প্রধানমন্ত্রীর কাছে তসলিমার খোলা চিঠি

স্টাফ রিপোর্টার: গত তিন মাসে বাংলাদেশে তিনজন ব্লগার খুন হয়েছেন। সর্বশেষ গত মঙ্গলবার সিলেটে অনন্ত বিজয় দাসকে কুপিয়ে খুন করে দুর্বৃত্তরা। ব্লগার খুন নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে খোলা চিঠি লিখেছেন ভারতে অবস্থানকারী বাংলাদেশের বিতর্কিত লেখিকা তসলিমা নাসরিন। তিনি বুধবার ফেসবুক পেজে একটি স্ট্যাটাস পোস্ট করেন। পোস্টটি হুবহু তুলে দেয়া হলো।

মাননীয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, দেশের প্রতিটি ব্লগার, ইসলামী সন্ত্রাসীরা যাদের মেরে ফেলার হুমকি দিয়েছে, তাদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করুন। তাছাড়াও অনেক লেখক ব্লগার ফেসবুকার যারা অত্যন্ত সাহসী, ধর্ম এবং কুসংস্কারের বিরুদ্ধে নিরলস লড়ে যাচ্ছেন, তাদেরও নিরাপত্তার ব্যবস্থা করুন। তাদের সাথে ২৪/৭ জন সশস্ত্র নিরাপত্তারক্ষী থাকে। ঠিক আপনার যেমন থাকে। আপনার জীবনের যেমন মূল্য আছে, ওদের জীবনেরও মূল্য আছে। আপনার জীবনের চেয়ে ওদের জীবনের মূল্য আসলে অনেক বেশি। ওরা মানুষ হিসেবে আপনার চেয়ে অনেক উন্নত মানের। আপনার মতো ওরা ইসলামী মৌলবাদীদের সাথে আপস করছে না, ওরা দেশজুড়ে মসজিদ মাদরাসা নামের সন্ত্রাসী তৈরির কারখানা নির্মাণ করছে না। দেশটার বারোটা বাজাচ্ছে না। বরং জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে অশিক্ষিতদের শিক্ষিত করতে চাইছে। বিজ্ঞান শিক্ষা, মানবতার শিক্ষা, বৈষম্যহীন সমাজ গড়ার শিক্ষা- এগুলোই দেশকে বাঁচাবে, যদি আদৌ বাঁচায়।

আপনি যা করছেন তা ভোটের ঘৃণ্য রাজনীতি। ছলে-বলে কৌশলে গদিতে বসার রাজনীতি। একটি বিবৃতি পর্যন্ত দেননি এ ব্লগারদের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে। ইতিহাস লিখে রাখছে আপনার এই কীর্তকলাপ। সামান্য মনুষ্যত্ব বলে যদি কিছু থাকে আপনার, মুক্তচিন্তক ব্লগার আর ফেসবুকারদের বাকস্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করবেন না। এবং আজ থেকেই, হ্যাঁ আজ থেকেই, প্রত্যেকের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করবেন। যে সন্ত্রাসীদের আজ বন্ধু বলে ভাবছেন, সেই সন্ত্রাসীরাই সুযোগ পেলে আপনাকে হয়তো একদিন কুপিয়ে খুন করবে, যেভাবে করছে ব্লগারদের। নিজে নিরাপত্তা নিয়ে একা একা বাঁচার চেষ্টা করবেন না। সবাইকে নিয়ে বাঁচুন।

গণতন্ত্রের চর্চা অন্তত জীবনে একবার হলেও করুন। আবারও বলছি, মনে রাখবেন, আপনার জীবনের চেয়েও মূল্যবান ওই ব্লগারদের জীবন, যারা আপনার চেয়েও বেশি শিক্ষিত, বেশি জ্ঞানী, বেশি মানববাদী, যারা গণতন্ত্রে, সমতায়, সমানাধিকারে, আপনার চেয়েও বেশি বিশ্বাস করে। সন্ত্রাসী-খুনিদের গ্রেফতার করা আর বিচারের ব্যবস্থা করার ভার কিন্তু আপনার ওপর। গোটা জগত দেখছে আপনি কী করছেন। যা করা উচিত সেটা করুন। যা করলে ক্ষমতায় বসে অনন্তকাল আরাম করতে পারবেন, তা নয়। অনন্তকাল আপনি বাঁচবেন না। জীবন খুব ছোট। এ জীবনে এখনও সময় আছে, কিছু ভালো কাজ করে দেখান যে আপনি ভালো কাজ করতে জানেন, নিঃস্বার্থ হতে জানেন।