ভূমিকম্প : দুর্যোগ মোকাবেলায় আমরা কতোটা প্রস্তুত

নেপালে ভূমিকম্পে ঠিক কতোজন নিহত হয়েছেন তা গতকাল পর্যন্ত নিশ্চিত করে বলতে পারেনি দেশটির সরকার। ঘটনার পর থেকে প্রতিনিয়তই সংবাদ মাধ্যমগুলো মৃত্যুর সংখ্যা বৃদ্ধির খবর দেয়ার সাথে সাথে পরিস্থিতি কতোটা ভয়াবহ তার বর্ণনা দিতে গিয়েও খেই হারিয়েছে। বাংলাদেশ ও ভারতে তীব্র ভূমিকম্প অনুভূতই শুধু হয়নি, হতাহত হয়েছে বহু। সর্বশেষ প্রাপ্ত খবর অনুযায়ী, দেশে নিহত হয়েছে ৪ জন, ভারতে ৫৪ জন ও নেপালে দেড় হাজারের অধিক। অবশ্য ক্ষয়-ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ সম্ভব হয়নি। শেষ পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা কতোজনে দাঁড়ায় তাও বলা কঠিন।

আমাদের দেশে গতকালের ভূমিকম্পে ঘরবাড়ি যতোটা না ভেঙে পড়ে হতাহত হয়েছে, তার চেয়ে বেশি আহত হয়েছে আতঙ্কে, হুড়োহুড়ি করতে গিয়ে। ভয়ে জ্ঞানও হারিয়েছে বহু। ঝিনাইদহ ও পাবনাসহ বিভিন্ন স্থানে বিদ্যালয়ের শিশু শিক্ষার্থীরা গণহারে অজ্ঞান হয়ে পড়ে বলে সংবাদ মাধ্যমে তুলে ধরা হয়েছে। অথচ ভূমিকম্পের সময় আতঙ্কিত না হয়ে কী কী করতে হবে তার সংক্ষিপ্ত নিদের্শনা আছে। যদিও ওই নিদের্শনার কথা বিপদের সময় ক’জনেরই আর মনে থাকে? ভূমিকম্পের সময় বাসার বিদ্যুত ও গ্যাস লাইন বন্ধ করতে হয়। খাবার পানি ও শুকনো খাবার প্রস্তুত পূর্ব থেকেই রাখা থাকলে কঠিন সময়ে তা দিয়ে জীবন রক্ষা করা সহজ হয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা গেছে, ভূমিকম্প মূলত স্থায়ী হয় সর্বোচ্চ এক দেড় মিনিট। এ সময়ে বাসা থেকে বের হওয়া সম্ভব না হলে, তখন টেবিল, খাটের নিচে কিংবা পিলারের সাথে অবস্থান নেয়া যেতে পারে। মাথা রক্ষায় বালিশ হাতের কাছে রাখা ভালো। তবে ছোট বড় ভবন থেকে বাইরে বেরিয়ে ফাঁকা স্থানে বা সড়কে দাঁড়ানোটাই অধিক নিরাপদ। বাসায় টর্চলাইট রাখতে হয় নির্দিষ্ট স্থানে। প্রয়োজনে যাতে হাত বাড়ালেই পাওয়া যায়। কমিউনিটি পর্যায়ের প্রস্তুতি অত্যাবশ্যকীয় হলেও আমাদের সমাজে তা অপ্রতুল। ঘটনার পর চিহ্নিত মিলিত স্থানে অবস্থান নেয়ার জন্যও নিদের্শনা দেয়া হয়।

ভূমিকম্পে নেপাল ধ্বংসস্তুপে রূপান্তর হয়েছে। কাঁদছে পুরো নেপাল। অধিকাংশ এলাকার সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। উদ্ধার তৎপরতা চালাতে গিয়ে হিমসিম খাচ্ছে সংশ্লিষ্টরা। এ অবস্থায় নেপালের প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়ানো খুবই জরুরি। গণমাধ্যমে বলা হয়েছে, ‘নেপালে এমন প্রাকৃতিক দুর্যোগ আর দেখা যায়নি। কাঠমুণ্ডুর অনেক জায়গায় এখন ধ্বংসস্তূপ। নেপালের রাজধানী কাঠমুণ্ডুর পরিস্থিতি যখন এমন, তখন আমাদের দেশের রাজধানীতে ওই মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হানলে পরিস্থিতি কতোটা ভয়াবহ হবে? ভাবতেই গা শিউরে ওঠে। স্থাপনা নির্মাণে অনিয়মই শুধু নয়, ঘিঞ্জি ঘরবাড়িতে ঠাসাঠাসি করে বসবাসের এ শহর কতোটা ঝুঁকির মধ্যে তা গতকালের ভূমিকম্পে কিছুটা হলেও উপলব্ধিতে এসেছে। এ উপলব্ধির পরও উদাসীনতা কাম্য নয়। তাগিদ ভুলে গেলে দুর্যোগে ক্ষতির মাত্রা যে বাড়বে তা বলাই বাহুল্য।

গতকাল শনিবার দুপুর সোয়া ১২টার দিকে যখন ভূমিকম্প হয় তখন অনেকেই ভবন থেকে বের হয়ে ফাঁকা স্থান খুঁজেছেন। এটাও যে সচেতনতারই অংশ তা নতুন করে বলার অবকাশ রাখে না। তবে আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে ছোটাছুটি আর অল্পতেই শিশু শিক্ষার্থীর জ্ঞান হারানোর আড়ালে যে অপুষ্টিও রয়েছে তা চিকিৎসকেরা নিশ্চয় অস্বীকার করবেন না। গণহারে শিশুদের অজ্ঞান হওয়ার প্রকৃত কারণ খতিয়ে দেখে অবশ্যই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। তা ছাড়া যেকোনো দুর্যোগ মোকাবেলায় যেমন দরকার সচেতনতা, তেমনই প্রয়োজন আগাম প্রস্তুতি। অবশ্যই খতিয়ে দেখা দরকার, দুর্যোগ মোকাবেলায় আমরা কতোটা প্রস্তুত।