স্টাফ রিপোর্টার: অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ তুলে নতুন করে আরও ৮টি প্রকল্প থেকে অর্থ প্রত্যাহার করে নিচ্ছে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় উন্নয়ন সহযোগী বিশ্বব্যাংক। সম্প্রতি সংস্থাটির ঢাকা মিশনের প্রধান ইউহানেস জাট অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগকে (ইআরডি) চিঠি দিয়ে এ সিদ্ধান্তের কথা জানান।
আগামী ৩০ জুনের মধ্যে প্রকল্পগুলোতে উল্লিখিত দুর্নীতির অংশের টাকা তাদের অ্যাকাউন্টে জমা দেয়ার সময়সীমাও বেঁধে দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। বিষয়টি নিয়ে বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছে ইআরডি। এ অবস্থায় তারা ওই ৮ প্রকল্প সম্পর্কে খোঁজখবর নিয়ে বিশ্বব্যাংকের অভিযোগের পাল্টা জবাব দিতে যাচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিশ্বব্যাংক যে অভিযোগ তুলে অর্থ ফেরত চেয়েছে তা পুরোপুরি সঠিক নয়। ইআরডির জবাবে এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরা হবে।
বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিস ও ইআরডি সূত্রে জানা গেছে, ৮ প্রকল্পের প্রায় ৩০ লাখ ডলার প্রত্যাহার করার কথা বলা হয়েছে। বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ ২৪ কোটি টাকা (১ ডলার ৮০ টাকা হিসাবে)। এসব প্রকল্পে যে পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করা হয়েছিলো, তার মধ্যে শুধু অনিয়ম ও দুর্নীতির অংশের অর্থ ফেরত চাওয়া হয়েছে। এর আগে গত ৩০ মার্চ ডিজঅ্যাবিলিটি অ্যান্ড চিলড্রেন অ্যাট রিস্ক প্রকল্প থেকে ৪৪ কোটি টাকা প্রত্যাহার করে বিশ্বব্যাংক।
এ প্রসঙ্গে বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত কান্ট্রি ডিরেক্টর ক্রিস্টিন ই কিমস বলেন, কোনো প্রকল্পে অর্থায়নের ক্ষেত্রে বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার বিষয়টিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া হয়। অর্থ ব্যয়ের ক্ষেত্রে কোথাও কোনো অনিয়ম বা দুর্নীতি হলে সরকারকে এ বিষয়ে তদন্তসাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ করে বিশ্বব্যাংক। তিনি আরও বলেন, ৮ প্রকল্পের ক্ষেত্রে যে পরিমাণ অর্থ নিয়ে অভিযোগ করে তা ফেরত চাওয়া হয়েছে তা বিশ্বব্যাংকের মোট বিনিয়োগের তুলনায় সামান্য। যা শতাংশের হিসাবে ১ শতাংশও হবে না।
ইআরডি সূত্রে জানা গেছে, গত ৩০ মার্চ বিশ্বব্যাংক ডিজঅ্যাবিলিটি অ্যান্ড চিলড্রেন অ্যাট রিস্ক প্রকল্পের ঋণ থেকে ৪৪ কোটি টাকা বাতিল করে। গত দু বছরে প্রকল্পটি থেকে আরও ৭০ কোটি টাকা বাতিল করা হয়। সম্প্রতি বিশ্বব্যাংক যে ৮ প্রকল্পের অর্থ বাতিল করেছে তা ফেরত দেয়ার বিষয়ে যাচাই-বাছাই করছে ইআরডি। প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে: উচ্চশিক্ষায় গুণগতমান বৃদ্ধি প্রকল্প, বাংলাদেশ ন্যাশনাল অ্যাগ্রিকালচারাল টেকনোলজি প্রজেক্ট (এনএটিপি), ঝরে পড়া শিশুদের পুনর্বাসন প্রকল্প-২ (রস্ক), সেকেন্ড রুরাল ট্রান্সপোর্ট ইমপ্রুভমেন্ট প্রকল্প (আরটিআইপি-২), স্ট্রেনদেনিং রিজিওনাল কো-অপারেশন ফর ওয়াইল্ড লাইফ প্রটেকশন ইন এশিয়া প্রকল্প, এমপ্লয়মেন্ট জেনারেশন প্রোগ্রাম ফর পুওরেস্ট প্রকল্প, স্কিলস অ্যান্ড ট্রেনিং এনহেন্সমেন্ট প্রকল্প ও ক্লিন এয়ার সাসটেইনেবল এনভায়রনমেন্ট প্রকল্প।
এ প্রসঙ্গে ইআরডির একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, প্রকল্পে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগের বিষয়টি নিয়ে বিশ্বব্যাংককে জবাব দেয়া হবে। সংস্থাটির অভিযোগ কয়েকটি প্রকল্পের ক্ষেত্রে পুরোপুরি ঠিক। এ জন্য এ পর্যন্ত শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতের দু প্রকল্পের অর্থ ফেরত পাঠানো হয়েছে। তবে কয়েকটি প্রকল্পের বিষয়ে এ অভিযোগ ঠিক নয়। যার বিস্তারিত তথ্য চিঠির মাধ্যমে বিশ্বব্যাংককে অবহিত করা হবে বলে তিনি জানান।
জানা গেছে, বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে চলমান ৩৩টির মধ্যে এ পর্যন্ত ১৪টি প্রকল্পের ঋণের আংশিক অর্থ প্রত্যাহার করলো বিশ্বব্যাংক। আরও কয়েকটি প্রকল্পের অর্থ বাতিল হওয়ার পথে বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। উল্লেখ্য, ২০১১ সালের ২৯ জুন দুর্নীতির অভিযোগে বহুল আলোচিত পদ্মা সেতু প্রকল্পে অর্থায়ন বাতিল করে বিশ্বব্যাংক।
বিশ্বব্যাংক সূত্র অনুসারে, ১৯৭২ সাল থেকে এ পর্যন্ত বাংলাদেশকে ১ হাজার ৯০০ কোটি ডলার সহায়তা দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে এ দাতা সংস্থাটি। বর্তমানে বাংলাদেশের ৩৩টি উন্নয়ন প্রকল্পে তাদের ৭৫০ কোটি ডলারের অর্থায়ন রয়েছে।