চুয়াডাঙ্গা ভি.জে স্কুলের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার ও পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে হুইপ ছেলুন

স্কুলের হারানো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে হলে সবধরনের তদবির বন্ধ করতে হবে

 

রফিকুল ইসলাম: জাতীয় সংসদের হুইপ সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুন এমপি বলেছেন, ভি.জে স্কুলের হারানো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে হলে সবধরনের তদবির বন্ধ করতে হবে। বিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা থেকে শুরু করে ক্লাসের বার্ষিক পরীক্ষায় ফেলকরা ছাত্র-ছাত্রীদেরকে তদবিরে পাস করানোর কারণে পরবর্তীতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। তাই অভিভাবকদেরকে সন্তানের জন্য তদবিরের পরিবর্তে তাদের পড়াশোনার প্রতি খেয়াল রাখা জরুরি। গতকাল রোববাবর বিকেলে চুয়াডাঙ্গা ভি.জে সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে হুইপ সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার উপরোক্ত মন্তব্য করেন।

ভি.জে সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের সভাপতি জেলা প্রশাসক মো. দেলোয়ার হোসাইনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন প্রধান শিক্ষক নুর-ই আলম মোর্শেদা। বিশেষ অতিথি ছিলেন পুলিশ সুপার মো. রশীদুল হাসান, পৌর মেয়র রিয়াজুল ইসলাম জোয়ার্দ্দার ও জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মুন্সি আলমগীর হান্নান।

বিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র হুইপ ছেলুন স্মৃতি হাতড়ে বলেন, আমাদের সময়ে ছাত্রদেরকে কোনো প্রাইভেট পড়তে হতো না। ক্লাসেই শিক্ষকরা পড়া কমপ্লিট করে দিতেন। স্কুলের শিক্ষকরা আমাদের কাছে ছিলেন আদর্শ। এখনকার শিক্ষকরা ক্লাস ফাঁকি দিয়ে কোচিং আর প্রাইভেট পড়ানো নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। এটাই যদি শিক্ষকদের চরিত্র হয়, তাহলে তাদেরকে ছাত্ররা কিভাবে সম্মান দেখাবে?

হুইপ আরো বলেন, বেশ কয়েক বছর ধরে অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে স্কুলগুলোতে ছাত্র-ছাত্রীরা ঠিকমতো আসছে না। যারা আসছে, তাদের বেশির ভাগই টিফিনের ছুটিতে স্কুল থেকে পালিয়ে যাচ্ছে। এই চর্চা ঠেকাতে অনিয়মিত শিক্ষার্থীদের বাড়িতে অভিভাবকদের কাছে নোটিশ পাঠাতে হবে। স্কুলে আসার পর ছুটির আগে কেউ বাইরে যেতে পারবে না। জরুরি প্রয়োজন হলে লিখিত ছুটি নিতে হবে। স্কুলে ক্লাস চলাকালে অনেক শিক্ষক ক্লাস ফাঁকি দিয়ে বাড়িতে প্রাইভেট পড়ান ও কোচিং সেন্টারে সময় দেন। ওইসব শিক্ষকের তালিকা তৈরি করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

ভি.জে সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের মূল ফটক ভেঙে ফেলায় অসন্তোষ প্রকাশ করে হুইপ বলেন, কারা কী কারণে কার নির্দেশে ঐতিহ্যকে ধ্বংস করেছে আমার বোধগম্য নয়। বর্তমান গেটে তাকালে কেউ বুঝবে না বিদ্যালয়ের বয়স ১৩৫ বছর। বিদ্যালয়ের সাবেক ও বর্তমান ছাত্ররা পুনর্মিলনের দাবি জানিয়ে আসছে। আমি শিগগিরই সকল ছাত্রদেরকে সাথে নিয়ে পুনর্মিলনী উৎসবের ব্যবস্থা করবো। সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ের শতবর্ষ পূর্তি উৎসবে অনেক ছাত্রীকে বাদ দেয়া হলেও ভি.জে স্কুলের অনুষ্ঠানে একজনকেও বাদ দেয়া হবে না। দুটি সরকারি বিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মচারীর স্বল্পতাসহ চিহ্নিত সকল সমস্যার পর্যায়ক্রমে সমাধানের উদ্যোগ নেয়া হবে।

বিদ্যালয়ের সভাপতি জেলা প্রশাসক মো. দেলোয়ার হোসাইন বলেন, দুটি সরকারি বিদ্যালয়ে তদবিরে একজনকেও ভর্তি করা হয়নি। এর আগে যারা পেছনের দুয়ার দিয়ে ভর্তি হয়েছেন, তাদের জন্য বিদ্যালয়ের সুনাম নষ্ট হচ্ছে। বিদ্যালয়ের ঐতিহ্যের স্বার্থে সকল শিক্ষক মিলে প্রধান শিক্ষককে সহযোগিতা করবেন। যারা শিক্ষকতাকে চাকরি মনে করেন, তাদের শিক্ষকতা ছেড়ে দিয়ে অন্য পেশায় যাওয়া উচিত।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে পুলিশ সুপার রশীদুল হাসান বলেন, জিপিএ-৫ পাওয়ার অসুস্থ প্রতিযোগিতা থেকে বেরিয়ে এসে ছাত্রদেরকে প্রকৃত শিক্ষা নিতে হবে। বিল গেটস, ড. ইউনুস, ফজলে হাসান আবেদ পরীক্ষায় কখনও ফার্স্ট বা সেকেন্ড হননি। অথচ প্রকৃত শিক্ষায় শিক্ষিত হওয়ায় তারা আজ বিশ্ববরেণ্য।

বিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র পৌর মেয়র রিয়াজুল ইসলাম জোয়ার্দ্দার বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বলেন, এ বিদ্যালয়ের ছাত্ররা পড়াশোনায় শীর্ষস্থান ধরে রাখাসহ খেলাধুলায় বরাবরই প্রথম স্থান দখল করে রাখতো। ফুটবল, ভলিবল, বিতর্ক ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতায় সেরাদের সেরা ছিলো ভি.জে স্কুলের ছাত্ররা। ভি.জে স্কুলের স্টুডেন্ট মানেই স্মার্ট স্টুডেন্ট।

প্রধান শিক্ষক নুর-ই আলম মোর্শেদা বলেন, ভি.জে স্কুলে প্রয়োজন ৫০ জন শিক্ষক। আছেন ৩২ জন। আশা করি হুইপ এ শূন্যস্থান পূরণের উদ্যোগ নেবেন।

উল্লেখ্য, পুরস্কার বিতরণের আগে প্রধান ও বিশেষ অতিথিরা চোখ বেঁধে গ্লাসে পানি ঢেলা প্রতিযোগিতায় অংশ নেন। এতে হুইপ ছেলুন জোয়ার্দ্দার প্রথম, জেলা প্রশাসক দ্বিতীয় এবং পুলিশ সুপার তৃতীয় স্থান অর্জন করেন। এছাড়া বিদ্যালয়ের অভিভাবকদের জন্য বিশেষ প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। যাতে ছাত্রদের মায়েরা বাবাদেরকে শাড়ি পরিয়ে দেন। তবে ছাত্রদের অংশগ্রহণে যেমন খুশি তেমন সাজো প্রতিযোগিতা উপস্থিত অভিভাবক, দর্শক ও সুধীজনদের মন কাড়ে।