজশাহীতে এবং পরে কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা ও ফবিদপুরের সদরপুর হাসপাতালে চিকিৎসক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। অবশেষে তিনি নিজ জেলায় আসেন। তিনি ২০১০ সাল থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত মেহেরপুরে সিভিল সার্জন হিসেবে কর্মরত ছিলেন। এই অঞ্চলের চিকিৎসা ও আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে চলেছেন।
সাংবাদিক সরদার আল আমীন : বিশিষ্ট সাংবাদিক, সমাজসেবক ও সংগঠক। তিনি চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর, কুষ্টিয়া ও ঝিনাইদহ অঞ্চলের একমাত্র অত্যন্ত জনপ্রিয় দৈনিক মাথাভাঙ্গা’র সম্পাদক ও প্রকাশক। তার সম্পাদনায় ও প্রকাশনায় এই পত্রিকাটি এ অঞ্চলের একমাত্র মুখপত্রে পরিণত হয়েছে। দৈনিক মাথাভাঙ্গা পত্রিকা প্রকাশনার ২৫ বছরে পদার্পণ করবে আগামী ১০ জুন ২০১৫। ১৯৭০ সালের ৪ জানুয়ারী চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার দৈলতদিয়াড় গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। তার পিতার নাম মোঃ ইদ্রিস আলী সরদার ও মাতার নাম শিরিন সরদার। অতি অল্প বয়সে তিনি সংবাদপত্র জগতে প্রবেশ করেন এবং মালিক (প্রকাশক) হিসাবে আত্মপ্রকাশ করেন। তিনি ভালবাসা প্রকাশনীর স্বত্ত্বাধিকারী। তিনি চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ও আমাদের গ্রন্থাগারের সভাপতি। তিনি যৌথভাবে ‘ভালবাসা গেছে এই পথে’ এবং ‘দেখা হলে বলতাম’ কাব্যগ্রন্থ প্রকাশ করেন। এছাড়াও তিনি বহু সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের সাথে যুক্ত আছেন। স্ত্রীর নাম লুনা শারমীন শশী। দু’সন্তান তাদের। বড় ছেলে সাদরিল আমীন শ্রেষ্ঠ, ছোট ছেলে শীর্ষ। তিনি সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমানস্থ পাক্ষিক জিরো পয়েন্ট এ্যাওয়ার্ড লাভ করেন। জিরো পয়েন্ট পত্রিকার সম্পাদক সেখ আনসার আলী সম্প্রতি বর্ধমান থেকে চুয়াডাঙ্গার প্রেস কাবে এসে আনুষ্ঠানিকভাবে দৈনিক মাথাভাঙ্গা পত্রিকার সম্পাদক সরদার আল আমিনের হাতে এ্যাওয়ার্ড স্মারক তুলে দেন। অনুষ্ঠানে জিরো পয়েন্ট সম্পাদক বলেন, এ অ্যাওয়ার্ড সৎ, সাহসী ও গণমানুষের প্রতিনিধিত্বশীল দায়িত্ব পালনে ভূমিকা রাখায় কৃতিত্ব হিসেবে সরদার আল আমিনকে প্রদানের জন্য মনোনীত করা হয়। দেশের পশ্চিমাঞ্চলের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে সরদার আল-আমিন সম্পাদিত দৈনিক মাথাভাঙ্গা অত্যন্ত গুরু ত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছে।
আব্দুর রহমানঃ বিশিষ্ট ক্রীড়া সংগঠক ও ফুটবল খেলোয়াড়। তিনি ১৯৪৮ সালের ৩১ ডিসেম্বরে মেহেরপুরে জন্মগ্রহণ করেন। পিতার নাম মৃত বিনারত মন্ডল। তিনি মেহেরপুর হাইস্কুল থেকে ১৯৬৪ সালে এস.এস.সি, মেহেরপুর কলেজ থেকে ১৯৬৭ সালে এইচ.এস.সি. ও ১৯৭৩ সালে বি.এ পাশ করেন। তিনি ফুটবল খেলোয়াড় হিসেবে ব্যাপক খ্যাতি অর্জন করেন। তিনি প্রগতি পরিমেলের অন্যতম প্রধান ফুটবল খেলোয়াড় হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। প্রগতির পাশাপাশি তিনি উল্কা, টাইগারসহ জেলা ও বিভাগীয় দলে চমৎকার ফুটবল খেলা উপহার দিয়েছেন এক সময়। তিনি মেহেরপুর সরকারী বিএম প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ক্রীড়া শিক্ষক হিসেবে ১৯৬৮ সাল থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত কর্মরত ছিলেন। বর্তমানে রেফারী ও ক্রীড়া সংগঠক হিসেবে এই অঞ্চলের খেলাধূলার মান উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে চলেছেন।