সময় কি এভাবেই কেড়ে নেয় মানুষের বিবেক?

একজন মানুষ। তিনি অটোচালক। পথে অসুস্থ হলেন। উধাও হয়ে গেলো অটোরিকশা, মোবাইলফোনসহ নগদ টাকা। এরপরও কি বলতে হবে বাঙালি এখনও পুরোনো পরোপকারী স্বভাবটা ধরে রেখেছে? সকলেই দরদি বিবেকটা বিসর্জন না দিলেও অধিকাংশের মধ্য থেকেই যে সহমর্মিতা কপ্পুরের মতো উবে গেছে তা বোধ করি বলা অমূলক নয়। বিশেষ করে চুয়াডাঙ্গা শহরতলী দৌলাতদিয়াড়ের অটোচালক শহিদুল ইসলামের অটোরিকশাসহ মোবাইলফোন ও নগদ টাকা চুরির পর তা বলতে দ্বিধা থাকার কথা নয়।

শহিদুল ইসলাম পূর্বেও এক দফা হৃদরোগে আক্রান্ত হন। চিকিৎসা শেষে তিনি পুনরায় অটো কিনে ভাড়া মেরে সংসারে সচ্ছলতা ধরে রাখার যুদ্ধে নামেন। এ জীবনযুদ্ধে নেমেই গতপরশু হৃদরোগে আক্রান্ত হন। চুয়াডাঙ্গা-দামুড়হুদা সড়কের ভিমরুল্লার ফাঁকা স্থানে তিনি গুরুতর অসুস্থতা বোধ করলে স্থানীয়দের কেউ কেউ তাকে পথের ধারের মাচায় শোয়ার ব্যবস্থা করে দেন। তখন ঠিক ঘড়ির কাঁটা কোথায় তা নিশ্চিত করে জানা না গেলেও স্থানীয়দের নিকট থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, ভূমিকম্পের কিছু আগেই তিনি অসুস্থ হন। একজন অসুস্থ মানুষের নিকট থেকে মোবাইলফোন, নগদ টাকা তো চুরি হলোই, অতোবড় অটোরিকশাও বেমালুম চোরের পেটে? সমাজের এ বাস্তবতা বিশ্বাস করতেও কষ্ট হয়।

অজ্ঞান করে অর্থসহ মূল্যবান মালামাল হাতিয়ে নেয়ার ঘটনা তো এখন হরহামেশায় ঘটে। যারা অজ্ঞান করে অর্থসহ মূল্যবান মালামাল হাতিয়ে নেয় তারা তো প্রতারক। কিন্তু একজন অসুস্থ মানুষকে সেবার বদলে তার মালামাল চুরি হলো কীভাবে। এরকম চুরি মানে তার আশেপাশেই ঘুর ঘুর করছিলো চোর। বিষয়টি বিশ্লেষণ করলে বোঝা যাবে, চোরের সংখ্যা নির্ঘাত বেড়েছে। তা না হলে তখন চোরের উপস্থিতি নিশ্চয় কাকতালীয়। যেটাই হোক, রাস্তায় অসুস্থ হয়ে পড়া এক ব্যক্তিকে হাসপাতালে পৌঁছে দিতে সময় লেগেছে কয়েক ঘণ্টা। তাও আবার কেউই নিজে হাসপাতালে নেয়ার প্রয়োজনীয়তা বোধ করেননি, ফায়ার স্টেশনে খবর দিয়েছেন। তবুও তো দিয়েছেন! ক’দিন পর দেখা যাবে অতোটুকু দায়িত্ববোধও অবশিষ্ট নেই।

বাঙালি-আনা মানে পয়লা বোশেখে পান্তা ইলিশের আধিখ্যেতা নয়। দরদি ও মায়াবি আচরণ বাঙালির নিজস্ব সংস্কৃতির মজ্জাগত। অথচ কালক্রমে কেমন যেন সেই দরদ ফ্যাকাসে হয়ে যাচ্ছে। মায়াবি হৃদয়টাও কেমন যেনো অচেনা হয়ে গেছে। অথচ এ সমাজেরই চিত্র ছিলো কতোটা মায়াময়ী। কোনো পথচারী বাড়ির বাইরে দাঁড়িয়ে পিপাসার কথা জানাতেই মিলতো নাড়ু-মুড়িসহ জগভর্তি পানি। এখন? রাস্তার পাশে একজন অসুস্থ হয়ে পড়ে থাকলে তার সুচিকিৎসা দুরস্ত, মিলছে চুরির খবর। সময় কি এভাবেই কেড়ে নেয় মানুষের বিবেক?