ফাটল দেখে চোখ ফেরানোর চেয়ে ব্যবস্থা নেয়াই ভালো

 

হতে পারে ওটা পুরোনো, নয়তো টাটকা। যেটাই হোক, ভূমিকম্পের পর যখন চোখে পড়েছে দেয়াল-ছাদে চিড় বা ফাটল তখন হালকাভাবে দেখা উচিত হবে না। বিশেষ করে বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষের ফাটল কতোটা ঝুঁকিপূর্ণ তা পর্যাপ্ত পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেই সেখানে শিক্ষার্থীদের বসার ব্যবস্থা করা দরকার।

শনিবার ভূমিকম্পে বাংলাদেশ, ভারতসহ পড়শি পাঁচটি দেশ কেঁপেছে। নেপালে গতকাল পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, নিহতদের সংখ্যা প্রায় ৪ হাজার। কাঁদছে নেপাল। শনিবারের ভূমিকম্পের পর নেপালে বহুবার কম্পন অনুভূত হয়েছে। রোববারও ভূমিকম্প হয়। রোববারের ভূমিকম্পের পর চুয়াডাঙ্গা ভি.জে সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ভবনে ফাটল চোখে পড়ে। সদর থানার সামনের একটি ভবনেও ফাটল পথচারীদের দৃষ্টিগোচর হলে আতঙ্ক ছড়ায়।

শুধু চুয়াডাঙ্গার একটি বিদ্যালয়ের ভবনই নয়, দেশের বিভিন্ন স্থানেই ভূমিকম্পের পর ভবনে ফাটল দেখা দিয়েছে। রাজধানীসহ বড় বড় শহরের কিছু অট্টালিকাও হেলে পড়ার খবর পাওয়া গেছে। সঙ্গত কারণেই চিড় ধরা বা ফাটল দেখা দেয়া ভবনগুলো কতোটা ব্যবহার উপযোগী তা পরীক্ষা-নিরীক্ষার দাবি রাখে। বিশেষ করে বিদ্যালয় ভবনের ফাটলকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়া খুবই জরুরি। কেননা, সরকারি ভবন নির্মাণে নিযুক্ত ঠিকাদার কতোটুকু নিয়ম মেনে নির্মাণ করেছে তা দেশের বাস্তবতার আলোকে যথেষ্ট সন্দেহের কারণ রয়েছে। একই সাথে শাদা চোখে ফাটল দেখে আতঙ্কগ্রস্ত হওয়ারও কোনো কারণ নেই। প্রকৌশলীদের মাধ্যমে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেই পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া দরকার। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবনগুলোর দশা দেখলে তার দৃষ্টান্ত মেলে।

নেপালের ভূমিকম্প বাংলাদেশেও মানুষের মধ্যে ব্যাপক ভূমিকম্প ভীতির সঞ্চার করেছে। স্বাভাবিক। ভীতি কোনো সমাধান নয়, সমাধান দেয় না। ভূমিকম্প প্রতিরোধ করার মতো প্রযুক্তি দুরস্ত, পূর্বাভাস দেয়ার মতো প্রযুক্তিও মানুষ আবিষ্কার করতে পারেনি। ফলে ভূমিকম্পের ক্ষয়ক্ষতি থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য প্রয়োজন দীর্ঘ প্রস্তুতির। আর তা থাকতে হয় যেমন ব্যক্তি পর্যায়ে, তেমনি রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে। ব্যক্তি পর্যায়ে রয়েছে বাসস্থানগুলোকে ভূমিকম্প প্রতিরোধী উপায়ে নির্মাণ করা, প্রয়োজনে দ্রুত নিরাপদ স্থানে সরে যাওয়ার মতো ব্যবস্থা রাখা, বাড়িতে যানবাহন বা উদ্ধারকারী যন্ত্রপাতি প্রবেশের মতো রাস্তার ব্যবস্থা রাখা, ক্ষয়ক্ষতি থেকে রক্ষা পাওয়ার কৌশলগুলো জানা ইত্যাদি।

রাষ্ট্রীয় প্রস্তুতির মধ্যে থাকা দরকার কেউ যাতে দুর্বল স্থাপনা তৈরি করতে না পারে। এ জন্য বিধানও আছে। অবাক হলেও সত্য যে, সরকার শক্ত স্থাপনা নির্মাণের লক্ষ্যে পর্যাপ্ত ব্যয় করলেও বাস্তবে যে স্থাপনা নির্মাণ করা হয় তা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ঝুঁকির কারণ। ফাটল দেখে চোখ ফেরানোর চেয়ে ব্যবস্থা নেয়াই ভালো।