তরমুজে ব্যবসায়ীদের কারসাজি : কেমিক্যাল আতঙ্ক

চুয়াডাঙ্গা-মেহেরপুর ও ঝিনাইদহসহ বিভিন্ন স্থানে বিক্রি হচ্ছে তরমুজ

 

স্টাফ রিপোর্টার: গ্রীষ্মের রসালো ফল তরমুজ। সুস্বাদু এ ফলটি গরমে মানুষের যেমন তৃষ্ণা মেটায় তেমনি আনে স্বস্তি। এই সুযোগে চুয়াডাঙ্গার যেখানে সেখানে তরমুজের পসরা সাজিয়ে বসেছেন অনেকেই। যেখানে ফল বিক্রির কথা নয়, সেখানেও বিক্রি হচ্ছে তরমুজ। চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর, ঝিনাইদহসহ সারাদেশেই হাত বাড়ালেই পাওয়া যাচ্ছে তরমুজ। তবে তরমুজের নামে মানুষ কী খাচ্ছে তা কেউই তলিয়ে দেখছে না। যে তরমুজের ভেতরটা যতো বেশি লাল তার চাহিদাও বেশি। এই সুযোগে তরমুজের ভেতরে লাল রঙ মেশানো হচ্ছে বলে ক্রেতা-ভোক্তাদের অভিযোগের অন্তু নেই। কেউ লোভনীয় এই ফল কিনে বাড়িতে নিয়ে গেলেও কাটার পর আর খেতে সাহস পাচ্ছেন না অনেকেই। আতঙ্ক, না জানি কী হয়! বিশেষ করে ঝিনাইদহে তরমুজ খেয়ে একই পরিবারের সাতজন অসুস্থ হওয়ার খবর প্রচার হওয়ার পর এ অবস্থা আরো জোরালো হয়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন জানান, ইদানীং চুয়াডাঙ্গা জেলার আনাচে কানাছে বিক্রি হচ্ছে তরমুজ। যার তরমুজ বেশি লাল, তার তারমুজের চাহিদা বেশি, দামও তুলনামূলক চড়া। তাই অধিক মুনাফা ও বেশি বিক্রির আশায় অসাধু ব্যবসায়ীরা তরমুজে ক্ষতিকর কিছু মেশাচ্ছে কি না, সে ব্যাপারে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তেমন কোনো ব্যবস্থা ও তদারকি চোখে পড়েনি। তবে ক্রেতাদের অভিযোগ, চুয়াডাঙ্গার অনেকে বিক্রেতাই অসদুপায় অবলম্বন করছেন বাড়তি লাভের আশায়। একজন ক্রেতা জানান, বাজার থেকে একটি তরমুজ কিনে বাড়িতে গিয়ে কাটার পর আর খাওয়া হয়নি। মনে হচ্ছে তরমুজের পানির সাথে রঙ বেরুচ্ছে। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ট্রাক ভর্তি করে চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর ও ঝিনাইদহসহ সারাদেশের বিভিন্ন বাজারে প্রবেশ করছে তরমুজ। মানুষের চাহিদার কথা বিবেচনা করে অসাধু ব্যবসায়ীরা করছে নানারকম কারসাজি। খাদ্যে ভেজাল মেশানো, ক্ষতিকর দ্রব্যের সাহায্যে খাদ্যদ্রব্য পাকানো, দীর্ঘদিন খাদ্যদ্রব্যকে সংরক্ষণ করতে ক্ষতিকারক ফরমালিন মেশানোর মতো জঘন্য কাজ দামি খাবারেই করা হয়, এ রকম বিশ্বাস ছিলো সাধারণ মানুষের। তরমুজের মতো সস্তা ফলে ক্ষতিকারক কোনো উপাদান মেশানো হয় না, এ বিশ্বাস এখন পুরোদমে ভাঙতে শুরু করেছে। মানুষের ভেতরের পশুবৃত্তি, আমাদের কোথায় নামিয়ে নিয়ে গেছে, তার উদাহরণ খাদ্যদ্রব্যে ক্ষতিকারক দ্রব্য মেশানোর মধ্য দিয়ে স্পষ্ট। তরমুজের মতো সহজলভ্য এবং আপাতদৃষ্টিতে বাজারের অন্য যে কোনো ফলের চেয়ে সস্তা ফলেও এখন দেদার মেশানো হচ্ছে জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকারক উপাদান। তরমুজকে পাকা এবং লাল দেখানোর জন্য মেশানো হচ্ছে বিপজ্জনক লাল রঙ ও মিষ্টি সেকারিন। ইনজেকশনের সিরিঞ্জের মাধ্যমে তরমুজ বোঁটা বা নিচের অংশ দিয়ে এসব দ্রব  পুশ করে তরমুজ পাকা ও লাল বলে বিক্রি হচ্ছে বলে অনেকের আশঙ্কা। ক্ষতিকারক দ্রব্য মেশানো এ ধরনের তরমুজ খেয়ে গত বছর কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে দু শিশুর মৃত্যু হয়। এরপর চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসন কঠোর নজরদারির সাথে বিষয়টি দেখলেও এবার তাদের তৎপরতা বা তদারকি চোখে পড়েনি। এবার এ বছরেও ঝিনাইদহে তরমুজ খেয়ে একই পরিবারের সাতজন গুরুতর অসুস্থ হয়েছে। এ খবর প্রকাশের পর চুয়াডাঙ্গার মানুষও তরমুজ কিনতে ভয় পেয়েছে। অনেকের ইচ্ছে থাকার পরও অজানা আতঙ্কে তরমুজ খেতে ভয় পাচ্ছে। তাই জোরালো দাবি উঠেছে, জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তরমুজের বাজার মনিটরিঙের।

অনেকেই জানান, তরমুজ যাতে সহজেই নষ্ট বা পচে না যায় সেকারণে কেমিক্যাল মেশানো হয়। সাথে এক প্রকার রঙ ও সেকারিন। এ কারণে তরমুজ হয়ে ওঠে টকটকে লাল এবং স্বাদেও তা হয় মিষ্টি। আর এ তরমুজগুলোই দোকানে ছুরি দিয়ে কেটে পাকা দেখিয়ে বেশি দাম আদায় করা হয়। চুয়াডাঙ্গা বড়বাজারের চৌরাস্তার মোড়স্থ কয়েকজন তরমুজ বিক্রেতার সাথে গতকাল কথা হয়। তারা জানান, চুয়াডাঙ্গায় বরিশাল থেকে তরমুজ আসে। তারা চুয়াডাঙ্গা রেলবাজারস্থ পাইকার বাজার থেকে কিনে বিক্রি করছেন। তরমুজের মধ্যে ক্ষতিকর কিছু মেশানো হয়ে থাকলে তারা এ ব্যাপারে কিছূই জানেন না। খাদ্যদ্রব্যে ক্ষতিকারক কীটনাশক, নিষিদ্ধ রঙ আর বিষাক্ত কেমিক্যাল মেশানোর ফলে কিডনি, লিভারের সমস্যা বাড়ার আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।

সূত্র জানায়, খাদ্যপণ্যে ভেজাল প্রতিরোধের মূল দায়িত্বে রয়েছে বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউট (বিএসটিআই)। এছাড়া সিটি করপোরেশন-পৌরসভার স্বাস্থ্য বিভাগ, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ, স্বাস্থ্য অধিদফতর, জেলা প্রশাসন, ৱ্যাব, পুলিশসহ ছয় মন্ত্রণালয়ের ১০টি বিভাগের প্রতি রয়েছে ভেজাল রোধে বিশেষ নির্দেশনা। কিন্তু এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সমন্বয় বলতে কিছুই নেই। যে কারণে মাঝে মধ্যে মোবাইল কোর্ট বা ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে টাকা জরিমানা আদায় করা হলেও নিশ্চিত করা যাচ্ছে না ভেজালমুক্ত খাদ্যপণ্য। তবে চুয়াডাঙ্গাসহ পার্শ্ববর্তী এলাকার মানুষ চায় জেলার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ মরসুমি ফল তরমুজে যাতে স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর কিছু মেশানো না হয় সে ব্যাপারে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হোক।

Leave a comment