ব্যাংক ডাকাতি : নিরাপত্তার বিষয়টি নতুন করে ভাবতে হবে

ঢাকার অদূরে সাভারের আশুলিয়ার কাঠগড়া এলাকায় বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকের শাখায় গত মঙ্গলবার দুপুরে ডাকাতদলের হানায় নিহত হয়েছে ৮ জন। গ্রেনেড ও গুলি ছুঁড়ে এবং কুপিয়ে ডাকাতদল ব্যাংকের ভেতরে ও বাইরে তাণ্ডব চালায়। ব্যাংক শাখাটির ম্যানেজার, গানম্যান ও স্থানীয় ব্যবসায়ী ঝিনাইদহ শৈলকুপার একজনসহ  ৮ জন নিহত হয়েছেন। জনতার হাতে ধরা পড়ে গণপিটুনিতে প্রাণ হারিয়েছে এক দুর্বৃত্ত। মোট নিহতের সংখ্যা ৯। আহত অন্তত ২০ জন।

তিনটি মোটরসাইকেলেযোগে কয়েকজন ব্যক্তি গ্রাহকের বেশে ওই ব্যাংকে প্রবেশ করে। এরপর তারা ম্যানেজারকে গ্রেনেড দেখিয়ে জিম্মি করে। এ অবস্থায় তারা ব্যাংকের ভল্টের চাবি চায়। ম্যানেজার তা দিতে অস্বীকার করলে দুর্বৃত্তরা রোমহর্ষক পরিস্থিতির সৃষ্টি করে। এ ধরনের নৃশংসতায় বিচলিত না হয়ে কি পারা যায়? দিনদুপুরে একটি ব্যাংকে সশস্ত্র ডাকাতির ঘটনা দেশবাসীকে হতবাক করেছে। কেউ কেউ ডাকাতি নাকি আড়ালে অন্য কিছু তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে। পুলিশের ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি হামলার ধরন বিশ্লেষণ করে বলেছেন, দুর্বৃত্তরা শুধু ডাকাতির উদ্দেশে আসেনি। নাশকতার উদ্দেশ্যও ছিলো। দুর্বৃত্তদের তিনজনকে জনগণ ধাওয়া করে ধরে ফেলে। তাদের একজন গণধোলাইয়ে নিহত হলেও অপর দুজন জীবিত। এদের নিকট থেকে অনেক তথ্য উদ্ধার করা সম্ভব হবে বলে পুলিশের বিশ্বাস।

ম্যানেজারের কর্তব্যপরায়ণতা প্রশংসার দাবি রাখে। তিনি নিজের জীবন দিয়ে তার দায়িত্বের আমানত রক্ষা করেছেন। দুর্বৃত্তরা ক্যাশ থেকে নগদ টাকা লুট করলেও ভল্টে হাত দিতে পারেনি। ম্যানেজারের সহকর্মীরাও সাহসিকতা ও ধৈর্যের পরিচয় দিয়েছেন। অন্যদিকে স্থানীয় ব্যবসায়ী সমাজ ও জনগণ ডাকাতকে হাতেনাতে ধরতে জীবনের ঝুঁকি নিয়েছেন। তারা ব্যাংকটি ঘেরাও করে দুর্বৃত্তদের আটক করার সর্বাত্মক চেষ্টা করেন। দুর্বৃত্তদের গুলি ও গ্রেনেডের মুখেও তারা পিছুপা হননি। জনগণ ডাকাতদের নিকট হতে প্রায় ছয় লাখ টাকা উদ্ধার করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেও দিনদুপুরে এ ধরনের হামলায় হতাহতের দৃশ্য দেখে যে সান্ত্বনা খুঁজে পাচ্ছেন না, তা বলাই বাহুল্য।

বাংলাদেশের ব্যাংকের শাখাগুলোর নিরাপত্তা উন্নত হয়েছে বলে দাবি করা হলেও আশুলিয়ার এ ঘটনা নতুন করে দুশ্চিন্তায় ফেলেছে। ব্যাংকিং খাতে সম্প্রতি চুরি-ডাকাতি বৃদ্ধি পাওয়ায় গত বছরের ১৭ নভেম্বর একটি সার্কুলার জারির মাধ্যমে বেশকিছু নির্দেশনা দেয়া হয়। নির্দেশনানুযায়ী প্রতিটি শাখার প্রবেশপথে, ভেতরে ও বাইরে চারপাশে ন্যূনতম প্রয়োজনীয় সংখ্যক সিসিটিভি (ক্লোজ সার্কিট টিভি), আইপি ক্যামেরা (ইন্টারনেট প্রটোকল ক্যামেরা), স্পাই ক্যামেরা (গোপন ক্যামেরা) ও ডিভিআর (ডিজিটাল ভিডিও রেকর্ডার) স্থাপন করার কথা। সকল শাখায় এ নির্দেশনা কতোটুকু অনুসরণ করা হয়েছে তা খতিয়ে দেখা দরকার।

দিবালোকে অভিনব কৌশলে দুর্বৃত্তদের হানার ঘটনাটি ব্যাংকের সকল শাখার বাড়তি নিরাপত্তার বিষয়টি নতুন করে ভাবিয়ে তুলেছে। ব্যয়বহুল হলেও নিদের্শনা মোতাবেক নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা গড়ে তোলার পাশাপাশি প্রবেশপথে সেন্সর বসানোর কথাও ভাবতে হবে। একজন নিরাপত্তাকর্মী দিয়ে নয়, নিরাপত্তা কর্মীর সংখ্যা বাড়াতে হবে। ডাকাতির পর নয়, হানার আগেই দুর্বৃত্ত ধরার মতো পুলিশের অপ্রতুলতা কাটিয়ে দক্ষতা বৃদ্ধির পাশাপাশি জবাবদিহিতাও দরকার।