আজ মহান মে দিবস

 

স্টাফ রিপোর্টার: আজ পয়লা মে; মহান মে দিবস। শ্রমজীবী মানুষের অধিকার আদায়ের দিন। শ্রমিক-‘মালিক ঐক্য গড়ি, সোনার বাংলা গড়ে তুলি’ এ প্রতিপাদ্য নিয়ে রাষ্ট্রীয়ভাবে পালিত হবে মে দিবস। এ উপলক্ষে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় ব্যাপক কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। রাষ্ট্রপতি তার বাণীতে বলেছেন, বর্তমান সরকার শ্রমিকদের কল্যাণে ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ, নিরাপদ কর্মপরিবেশসহ বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ করে যাচ্ছে। অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বাণীতে মে দিবসের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে শ্রমিক এবং মালিক পরস্পর সুসম্পর্ক বজায় রাখার মাধ্যমে কল-কারখানার উত্পাদন বৃদ্ধিতে আরও নিবেদিত হবেন বলে প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন।

দিবসটি উপলক্ষে জাতীয় পার্টি-জেপির চেয়ারম্যান পরিবেশ বনমন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু এবং দলের মহাসচিব শেখ শহিদুল ইসলাম এক বিবৃতিতে মেহনতি মানুষের কাজের পরিবেশ উন্নত করা, ন্যায্য মজুরি প্রদান ও নিরাপত্তা বিধানের জোর দাবি জানিয়েছেন।

দিবসটি উদযাপন উপলক্ষে শ্রমভবন, বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র ও রাজধানীর বিভিন্ন সড়ক দ্বীপ ব্যানার, ফেস্টুন ও প্ল্যাকার্ড দ্বারা সজ্জিত করা হয়েছে। মে দিবসের কর্মসূচি উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও দিবসটি যথাযথ মর্যাদায় পালিত হবে। আন্তর্জাতিকভাবে দিবসটি শ্রমজীবী মানুষের সংহতি জানানোর দিন। বিশ্বের মেহনতি মানুষের আন্দোলন আর অধিকার আদায়ের রক্তাক্ত স্মৃতিবিজড়িত আজকের এ দিন।

প্রেক্ষাপট: ১৮৮৬ সালের এই দিনে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরে শ্রমজীবী মানুষ সব শিল্পাঞ্চলে আট ঘণ্টা কাজের সময় নির্ধারণের দাবিতে ধর্মঘটের ডাক দেন। শহরের হে মার্কেট হয়ে ওঠে তাদের বিক্ষোভ স্থল। শহরের তিন লাখেরও বেশি শ্রমিক কাজ বন্ধ রেখে আন্দোলনে শরিক হন। বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা লাল ঝাণ্ডা হাতে নেমে আসেন রাজপথে। এ সময় শ্রমিকদের ওপর নির্বিচারে গুলি চালায় পুলিশ। প্রাণ হারান ১০ শ্রমিক। রক্ত ঝরার পরেও শ্রমিকদের অধিকার আদায়ের আন্দোলন যেন আরো তীব্র হয়ে ওঠে। অব্যাহত থাকে ধর্মঘট। ৩ মে শ্রমিক সভায় পুলিশের নির্বিচার গুলিতে প্রাণ হারায় আরো ছয় শ্রমিক।

শ্রমিক হত্যার প্রতিবাদে ৪ মে শিকাগোর হে মার্কেট স্কয়ারে ঐতিহাসিক শ্রমিক সমাবেশে আবারও বর্বরোচিত হামলা চালায় পুলিশ। এতে প্রাণ হারান আরো চার শ্রমিক। পরে ৬ অক্টোবর মিথ্যা মামলায় অভিযুক্ত চার শ্রমিক নেতাকে ফাঁসি দেয়া হয়। এতে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে সারাবিশ্বে। গড়ে ওঠে শ্রমিক-জনতার বৃহত্তর ঐক্য। অবশেষে দৈনিক আট ঘণ্টা কাজের দাবি মেনে নিতে বাধ্য হয় যুক্তরাষ্ট্র সরকার। সেদিন মালিকরা মেনে নিয়েছিলেন, শ্রমিকরাও মানুষ। পরে ১৮৮৯ সালের ১৪ জুলাই প্যারিসে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক শ্রমিক সম্মেলনে শিকাগোর রক্তঝরা অর্জনকে স্বীকৃতি দিয়ে ওই ঘটনার স্মারক হিসেবে পয়লা মে দিনটিকে ঘোষণা দেয়া হয় আন্তর্জাতিক শ্রমিক সংহতি দিবস হিসেবে। এ সিদ্ধান্তের পরিপেক্ষিতে ১৮৯০ সাল থেকে প্রতিবছর বিভিন্ন দেশে এ দিনটি মে দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে।