পৌরসভা ও ইউপি নির্বাচনের প্রাথমিক প্রস্তুতিতে ইসি

স্টাফ রিপোর্টার: সারাদেশের পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের প্রাথমিক প্রস্তুতি শুরু করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। চলতি বছরের অক্টোবর থেকে আগামী জানুয়ারি মাসের মধ্যে প্রায় পৌনে তিনশ পৌরসভা এবং নভেম্বর থেকে জুলাইয়ের মধ্যে সাড়ে চার হাজারের বেশি ইউনিয়ন পরিষদে নির্বাচনের পরিকল্পনা রয়েছে কমিশনের। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সম্মতি পাওয়ার পরই এসব নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক আয়োজন শুরু করবে কমিশন। এর জন্য আগামী বাজেটে প্রায় ৭০০ কোটি টাকা বরাদ্দ চেয়েছে ইসি। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে নির্বাচন কমিশনার মোহাম্মদ আবু হাফিজ মঙ্গলবার বলেন, আইন অনুযায়ী এসব নির্বাচন নির্ধারিত সময়ে সম্পন্ন করা হবে। তবে নির্বাচনের এখনও অনেক সময় বাকি থাকায় বিষয়টি নিয়ে এখনও কমিশনে আলোচনা হয়নি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের সম্ভাব্য প্রার্থীরাও নানাভাবে প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তৃণমূল পর্যায়ের নানা উন্নয়ন কর্মকাণ্ড, বিভিন্ন দিবস উপলক্ষে জনসংযোগ, দলীয় ও স্থানীয় সভা-সমাবেশ এবং সামাজিক কর্মকাণ্ডে অংশ নিচ্ছেন তারা। পাশাপাশি দলীয় সমর্থন পেতে আগেভাগেই স্থানীয় সংসদ সদস্য ও সিনিয়র নেতাদের আস্থাভাজন হওয়ার চেষ্টাও চালিয়ে যাচ্ছেন।

ইসির কর্মকর্তারা জানান, ২০১১ সালের ১২ জানুয়ারি থেকে ১৮ জানুয়ারি পর্যন্ত চার ধাপে ২৬৯টি পৌরসভার নির্বাচন হয়েছিল। ওইসব পৌরসভার মেয়াদ আগামী জানুয়ারিতে শেষ হচ্ছে। স্থানীয় সরকার (পৌরসভা) আইন, ২০০৯-এর ২০ ধারা অনুসারে পৌরসভার মেয়াদ শেষ হওয়ার আগের ৯০ দিন অর্থাৎ তিন মাসের মধ্যে নির্বাচনের বিধান রয়েছে। এ হিসাবে আগামী অক্টোবর থেকে জানুয়ারির মধ্যে এ নির্বাচন করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। একই ভাবে ২০১১ সালের ২৯ মার্চ থেকে ৫ জুলাই পর্যন্ত দু ধাপে প্রায় সাড়ে চার হাজার ইউনিয়ন পরিষদে নির্বাচন হয়। স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) আইন, ২০০৯-এর ২৯ ধারা অনুযায়ী পূর্ববর্তী ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের পাঁচ বছর পূর্ণ হওয়ার আগের ১৮০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করার বিধান রয়েছে। এ হিসাবে আগামী নভেম্বর থেকে জুলাইয়ের মধ্যে নির্বাচনের বাধ্যবাধকতা রয়েছে।

ইসির সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, নির্বাচনের প্রাথমিক কাজ শুরু করেছেন কমিশন সচিবালয় ও মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা। নির্বাচনের উপযোগী পৌরসভার তালিকা চেয়ে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের কাছে চিঠি পাঠিয়েছে কমিশন সচিবালয়। তবে ওই চিঠির কোনো জবাব না পাওয়ায় আবারও তাগিদপত্র দেয়ার চিন্তাভাবনা করছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। মাঠ পর্যায়ের একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, দশম জাতীয় সংসদ ও উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভোট কেন্দ্র নির্ধারণসহ আনুষঙ্গিক প্রস্তুতি নেয়া হয়। ওইসব প্রস্তুতি থাকায় পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের কাজ অনেক এগিয়ে রয়েছে। সূত্র আরও জানায়, ইউনিয়ন পরিষদ ও পৌরসভা নির্বাচনের সময়সীমা কাছাকাছি হওয়ায় কোনটি আগে হবে তা কমিশনের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করছে। কর্মকর্তাদের মতে, ইউনিয়ন পরিষদের তুলনায় পৌরসভার মেয়াদ আগে শেষ হচ্ছে। বিধান অনুযায়ী, পৌরসভা নির্বাচন আয়োজনে তিন মাস সময় পাওয়া যায়। এছাড়া ইউনিয়ন পরিষদের তুলনায় পৌরসভার সংখ্যা ও নির্বাচনী এলাকা অনেক ছোট। সর্বশেষ অনুষ্ঠিত ২৬৯টি পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র, কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর মিলিয়ে ৩ হাজার ৬৭৮ পদে নির্বাচন হয়। ওই নির্বাচনে মোট ভোটার ছিলেন ৭৫ লাখ ৬০ হাজার ১০১ জন। অপরদিকে ইউনিয়ন পরিষদে প্রার্থী ও ভোটার সংখ্যা অনেকগুণ বেশি। এসব বিবেচনায় ইউনিয়ন পরিষদের আগেই পৌরসভা নির্বাচন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কমিশনের হিসাব অনুযায়ী, ২০১১ সালের ২৯ মার্চ থেকে ২০১২ সালের ২৩ অক্টোবর পর্যন্ত ৪ হাজার ৪৩৯টি ইউনিয়ন পরিষদে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে।

এদিকে ইউনিয়ন ও পৌরসভা নির্বাচন পরিচালনার ব্যয় হিসাবে আগামী বাজেটে প্রায় ৭০০ কোটি টাকা বরাদ্দ চেয়েছে ইসি। এ অর্থের বেশিরভাগই আইনশৃঙ্খলা খাতে সম্ভাব্য ব্যয় হিসেবে দেখানো হয়েছে। দু নির্বাচন পরিচালনায় ৩৪৩ কোটি টাকা এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষা খাতে ৩৫৭ কোটি টাকা ধরা হয়েছে। নির্বাচনে ৭০০ কোটি টাকা ব্যয়ের যৌক্তিকতা নিয়ে কমিশন সচিবালয় ও অর্থ মন্ত্রণালয়ে একাধিক বৈঠক হয়েছে। চূড়ান্ত হিসেবে চাহিদার তুলনায় বরাদ্দ কম হতে পারে বলে ধারণা করছেন ইসির কর্মকর্তারা।

৫৭ ইউনিয়ন পরিষদে উপনির্বাচন ১৪ জুন: ৫৭টি ইউনিয়ন পরিষদের বিভিন্ন পদে ১৪ জুন উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। বিভিন্ন কারণে পদশূন্য হওয়া এসব ইউনিয়ন পরিষেদে উপনির্বাচনের জন্য বুধবার জেলা ও উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তাদের নির্দেশনা পাঠিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।

ইসির নির্দেশনায় ৫৭টি ইউনিয়নের মধ্যে ৫টি চেয়ারম্যান পদে, ৪৭টি সাধারণ সদস্য পদে এবং বাকি ৫টিতে সংরক্ষিত নারী পদে ভোটগ্রহণের জন্য বলা হয়েছে। রাজনৈতিক মামলা থাকায় গ্রেফতার ভয়ে পরিষদে ধারাবাহিক অনুপস্থিত, অনিয়ম এবং মৃত্যুজনিত কারণে এসব পদশূন্য হয়েছে বলে জানা গেছে। যে ৫টি ইউনিয়ন পরিষদে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন হবে সেগুলো হচ্ছে- সিরাজগঞ্জের দুর্গানগর, ফুলবাড়িয়ার কালাদহ, লৌহজংয়ের হলদিয়া, নাঙ্গলকোটের দৌলখাঁড় এবং গোলাপগঞ্জের ফুলবাড়ি। সংরক্ষিত নারী পদে নির্বাচন হবে এমন পাঁচটি ইউপি হচ্ছে- মতলব দক্ষিণের উপাদী, উত্তরের ১ নং ওয়ার্ড, নবীনগরের নাটঘর ইউপির ২ নং ওয়ার্ড, মোড়েলগঞ্জের হোগলাপাশার ২ নং ওয়ার্ড, আগৈলঝাড়ার রত্নপুরের ১ নং ওয়ার্ড এবং পলাশ উপজেলার জিনারদী ইউনিয়নের ২ নং ওয়ার্ড। বাকি ৪৭টি সাধারণ ওয়ার্ডে ভোটগ্রহণ হবে।