গুলিবর্ষণ : গাংনী শহরজুড়ে টান টান উত্তেজনা

দু পক্ষের বাড়িতে পাল্টাপাল্টি হামলার অভিযোগ

 

গাংনী প্রতিনিধি: মেহেরপুর গাংনী উপজেলা শহরে দু পক্ষের মধ্যে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। এর জেরে হামলা-পাল্টা হামলা ও গুলিবর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। তবে এতে কেউ হতাহত না হলেও শহরজুড়ে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি বিশৃঙ্খলা এড়াতে বাড়তি সতর্কতা নিয়েছে পুলিশ।

স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, মেহেরপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য মকবুল হোসেন ও স্ট্যাম্পভেন্ডার ব্যবসায়ী আশরাফুল ইসলাম পক্ষের লোকজনের মধ্যে গতকাল সকাল থেকে উত্তেজনা চলছিলো। মকবুল হোসেন পক্ষের লোকজন হাসপাতাল বাজারে এবং আশরাফুল ইসলাম পক্ষের লোকজন তার বাসভবনের সামনে অবস্থান নেয়। গাংনী থানার ওসি আকরাম হোসেন দুপক্ষের লোকজনকে বিশৃঙ্খলা না করার নির্দেশ দেন। উত্তেজনার খবর শুনে মেহেরপুর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আজবাহার আলী শেখ বাড়তি ফোর্স নিয়ে গাংনী শহরে পৌঁছান। আশরাফুল ইসলাম শহরে মিছিল করতে চাইলে পুলিশ নিষেধ করে। তবে নিজ কার্যালয়ে আলোচনাসভার মধ্যদিয়ে জড়ো হওয়া নেতাকর্মীদের বিদায় দেবেন বলে পুলিশকে জানান আশরাফুল। আলোচনা সভায় আশরাফুল ইসলামের বক্তব্যের শেষ পর্যায়ে তার সভায় মকবুল হোসেনের লোকজন হামলা করেছে মর্মে খবর ছড়ালে নেতাকর্মীরা লাঠিসোঁটা নিয়ে বাইরে বেরিয়ে পড়নে। হামলাকারীদের প্রতিরোধে হই-হুল্লোড় করে মকবুল হোসেনের বাস ভবনের দিকে রওনা দেয়। এ সময় কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলিবর্ষণ করা হয়। উত্তেজিত নেতাকর্মীরা এমপি মকবুল হোসেনের বাসভবন লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।

গাংনী থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আকরাম হোসেন জানান, আশরাফুলের বাড়িতে আলোচনাসভা চলার সময় সামনের সড়ক দিয়ে এমপি পক্ষের ছয় জন লোক তিনটি মোটর সাইকেলে এমপির বাড়ির দিকে চলে যায়। সভার মধ্য থেকে কে বা করা উচ্চ স্বরে বলে যে তাদের ওপর গুলি ও ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেছে। এ সময় তারা ধাওয়া করে এমপির বাড়িতে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। ঘটনার সময় আশরাফুল ইসলামের শর্টগানের তিন রাউন্ড গুলিবর্ষণ করা হয়। পরে ওই শর্টগান, ৩৪ রাউন্ড গুলি ও বর্ষণকৃত গুলির ৩টি খোসা জব্দ করে থানায় নেয়া হয়েছে। গুলি বর্ষণের ঘটনা অধিকতর তদন্ত করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

এদিকে গতকাল সন্ধ্যায় আশরাফুল ইসলাম তার ব্যক্তিগত কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এমপি ও তার পক্ষের লোকজনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ উত্থাপন করেন। লিখিত বক্তব্যে নিজেকে পৌর যুবলীগের ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, আগামি পৌর নির্বাচনে তিনি মেয়র পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী। মহিলা এমপি সেলিনা আখতার বানু কর্তৃক গতকাল সকালে খাদ্য গুদামে গম ক্রয় উদ্বোধন অনুষ্ঠানে যোগদানের লক্ষ্যে নেতাকর্মীরা তার কার্যালয়ে জড়ো হয়। এ সময় হাসপাতাল বাজারে গণ্ডগোলের খবর পেয়ে পুলিশ সেখানে যায়। এ সুযোগে এমপি মকুবল হোসেনের পিএস সাইফুজ্জামান শিপুর নেতৃত্বে তিন মোটরসাইকেলে ছয়জন অফিস লক্ষ্য করে শাটারগানের দু রাউন্ড গুলিবর্ষণ ও ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। প্রতিরোধ হিসেবে লাইসেন্সকৃত শর্টগান দিয়ে তার ছোট ভাই আনারুল ইসলাম তিন রাউন্ড ফাঁকা গুলি বর্ষণ করে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।

পাল্টা অভিযোগ করে এমপি মকবুল হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, আশরাফুলের অফিসে গুলিবর্ষণের কোনো ঘটনা ঘটেনি। ওই সময় সাইফুজ্জামান শিপুসহ তার লোকজন হাসপাতাল বাজারে অবস্থান করছিলো। বিরোধীদের ইন্ধনে তার বাড়িতে আশরাফুল ইসলামের লোকজন পুর্ব পরিকল্পিতভাবে হামলা চালিয়েছে। এমপির বাসভবনে ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও গুলি বর্ষণের ঘটনয় নেতৃবৃন্দ তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জ্ঞাপন করেন।

এদিকে ঘটনার পর আশরাফুল ইসলামের অফিস পরিদর্শন করেন মেহেরপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এমএ খালেকসহ নেতৃবৃন্দ। এ সময় তাকে ফুল দিয়ে বরণ করেন আশরাফুল। হামলার সাথে জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন এমএ খালেক।

রাজনৈতিকসহ বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে গত কয়েকদিন ধরে গাংনীতে বিবাদমান দুপক্ষের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছিলো। আধিপত্য রক্ষা ও আধিপত্য বিস্তার নিয়ে সাজোয়া দুপক্ষের মধ্যে যেকোন সময় সংঘর্ষের আশঙ্কায় শঙ্কিত ছিলেন স্থানীয় লোকজন। এরকম পরিস্থিতির মধ্যে গতকাল দুপক্ষের সাজোয়া অবস্থানের ঘটনায় শহরজুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। হামলার খবর শুনে বাসস্ট্যান্ড এলাকার অনেক দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়। পথচারীদের চলাচলও কমে আসে। দোকানপাটে কেনাবেচায় ভাটা পড়ে। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেন ব্যবসায়ী ও ক্রেতারা। ব্যবসায়ী, ক্রেতা ও শহরে গুরুত্বপূর্ণ কাজে আসা মানুষের স্বার্থে গাংনীর স্বাভাবিক পরিস্থিতি বজায় রাখতে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ এবং প্রশাসনের প্রতি অনুরোধ করেন ব্যবসায়ীরা।

গতকালের ঘটনায় কোনোপক্ষই মামলা করেননি জানিয়ে গাংনী থানার ওসি আরো বলেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এরপরেও যদি কেউ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে তাহলে তা কঠোর হস্তে দমনের হুশিয়ারী করেন তিনি।

Leave a comment