এহসান ইসলামী মাল্টিপারপাসের প্যানেল এমডি রাজারহাটের ইউনুসকে ধরে পুলিশে দিয়েছে জনতা

স্টাফ রিপোর্টার: কয়েক হাজার গ্রাহক ও লগ্নিকারীকে পথে বসিয়ে দু হাজার কোটি টাকা নিয়ে লাপাত্তা হওয়া এহসান ইসলামী মাল্টিপারপাসের প্যানেল এমডি রাজারহাটের মুফতি ইউনুস আহমেদকে পাকড়াও করেছে জনতা। রাজারহাট রামনগরের জামিয়া ইসলামিয়া হাফেজিয়া মাদরাসার সামনে থেকে তাকে পাকড়াও করে পুলিশে দেয়া হয়। আটকের সময় নিজেকে নির্দোষ দাবি করে সাংবাদিক ও পুলিশের কাছে বানোয়াট তথ্য দিয়ে  সটকে পড়ার চেষ্টা করে মুফতি ইউনুস। তবে থানায় দুটি নিয়মিত মামলা থাকায় সে সুযোগ হয়নি তার।

মোটা অঙ্কের লাভের প্রলোভন দেখিয়ে গত কয়েক বছরে এ অঞ্চলের মানুষের কাছ থেকে এহসান ইসলামী মাল্টিপারপাস এবং এহসান ইসলামী রিয়েল এস্টেট হাতিয়ে নেয় দু হাজার ৪শ কোটি ৭০ লাখ টাকা। তাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট শূন্যে পালিয়ে যায় তারা। স্থিতি সম্পদের মূল্য ৫শ কোটি টাকার মতো। হাতিয়ে নেয়া টাকা ও তাদের বর্তমান সম্পদের স্থিতি হিসেব করলে প্রতারক চক্রটির আত্মসাতের পরিমান দু’হাজার কোটি টাকা।

বিশাল অঙ্কের ওই টাকা হাতিয়ে গা ঢাকা দেয় পাঁচ এমডিসহ ১২ কর্মকতা। আমানতকারী ও লগ্নিকারীরা ওই টাকার জন্য দফায় দফায় থানা পুলিশের কাছে প্রেসক্লাবে ধর্ণা দেন। মামলা ও সংবাদ সম্মেলন করেন পথে পথে ঘোরা ক্ষতিগ্রস্তরা। কিন্তু পুলিশ ওই প্রতারক চক্রকে আটকে ব্যর্থ হয়। অভিযোগ ওঠে পুলিশের কয়েক কর্তা ব্যক্তি প্রায় ৫০ লাখ টাকা বাণিজ্য করে প্রতারকদের আটক এড়িয়ে চলেন। এরপরও হাল ছাড়েননি লগ্নিকারীরা। তারা মামলার আসামি মাগুরা জেলার বাসিন্দা প্যানেল এমডি প্রতারক আতাউল্লাহ, যশোর রাজারহাটের বাসিন্দা প্যানেল এমডি মুফতি ইউনুছ আহমেদ, মাগুরা জেলার বাসিন্দা এমডি রবিউল ইসলাম, এমডি জোনায়েত, এমডি আইয়ূব আলী, ম্যানেজার টিটু, জোনাল ম্যানেজার যশোর শাখার খবিরুজ্জামান খবির, ফতোয়া বোর্ডের উপদেষ্টা মুফতি জব্বার, রাজার হাটের আব্দুল হালিম, ঢাকা অফিসের ডিরেক্টর জেনারেল মুফতি আমিনুল, যশোর শহরের পূর্ব বারান্দিপাড়া মাঠপাড়ার লোকমান ও যশোর অফিসের ম্যানেজার বিপুলকে ধরতে নিজেরায় খোঁজ খবর শুরু করেন। তারা ঢাকা পর্যন্তও যান।

যশোর শহরের চাঁচড়া রায়পাড়ার আব্দুস সামাদের স্ত্রী রহিমা খাতুন ও খোলাডাঙ্গা এলাকার মৃত আব্দুস সালামের স্ত্রী কোহিনুর বেগম মুফতি ইউনুসের বিরুদে এজাহার দিলেও সে আটক এড়িয়ে চলে। মাস দুয়েক আগে মুফতি ইউনুসকে টেনে হেঁচড়ে থানার বারন্দায় নেয়া হলে সেখানে ১০ লাখ টাকা দিয়ে বেরিয়ে যায় সে। এরপর দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া যশোর ভাতুড়িয়ার মৃত পাচু মোড়লের ছেলে সদেক আলী ও তার স্ত্রী মঞ্জিলা খাতুন বিভিন্ন জায়গায় খোঁজ লাগান মুফতি ইউনুসের অবস্থান নিশ্চিত করতে। এক পর্যায়ে ২৭ এপ্রিল তারা সংবাদ পান ইউনুস রাজারহাটের জামিয়া ইসলামিয়া মাদ্রাসার সামনে রয়েছে। সেখানে আরও কিছু পাওনাদারকে সাথে নিয়ে যান তারা। আর পাকড়াও করেন ইউনুসকে।

এ খবরে নরেন্দ্রপুর ফাঁড়ির এএসআই বিল্লাল হোসেন আটক করেন তাকে। তবে আটকের আগে এএসআই বিল্লাল নাটকীয় আচরণ করেন। উল্টো পাওনাদারদের ধামকি দিয়ে মুফতি ইউনুসের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের বাণিজ্য করার চেষ্টা করেন। ছেড়ে দেয়ার জন্য এলাকার একটি দুষ্ট চক্রের মাধ্যমে মধ্যস্থতা করার চেষ্টা করেন তিনি। এ সময় গ্রামের কাগজের একটি টিম ওই দারোগাকে নিশ্চিত করেন ইউনুসের নামে থানায় দুটি নিয়মিত মামলা রয়েছে। কাজেই পুলিশ কেন, যে কোন সাধারণ মানুষও তাকে আটক করে থানায় দিয়ে আসতে পারেন। এরপর ওই দারোগা অনেকটা নখোশ অবস্থায় তার দায়িত্ব পালন করেন। আর চুপসে যায় উঠতি নেতা গোছের কিছু লোকজন। তাদের পকেটে কিছুই পড়েনা। দারোগা বিল্লালও আসেন শুকনো মুখে। আর মুফতি ইউনুসের ঠাঁই এখন শ্রীঘরে।
এব্যাপারে থানার অফিসার ইন্চার্জ সিকদার আককাছ আলী জানান, মুফতি ইউনুস একজন আলোচিত প্রতারক। তার বিরুদ্ধে থানায় নিয়মিত দুটি মামলা রয়েছে। তার বাড়ি এখন রাজারহাটে। তার শ্বশুর মৃত নুর মোহাম্মদ। মূলবাড়ি খুলনার কয়রা উপজেলার কুসডাঙ্গায়। পিতা দলিল উদ্দিন। রাজারহাট এলাকায় আলীশান বাড়ি করেছেন তিনি। বিশাল অঙ্কের টাকা আত্মসাতের ঘটনায় তাকে আটক করা হয়েছে। তার সহযোগীদেরও একেএকে আটক করা হবে। মুফতি ইউনুকে আটকে সহায়তা করার জন্য সংশ্লিষ্টদের ধন্যবাদও জানান তিনি।