স্টাফ রিপোর্টার: আশুলিয়ায় বাংলাদেশ কর্মাস ব্যাংক শাখায় ডাকাতির পরিকল্পনা নেয়া হয় এক মাস আগে। এ জন্য টঙ্গীর আউচপাড়া এলাকায় বাসা ভাড়া নেয় গ্রেফতার হওয়া ডাকাত সদস্য সাইফুল ইসলাম। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে এ তথ্য জানিয়েছে গ্রেফতারকৃত জঙ্গি বাবুল সর্দার ও মিন্টু প্রধান। বৃহস্পতিবার রাতে পুলিশ তাদেরকে আশুলিয়ার কলমা এলাকা থেকে গ্রেফতার করে। পরে তাদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী টঙ্গীর সাতনগর আউচপাড়া এলাকা থেকে উদ্ধার করে গান পাউডার, গ্রেনেড, বোমা তৈরির বিভিন্ন সরঞ্জাম, চারটি চাপাতি, আটটি ছোরা, একটি পিস্তলের ম্যাগজিন, ডাকাতির সময় ব্যবহূত দুটি মোটরসাইকেল, বেশ কিছু উগ্রপন্থি বই এবং লিফলেট।
এ নিয়ে ডাকাতির ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে পুলিশ চারজনকে গ্রেফতার করলো। ঘটনার দিন পালানোর সময় জনতার গণপিটুনিতে মারা যায় একজন। গতকাল পর্যন্ত তার পরিচয় পাওয়া যায়নি। হাসপাতালে পুলিশ পাহারায় চিকিত্সাধীন সাইফুল ইসলাম গ্রেফতার হওয়ার পর থেকেই পরিচয় গোপন রাখতে বিভ্রান্তিকর তথ্য দিচ্ছিলো। পুলিশ তার সম্পর্কে নিশ্চিত হয়েছে। সে পেশায় এক সময় রাজমিস্ত্রী ছিলো। পরবর্তীতে বাড়ি নির্মাণের ঠিকাদারির কাজ করতো। তার বাড়ি ঢাকার দোহারে। গতকাল গ্রেফতার হওয়া বাবুল সর্দারের বাড়ি মাদারীপুর। মিন্টু প্রধানের বাড়ি মানিকগঞ্জে। ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার জানিয়েছেন, গ্রেফতারকৃতরা সবাই জঙ্গি কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সম্পৃক্ত এ ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
মামলার তদন্ত সংশ্লিষ্ট একজন পুলিশ কর্মকর্তা জানান, আপাত দৃষ্টিতে মনে হচ্ছে ডাকাত (জঙ্গি) চক্রের নেতৃত্ব দিয়েছিলো গ্রেফতার হওয়া সাইফুল। তারা চার ভাই। অপর তিন ভাইয়ের মধ্যে কাজল পরিবহন ব্যবসায়ী, স্বপন একাধিক হত্যা মামলার আসামি, মিন্টু টঙ্গীর খাঁ পাড়া এলাকার মুদি দোকানদার। টঙ্গীর আউচপাড়ার যে বাড়িটি থেকে বিস্ফোরক উদ্ধার করা হয় ঐ বাড়ির মালিক দোহারের বাসিন্দা জনৈক খালিদ। তিন ইউনিটের এক তলা বাড়ি। পুলিশের ঐ কর্মকর্তা বলেন, রাজমিস্ত্রীর সুবাদে খালিদের সঙ্গে সাইফুলের পরিচয়।
আউচপাড়া এলাকার দোকানদার শাহিন জানান, ডিসেম্বর মাসে ওই বাড়ির নির্মাণ কাজ শেষ হয়। বাড়িটি খালি ছিলো। গত দেড় মাস আগে সাইফুল বাড়িটি ভাড়া নেয়। প্রতিদিন রাতে তারা বাসায় আসতো আর সকালে বেরিয়ে যেতো। তবে বেরিয়ে যাওয়ার সময় প্রত্যেকের হাতেই থাকতো ব্যাগ। গতকাল পুলিশের অভিযানে কারণে জানতে পারি ওই বাড়িতে বোমা তৈরির কাজ হতো। গত তিনদিন ধরে বাড়িটি তালাবদ্ধ ছিলো।
এদিকে গতকাল সকালে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া সেন্টারে এক সাংবাদিক সম্মেলনে পুলিশের ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি এসএম মাহফুজুল হক নূরুজ্জামান বলেন, গ্রেফতারকৃত বাবুল ও মিন্টু এক সময় ইসলামী ছাত্রশিবির করলেও বর্তমানে জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে জড়িত। তারা রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টি এবং সংগঠনের অর্থ সংগ্রহের জন্য ওই দিনের ঘটনা ঘটিয়েছে। ইতোমধ্যে গ্রেফতার হওয়া ডাকাত সাইফুল ও বোরহানকে জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়। তবে গ্রেফতারকৃতরা কোন জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত পুলিশ এ ব্যাপারে কোন তথ্য দিতে পারেনি।
ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার হাবিবুর রহমান জানান, গণপিটুনিতে নিহত ডাকাত সদস্যের পরিচয় গতকাল পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। গ্রেফতারকৃত বাবুল সর্দার ও মিন্টু প্রধানকে শনিবার রিমান্ডের আবেদন জানিয়ে আদালতে পাঠানো হবে। পলাতক অপর ডাকাতদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে। ব্যাংকের নিরাপত্তা কর্মী সোহেল রানাকে আটকের ব্যাপারে তিনি বলেন, ঘটনার পর থেকেই সোহেলের আচরণ সন্দেহজনক। পুলিশকে তিনি মিথ্যা তথ্য দিয়েছেন। ধারণা করা হচ্ছে, ডাকাতদের সঙ্গে তার যোগাযোগ থাকতে পারে।