শান্তিময় পৃথিবীর কামনায় বুদ্ধ পূর্ণিমা পালিত

স্টাফ রিপোর্টার: বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস, গৌতম বুদ্ধ বিশ্বের মানুষের দুঃখ-বেদনাকে নিজের দুঃখ বলে মনে করেছেন। ব্যক্তি কোনো বিষয় নয়, সামষ্টিক শান্তিই প্রকৃত শান্তি। এই বিশ্বাস তিনি ছড়িয়ে দিতে চেয়েছেন মানুষের মাঝে- গৌতম বুদ্ধের সেই ভালোবাসার বোধকে ধারণ করে শুভ বুদ্ধ পূর্ণিমায় বৌদ্ধধর্মাবলম্বীরা মন্দিরে মন্দিরে বুদ্ধের বন্দনায় রত হয়ে মানুষের মুক্তির জন্য প্রার্থনা করলেন। একইসঙ্গে ভক্ত অনুরাগীরা প্রতিটি মন্দিরে প্রদীপ জ্বালিয়ে সহিংসতা, ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গীবাদমুক্ত রাজনীতি এবং সবার জন্য শান্তিময় পৃথিবী প্রতিষ্ঠার জন্য আরাধনা করেন।

নানা কর্মসূচির মাধ্যমে তাদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব উদযাপন করেছে। দেশের বিভিন্ন বিহারে সকালে মঙ্গল প্রদীপ জ্বালিয়ে অনুষ্ঠানের শুভ সূচনা করা হয়। পরে বুদ্ধ পূজা, মহাসংঘদান, মহা অষ্টপরিস্কারদানসহ বিভিন্ন ধর্মীয় কার্যাদি সম্পন্ন হয়। এরমধ্যে জগতের সব প্রাণীর সুখ-শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করে অনুষ্ঠিত হয় বিশেষ প্রার্থনা।

মানব জীবনের দুঃখ গৌতম বুদ্ধকে প্রবলভাবে নাড়া দেয়। তিনি সম্পদ, ঐশ্বর্য এবং সংসার জীবনের প্রতি বীতশ্রদ্ধ হয়ে পড়েন। জন্ম, জরা, ব্যাধি ও মৃত্যু- এ চারটির কারণ উদঘাটন এবং মানুষের শান্তি ও মুক্তির সন্ধানে বেরিয়ে পড়েন। এক সময় রাজপ্রাসাদের সুখ এবং স্বজনের মায়া ত্যাগ করে সিদ্ধি লাভের পন্থা অন্বেষণে তিনি বেরিয়ে পড়েন অজানার পথে। দীর্ঘ ৬ বছর সাধনার পর গৌতম বুদ্ধ বোধিপ্রাপ্ত হন। ২ হাজার ৫৫৮ বছর পূর্বে এই দিনে মহামতি গৌতম বুদ্ধ আবির্ভূত হয়েছিলেন। তাঁর জন্ম, বোধিলাভ ও মহাপ্রয়াণ বৈশাখী পূর্ণিমার দিনে হয়েছিল বলে এর অপর নাম দেয়া হয় বুদ্ধ পূর্ণিমা।

সবুজবাগ ধর্মরাজী বৌদ্ধবিহার থেকে গতকাল সকাল সাড়ে সাতটায় এক বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের করা হয়। শোভাযাত্রাটি অতীশ দীপঙ্কর সড়ক ধরে মুগদা আইডিয়াল স্কুল প্রাঙ্গণ হয়ে আবার বৌদ্ধবিহারে এসে শেষ হয়। সকাল ৯টায় অনুষ্ঠিত হয় স্বধর্মসভা। এতে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন প্রধান অতিথি ছিলেন। তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন। সাবেক মন্ত্রী দিলীপ বড়ুয়া ছিলেন বিশেষ অতিথি।

বিকাল ৫টায় সবুজবাগ বৌদ্ধবিহার মিলনায়তনে বৌদ্ধ ধর্ম ও বিশ্ব শান্তি শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে সাবের হোসেন চৌধুরী এমপি প্রধান অতিথি ছিলেন। নটরডেম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ফাদার বেঞ্জামিন ডি কস্তা ছিলেন বিশেষ অতিথি।

বিপুল উত্সাহ উদ্দীপনা ও উত্সব মুখর পরিবেশে খাগড়াছড়িতে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের অন্যতম ধর্মীয় উত্সব বুদ্ধ পূর্ণিমা উদযাপিত হয়েছে। এ উপলক্ষে রবিবার সকালে মহাজন পাড়া এলাকা থেকে বিশ্ব শান্তি ও মঙ্গল কামনায় একটি শোভাযাত্রা বের করা হয়। পার্বত্য ভিক্ষু সংঘ ও বৌদ্ধ মৈত্রী কল্যাণ সংঘের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত শোভাযাত্রাটি মিলনপুর মৈত্রী বৌদ্ধ বিহারে গিয়ে শেষ হয়। এতে নানা বয়সের হাজারো মানুষ অংশ নেন। শোভাযাত্রায় উপস্থিত ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম শরনার্থী বিষয়ক টাস্কফোর্স চেয়ারম্যান যতিন্দ্র লাল ত্রিপুরা, সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান চঞ্চুমণি চাকমা প্রমুখ।