কোটা পূরণ : হজে অনিশ্চিত ব্যালটি ও ননব্যালটি প্রায় ৩০ হাজার মুসল্লির

স্টাফ রিপোর্টার: ব্যাংকে টাকা জমা দিলেও কোটার চেয়ে বেশি হওয়ায় এবার ১০ হাজার ধর্মপ্রাণ মানুষ হজে যেতে পারবেন না। এছাড়া বেসরকারি এজেন্সিগুলোর কাছে হজে যেতে আরো ২০ হাজার আবেদন রয়েছে। তারাও যেতে পারবেন না বলে জানিয়েছে ধর্ম মন্ত্রণালয়। হজের সর্বশেষ প্রস্তুতি নিয়ে মঙ্গলবার সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা এ তথ্য জানান। এদিকে নিয়ত করেও হজে যেতে না পারা ব্যক্তিদের ধৈর্য ধরার অনুরোধ জানিয়েছেন ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রী মতিউর রহমান।

ধর্ম মন্ত্রণালয়ের উপসচিব ফয়জুর রহমান ফারুকী বলেন, এক লাখ ১১ হাজার ১২ জন হজে যেতে ব্যাংকে টাকা জমা দিয়েছেন। কিন্তু এবার বাংলাদেশের হজযাত্রীর কোটা এক লাখ এক হাজার ৭৫৮ জন। অতিরিক্ত ৯ হাজার ২৫৪ জন হজে যেতে পারবেন না। অতিরিক্ত হজযাত্রী হওয়ার বিষয়ে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব হাসান জাহাঙ্গীর আলম বলেন, রেজিস্ট্রেশনের সফটওয়্যারটিতে কতোজন রেজিস্ট্রেশন হচ্ছে, কোটা পূরণে হয়েছে কি-না এ সব তথ্য প্রদর্শন করার কথা। কিন্তু তা হয়নি। আগামীতে এটিকে আরো ডেভেলপড করতে হবে।

ধর্ম সচিব চৌধুরী মো. বাবুল হাসান বলেন, হজ এজেন্সিগুলো জানিয়েছে কোটার অতিরিক্ত আরো প্রায় ৩০ হাজার হজে যেতে আবেদন করেছেন। এবার তারা হজে যেতে পারবেন না। কোটার চেয়ে আবেদনের সংখ্যা বেশি হওয়ার ঘটনা এটাই প্রথম।

তিনি বলেন, হজ এজেন্সিস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (হাব) নির্বাচন সামনে রেখে এজেন্সি মালিকদের দুটি পক্ষ জটিলতা সৃষ্টি করেছে। শুরুর দিকে এজেন্সিগুলো রেজিস্ট্রেশন করেনি। সর্বনিম্ন হজযাত্রীর কোটা ৫০ জন হলেও ১৩৯টি এজেন্সি এ কোটা পূরণ করতে পারেনি। ২২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৯১ হাজার ৯০৮ জন হজযাত্রী রেজিস্ট্রেশন করেছেন।

সচিব বলেন, কোটা অনুযায়ী সরকারি ব্যবস্থাপনায় ১০ হাজার ও বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ৯১ হাজার ৭৫৮ জন হজ করতে যেতে পারবেন। কিন্তু সরকারি ব্যবস্থাপনার ৭ হাজার হজযাত্রী বেসরকারি এজেন্সিগুলোর অনুকূলে দেয়া হয়েছে। ১ থেকে ৪৯ জন (সর্বনিম্ন কোটা পূরণ করতে না পারা) করে হজযাত্রী সংগ্রহ করা ১৩৯টি এজেন্সির তিন হাজার ৪৩৮ জন হজযাত্রী রয়েছে জানিয়ে বাবুল হাসান বলেন, মূলত সরকারি কোটার হজযাত্রী এনে এ এজেন্সিগুলোর কোটা পূরণ (৫০ জন) করা হবে।

ধর্মমন্ত্রী বলেন, বিগত কয়েক বছর ভালো হওয়া, সাধারণ মানুষের আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নতি, অধিক সংখ্যক এজেন্সি ও রেজিস্ট্রেশনের নতুন পদ্ধতিতে সরকারের ওপর বেশি আস্থা সৃষ্টি হওয়ায় এবার হজে যেতে নিয়তকারীর সংখ্যা বেড়েছে।

মক্কা শরিফের পবিত্র মসজিদুল হারামের ব্যাপক সংস্কার কাজ অব্যাহত থাকায় সৌদি সরকার হজ ও ওমরাহকারীদের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণে রাখছে। চলতি বছর হজ চুক্তি সভায় আমি কোটা বৃদ্ধির জন্য সুস্পষ্ট প্রস্তাব দিই। পৃথিবীর অন্য দেশ থেকে কোটা বৃদ্ধির প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। সৌদি সরকার কোনো দেশের কোটা বৃদ্ধি করেছে বলে আমার জানা নেই। ভারত, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, ইরানে দীর্ঘ ১৮ বছর পর্যন্ত লাখ লাখ মানুষ হজে যেতে রেজিস্ট্রেশন করে রেখেছে বলেন মতিউর রহমান।

তিনি বলেন, চলতি বছর হজে যাওয়ার নিয়ত করে যেসব মুসলমান ভাই-বোন ও মুরব্বিরা হজে যেতে পারবেন না, তাদের আমি ধৈর্য ধরার অনুরোধ জানাচ্ছি। আগামী বছরের হজে এদের (যারা যেতে পারছেন না) অগ্রাধিকার দিতে এজেন্সি মালিকদের প্রতিও অনুরোধ জানিয়েছেন ধর্মমন্ত্রী। ধর্মসচিব বলেন, হজ অফিসের পরিচালকের নেতৃত্বে রেজিস্ট্রেশনের কাজ চলছিলো। দেখা গেলো কোটার চেয়ে বেশি রেজিস্ট্রেশন হয়ে যাচ্ছে। তখন আমি এটা বন্ধের নির্দেশ দিই, ওই সময়ে আমি সৌদি আরবে ছিলাম। ইতোমধ্যে হজ অফিসের পরিচালককে উইথড্র করা হয়েছে।

সৌদি আরবে চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ২২ সেপ্টেম্বর (৯ জিলহজ ১৪৩৫ হিজরি) এ বছরের পবিত্র হজ অনুষ্ঠিত হবে। সৌদি আরব যাওয়ার ফ্লাইট শুরু হচ্ছে আগামী ১৬ আগস্ট। শেষ হবে ১৮ সেপ্টেম্বর। হজ শেষে ফিরতি ফ্লাইট ২৭ সেপ্টেম্বর শুরু হয়ে শেষ হবে ২৮ অক্টোবর। ৮ ডিসেম্বর মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সরকারি ব্যবস্থাপনায় প্যাকেজ-১’র মাধ্যমে হজ পালনে খরচ ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৫৪ হাজার ৭৪৫ টাকা। অপরদিকে সাশ্রয়ী প্যাকেজ-২-এর মাধ্যমে ২ লাখ ৯৬ হাজার ২০৬ টাকা খরচ হবে।

হজ প্যাকেজের একটি অংশ টাকা জমা দিয়ে হজযাত্রীরা ১ মার্চ পর্যন্ত নিবন্ধন কাজ সম্পন্ন করেন। সৌদি আরবের ইলেকট্রনিক হজ ব্যবস্থাপনার কারণে এবার কয়েক মাস আগে টাকা জমা ও নিবন্ধনের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। বিগত সময়ে হজ চুক্তির পর হজের টাকা জমা নেয়া হতো। এবার আগেই টাকা জমা ও নিবন্ধনের কাজ শেষ করা হচ্ছে।