বেদনাবিধূর ভালোবাসায় সিক্ত আর প্রতিবাদে মুখর ট্র্যাজেডি চত্বর

স্টাফ রিপোর্টার: সাভার ট্রাজেডির দু বছর পূর্তি হলো গতকাল শুক্রবার। দুই বছর আগের এই দিনে সাভারে রানা প্লাজা ধসে পড়ে। দিনটি উপলক্ষে প্রতিবাদী মিছিল, কার্টুন ও ছবি প্রদর্শনী,  বিক্ষোভ-সমাবেশ, শোক শোভাযাত্রা, মোমবাতি প্রজ্বলন, স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ এবং শ্রদ্ধা আর ভালবাসায় সিক্ত করে স্মরণ করা হয়েছে রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির শিকার নারী-পুরুষদের।

ভোর থেকেই বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠন ও রানা প্লাজার হতাহত, ক্ষতিগ্রস্ত ও নিখোঁজদের  পরিবার-পরিজন ভিড় জমায় স্মরণকালের ভয়াবহতম শিল্প দুর্ঘটনা হিসেবে পরিচিত রানা প্লাজার সামনে। রানা প্লাজার সামনে বিভিন্ন সংগঠনের সহযোগিতায় নির্মিত স্মৃতিস্তম্ভের বেদীতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান সন্তান হারানো মা-বাবা, বাবা-মা হারানো সন্তানেরা, স্ত্রী হারানো স্বামী, স্বামী হারানো স্ত্রী, ভাই হারানো বোন, বোন হারানো ভাই, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্য ও স্বজনরা। একইসাথে  ফুলেল শ্রদ্ধা জানান, বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের নেতা-নেত্রীরা, জেলা ও উপজেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, বিভিন্ন বেসরকারি ও সামাজিক প্রতিষ্ঠান ও সংগঠন।  ২৪ এপ্রিল তৈরি পোশাক শিল্পে শ্রমিক নিরাপত্তা ও জাতীয় শোক দিবস ঘোষণা এবং রানা প্লাজার শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণের পাশাপাশি পুনর্বাসনের দাবিতে ও নিখোঁজ শ্রমিকদের সন্ধান ও এ ঘটনার সাথে জড়িতদের বিচারের দাবিতে প্রতিবাদ মিছিল ও বিক্ষোভ চলে দফায় দফায়। সকাল থেকেই রানা প্লাজার সামনে স্বজনহারাদের প্লাকার্ড ও নিখোঁজদের ছবি হাতে আর্তচিত্কার করতে দেখা গেছে। রানা প্লাজার বধ্যভূমি ঘিরে স্বজনহারাদের চোখের পানি দেখে অনেকেই চোখের পানি সংবরণ করতে পারেননি। দুই বছর অতিবাহিত হলেও স্বজনহারা মানুষ এখনো খুঁজে ফিরছে তাদের হারানো স্বজনদের। রানা প্লাজার বধ্যভূমির জলাশয়ের পাশে দুই মেয়ের  ছবি হাতে বুকফাটা কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন মাসুদা বেগম। ঘটনার সাতদিনের মাথায় তানজিনার মরদেহ পাওয়া গেলেও ঝর্ণার মরদেহ পাওয়া যায়নি। ময়মনসিংহ থেকে এসেছেন নিখোঁজ রেখা খাতুনের মা মর্জিনা বেগম। নিখোঁজ মেয়ের ছবিসহ ঘুরে বেড়াচ্ছেন আর উন্মাদের মতো বকছেন মেয়েটাকে জীবিত কিংবা মৃত পেলাম না। এ রকম চিত্র আরো অনেক দেখা গেছে।

ভোর থেকে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের পাশে রানা প্লাজা চত্বর শ্রমিকদের পদচারণায় জনসমুদ্রে পরিণত হয়ে ওঠে। এ সময় ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে যান চলে থেমে থেমে। সকালে স্থানীয় সংসদ সদস্য ডা. এনামুর রহমান, ঢাকা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সাভার উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ কামরুল হাসান মোল্যা, পুলিশ সুপার হাবিবুর রহমান, রানা প্লাজার স্মৃতিস্তম্ভের বেদীতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। এরপর বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের মধ্যে গার্মেন্টস শ্রমিক ঐক্য ফোরামের মোশরেফা মিশু, গণসংহতি আন্দোলনের সমন্বয়ক জুনায়েদ সাকি, বাংলাদেশ গার্মেন্টস শ্রমিক সংহতির সমন্বয়ক শ্রমিক নেতা তাসলিমা আখ্তার লিমা, গার্মেন্ট শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র, ছাত্র ইউনিয়ন, রানা প্লাজা গার্মেন্ট শ্রমিক ইউনিয়ন কেন্দ্র, বাংলাদেশ গার্মেন্টস অ্যান্ড শিল্প শ্রমিক ফেডারেশনের রফিকুল ইসলাম সুজন, গার্মেন্টস শ্রমিক ফ্রন্ট, বংলাদেশ গার্মেন্টস শ্রমিক সংহতি, শ্রমিক কর্মচারী ঐক্য পরিষদ, শ্রমিক নিরাপত্তা ফোরাম, জাতীয় গণ ফ্রন্ট, বিজিআইডব্লিউএফ, বিসিডব্লিউএস, বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন ফেডারেশন, বাংলাদেশ টেক্সটাইল গার্মেন্ট্স্ শ্রমিক ফেডারেশন, বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ভার্ক, সাসসহ অন্তত ৩০ টি শ্রমিক সংগঠন ও গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিনিধিরা গতকাল পুষ্পার্ঘ্য অর্পণসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে। কর্মসূচি চলাকালে বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠন লাল-কালো পতাকা  হাতে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে রানা প্লাজার আশেপাশে শোক মিছিল করে।

গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, রানা প্লাজার শ্রমিকদের সন্তানরা উচ্চমাধ্যমিক পাস করলে তাদেরকে বিনা বেতনে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ করে দেবেন এবং আহতরা সবসময় গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র হাসপাতালে স্বল্প খরচে চিকিত্সা সেবা নিতে পারবে।

রানা প্লাজার সামনে তিনজন কার্টুনিস্ট– মেহেদী হক, মোর্শেদ মিশু ও নাসরিন সুলতানার কার্টুন এবং তাসলিমা আখতারের তোলা রানা প্লাজার ওপর ছবি প্রদর্শিত হয়। বাংলাদেশ টেক্সটাইল গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশন ভবন ধসের সময়কার বিভিন্ন আলোকচিত্র প্রদর্শন করে।

Leave a comment