ধানকাটা কাজের জন্য বেরিয়ে আলমডাঙ্গার দু দিনমজুর মহেশপুরে হলেন লাশ : আহত ১১

জীবননগর-জিন্নাহনগর সড়কের গুড়দায় দিনমজুর বহন করা নসিমনের পেছনে বাসের ধাক্কা : সড়ক ভিজলো রক্তে

 

স্টাফ রিপোর্টার/মহেশপুর প্রতিনিধি: আলমডাঙ্গার পুরাতন পাঁচলিয়া থেকে ঝিনাইদহ মহেশপুরের তালসারের উদ্দেশে রওনা হয়ে দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন দুজন দিনমজুর। আহত হয়েছেন শ্যালোইঞ্জিনচালিত একই নসিমনে থাকা একই গ্রামের ১১ জন শ্রমিক। এদের মধ্যে তিনজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। গতকাল বুধবার বেলা ২টার দিকে জীবননগর-জিন্নাহনগরের গুড়দাহ বাজারে এ দুর্ঘটনা ঘটে। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেছেন, একটি বাস পেছন থেকে ধাক্কা দিলে নসিমনের যাত্রীরা আছড়ে পড়ে। ঘটনাস্থলে নিহত হন একজন। চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নেয়ার পথে মারা যান অপরজন।

নিহত দুজন হলেন- চুয়াডাঙ্গা আলমডাঙ্গার পল্লি পুরাতন পাঁচলিয়া বিলপাড়ার মৃত হারেজ উদ্দীনের ছেলে মহাসিন (৪৫) ও একই গ্রামের ফজলু হকের ছেরে তছলিম (৩০)। নিহত দুজনের মৃতদেহ নিজ গ্রামে নেয়া হলে নিকটজনদের আহাজারিতে এলাকার বাতাস ভারী হয়ে ওঠে। নেমে আসে শোকের ছায়া। আহতদের মধ্যে মোশারফ হোসেন নিহত মহাসিনের ভাই। তাকেসহ লতিফ ও ফরিদকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়েছে।

জানা গেছে, প্রতিবছর আলমডাঙ্গা ও কুষ্টিয়া মিরপুরসহ পার্শ্ববর্তী এলাকার দরিদ্র দিনমজুরেরা ঝিনাইদহের মহেশপুরসহ পার্শ্ববর্তী এলাকায় ধান কাটার কাজের উদ্দেশে রওনা হন। দলে দলে দিন মজুরেরা বোশেখের প্রথম সপ্তার দিকে রওনা হন। ধান কাটার কাজ শেষে মাস খানেকের মাথায় টাকা নিয়ে হাসি মুখে বাড়ি ফেরেন। ধান কাটার কাজে যাওয়া-আসার পথে দিনমজুরদের দুর্ঘটনার শিকার হয়ে প্রাণ হারানোর ঘটনা এটাই প্রথম নয়। কারণ এরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাসের ছাদে, অবৈধযান নসিমন করিমন উঠে কাজের সন্ধানে রওনা হন। গতকাল বুধবার দুপুরের খাবার খেয়ে আলমডাঙ্গার পল্লি পাঁচলিয়ার ১৩ জন শ্রমিক ঝিনাইদহ মহেশপুরের তালসারের উদ্দেশে রওনা হন। গ্রাম থেকে অবৈধযানে রওনা হলেও মাঝ পথে তথা চুয়াডাঙ্গা থেকে জীবননগর পর্যন্ত এদের বাহন হয় বাস। জীবননগর থেকে শ্যালোইঞ্জিন চালিত অবৈধযান নসিমনযোগে রওনা হন ১৩ দিনমজুর। জীবননগর-জিন্নাহনগর সড়কের গুড়দাহ বাজারে পৌঁছুলে পেছন থেকে একটি বাস ধাক্কা দেয়। আছড়ে পড়ে চাকায় পিষ্ট হয়ে ঘটনাস্থলেই নিহত হন তছলিম হোসেন। আহত হন নসিমনের সকলে। এদের উদ্ধার করে প্রথমে নেয়া হয় জীবননগর উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সসহ নিকটস্থ চিকিৎসাকেন্দ্রে। পরে নেয়া হয় চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে। চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নেয়ার পর মহাসিনকে মৃত বলে ঘোষণা করেন কর্তব্যরত চিকিৎসক। আহতদের মধ্যে মৃত হারেজ আলীর ভাই মোশারফ (৫০), মৃত বিশারত আলীর ছেলে লতিফ (২২) ও আবুল হোসেনের ছেলে ফরিদকে (৪৫) রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। এছাড়াও যারা আহত হয়েছেন তাদের মধ্যে রয়েছেন, আক্তার, শহিদুল, রমজান, মন্টু, বিশারত, ফয়েজ ও একলাস।

প্রতক্ষদর্শীদের মধ্যে স্থানীয় ব্যবসায়ী হানিফ আলীসহ অনেকেই বলেছেন, জিন্নাহনগরগামী সীমান্ত সেনা বাসটি শ্রমিকদের বহন করা নসিমনের পেছন দিক থেকে যেবাবে ধাক্কা দেয় তা দেখে চমকে ওঠেন সকলে। মুহূর্তের মধ্যে ঘটনাস্থল রক্তে লাল হয়ে ওঠে। আহত দিনমজুরদের আহাজারিতে স্থানীয়দের কেউই বসে থাকেনি। স্থানীয় সকলেই সম্মিলিতভাবে আহতদের উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য পাঠাতে থাকেন। ঘটনাস্থলে নিহত তছলিমের মৃতদেহ ঘটনাস্থলেই পড়ে থাকে। পরে ঘটনাস্থলে পৌঁছায় পুলিশ। লাশ তার নিজ গ্রামে নেয়ার প্রক্রিয়া করা হয়। এদিকে গতরাত সাড়ে ৮টার দিকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল থেকে মহাসিনের মৃতদেহ তার নিজ গ্রামের উদ্দেশে নেয়া হয়।

নিকটজনেরা বলেছেন, নিহত ও আহতদের সকলেই হতদরিদ্র। দিনমজুরির কাজের আশায় ছুটতে গিয়ে দুজনকে লাশ হয়ে গ্রামে ফিরতে হলো। নিহত মহাসিনের রয়েছে দু ছেলে এক মেয়ে। তছলিম ছিলেন এক পুত্রসন্তানের জনক। গতরাতেই নিজ গ্রামে দাফন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয় বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

Leave a comment