হাসপাতাল হোক দালালমুক্ত : বৃদ্ধি পাক সেবার মান

চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে বহিরাগত কিছু ব্যক্তি ঘুর ঘুর করে। এরা গ্রাম থেকে আসা সরলসোজা রোগী ও রোগীর লোকজনকে ভুল তথ্য দিয়ে হাসপাতাল থেকে শুধু ভাগিয়েই নিয়ে যায় না, সুযোগ বুঝে নানাভাবে প্রতারণাও করে। এদের খপ্পরে পড়ে সরলসোজা রোগী ও রোগীর লোকজন সর্বস্বান্ত হন। চিকিৎসা নিতে এসে চিকিৎসার বদলে তিক্ত অভিজ্ঞতা নিয়ে বাড়ি ফেরেন। যা কোনোভাবেই কাম্য নয়।

চুয়াডাঙ্গা সদর আধুনিক হাসপাতালে দালালচক্রের উৎপাত কতোটা ভয়াবহ রূপ নিয়েছে তা একটি ঘটনার মধ্যদিয়ে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। চিকিৎসাধীন এক রোগী ও তার স্ত্রীকে মিথ্যা বলে শয্যা ছাড়তে বাধ্য করেছে। বেড থেকে না নামলে রোগ নিরাময় হবে না বলে বানোয়াট কথা বলে রোগী নামিয়ে অন্য রোগী তুলেছে ওই বেডে। এর আড়ালে রয়েছে টাকা। এ বিষয়ে পত্রিকায় প্রতিবেদন প্রকাশের পর সিভিল সার্জন ও আবাসিক মেডিকেল অফিসারসহ সংশ্লিষ্টরা হাসপাতালের পরিবেশ দালালমুক্ত করার লক্ষ্যে তৎপর হয়ে ওঠেন। অবাক হলেও সত্য যে, কথিত ওই দালালদেরই একজন আবাসিক মেডিকেল অফিসারকে হুমকি দিয়ে নিজেকে জাহির করার ব্যর্থ চেষ্টা করে। আরএমও’র তড়িৎ পদক্ষেপে হুমকিদাতা কথিত দালাল সাঈদ দৌড়ে পালিয়ে যায়। পরে অবশ্য হাসপাতালে উপজেলা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালিত হয়।

‌            চুয়াডাঙ্গা সদর আধুনিক হাসপাতালের ব্যববস্থাপনা কমিটির চলতি মাসের সভায় চিকিৎসাসেবার মান বৃদ্ধির বিষয়টিই শুধু গুরুত্ব পায়নি, লোকবলসহ বহিরাগতদের উৎপাত প্রসঙ্গও আলোচনায় উঠে আসে। হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে অটোরিকশার যানজটও কর্তাদের দৃষ্টিগোচর হয়। এসব থেকে পরিত্রাণে মাঝে মধ্যেই ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার বিষয়টি যেমন গুরুত্ব পায়, তেমনই কর্তব্যরত চিকিৎসকদের নিজ নিজ দায়িত্ব নিষ্ঠার সাথে পালনের মধ্যদিয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাসেবার মান বৃদ্ধির বিষয়েও তাগিদ দেয়া হয়। এ বৈঠকের কয়েকদিনের মাথায় একজন বহিরাগত অর্থের বিনিময়ে এক রোগীকে মিথ্যা বলে অন্য রোগীকে শয্যায় তুলে দেয়ার মতো ঘটনা ঘটায়। শয্যা বিক্রির ঘটনাকে এ আর এমন কি বলে হালকাভাবে দেখা উচিত নয়। কারণ, ওটা বহিরাগত কর্তৃক অন্যায় অনিয়ম। এটা পাত্তা পেলে পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ হতে বাধ্য।

সরকারি হাসপাতাল থেকে রোগী ভাগিয়ে নিয়ে নির্ধারিত ক্লিনিক বা নার্সিং হোমে নিতে পারলে মোটা অঙ্কের কমিশন পাওয়া যায়। এ কাজে বহিরাগতদের পাশাপাশি নিম্নশ্রেণির কিছু কর্মচারী আছেন তাদেরও কেউ কেউ রোগীকে প্রভাবিত করে পছন্দের বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে পাঠিয়ে অর্থ আয় করে। এদের ধরা কঠিন হলেও অসম্ভব নয়। ধরার তেমন তাগিদ লক্ষ্য করা যায় না বলেই হাসপাতাল থেকে রোগী ক্লিনিক বা নার্সিং হোমে নেয়ার বিষয়টি অনেকটা প্রকাশ্য রূপ পেয়েছে। অবশ্য শুধুই কি প্রভাবিত করে ভাগিয়ে নেয়া? না, সদর হাসপাতালের প্রসূতি বিভাগে রাতে জরুরি চিকিৎসা প্রদানের বিষয়টি দুঃস্বপ্নের মতো। কারণ? গাইনি কনসালটেন্ট হাসপাতাল কম্পাউন্ডে থাকেন না। তা হলে প্রসব বেদনায় ছটফট করা প্রসূতিকে কোথায় নেবে? মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রে? আকস্মিক এক রাতে সরেজমিন পরিদর্শন করলে অপ্রত্যাশিত চিত্রই চোখে পড়বে।

বিশেষ কমিশনে রোগী ভাগানো, সুযোগ বুঝে রোগীর ওষুধ পথ্য চুরিসহ নানাভাবেই প্রতারণা বন্ধে বাস্তবমুখি পদক্ষেপ প্রয়োজন। সরকারি স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রগুলো দালালমুক্ত করতে যেমন প্রশাসনিক তদারকি দরকার, তেমনই দরকার স্বাস্থ্যসেবাদানের শতভাগ নিশ্চয়তা। এ জন্য লোকবল সঙ্কট কাটিয়ে তোলার পাশাপাশি কর্তব্যরতদের দায়িত্বশীল হওয়া খুবই জরুরি। কারণ চিকিৎসাসেবা পাওয়া প্রত্যেকের অধিকার।

Leave a comment