দক্ষ রাঁধনি হাড়ির সব ভাত তো আর টেপেন না

একটি উপজেলার ১৪টি ইউনিয়নের প্রতিবন্ধীদের ডেকে দুর্ভোগ অবশ্যই দুর্ভাগ্যজনক। যাচাই বাছাইয়ের নামে এটা অনেকটা তামাশা বটে। উপজেলার সকল প্রতিবন্ধীকে মাইকপ্রচারের মাধ্যমে তলবের সিদ্ধান্ত কি উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তার একক সিদ্ধান্ত? উপজেলা পরিষদের সদস্য তথা ইউপি চেয়ারম্যানদের অভিযোগ- সমাজসেবা কর্মকর্তার একক সিদ্ধান্তেই প্রতিবন্ধীদের অবর্ণনীয় দুর্ভোগের শিকার হতে হয়েছে। এটা শুধু অদুরদর্শিতাই নয়, ক্ষমতার অপব্যবহার বললেও বোধ করি ভুল বলা হয় না।

‌প্রতিবন্ধীদের তালিকা প্রণয়নে মাঠ পর্যায়ে জনপ্রনিধিরাই মূল দায়িত্ব পালন করে থাকেন। ইউনিয়ন পরিষদ সদস্যদের মাধ্যমে প্রস্তুতকৃত তালিকা উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা বিশ্বাস করতে পারেননি বলেই তিনি সকল প্রতিবন্ধীকে ডেকে যাচাই বাছাইয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। উপজেলায় কতোজন প্রতিবন্ধী তা পূর্বে প্রস্তুতকৃত তালিকা থেকেই তো অনুমান করা যায়। অতো সংখ্যক প্রতিবন্ধীদের দূর দূরান্ত থেকে ডেকে তাদের আপ্যায়ন দূরের কথা, ছায়ায় বসতেও যে দেয়া যাবে না, তা না বুঝে তিনি ডাকলেন কেন? তা ছাড়া যাচাই বাছাইয়ের জন্য তো সকলকে একযোগে না ডেকে নিজেও একটু কষ্ট করে দু এক স্থানে দু একটি কার্ডের সত্যতা যাচাই করতে পারতেন? দক্ষ রাঁধনি হাড়ির সব ভাত তো আর টেপেন না। দরকার শুধু আন্তরিক ইচ্ছে। তাতেও যদি উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা সন্দেহমুক্ত তথা আস্থা রাখতে না পারেন, তা হলে অঞ্চলভিত্তিক পর্যায়ক্রমেও তো যাচাই বাছাইয়ের কাজটি করতে পারতেন। একজন প্রতিবন্ধী মারা গেছেন, অর্ধশতাধিক আহত হয়েছেন। উপস্থিত অধিকাংশই ক্ষোভ নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন। অবর্ণনীয় দুর্ভোগের খবর পত্রিকায় গুরুত্বসহকারেই উঠে এসেছে। ভুক্তভোগীরাও ঘটনার তদন্তপূর্বক দোষীর শাস্তি দাবি করেছেন।

সকল ইউপি সদস্য শতভাগ স্বচ্ছ তালিকা প্রস্তুত করেন না। অনিয়মের অভিযোগ নতুন নয়। একটি অনিয়ম রুখতে গিয়ে আর একটি অন্যায়- অনিয়ম করা যায় না। তা ছাড়া যাচাই বাছাইয়ের নামে সকলকে ডেকে নিয়েও কি উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা অনিয়ম ধরতে পেরেছেন? খামখেয়ালি সিদ্ধান্তের খেসারত দিয়েছেন অসংখ্য প্রতিবন্ধী। তাদের নিয়ে এ ধরনের তামাশার কোনো মানে হয় না। একজনের মৃত্যুর পরও কি ঘটনাটিকে খাটো করে দেখা উচিত? অবশ্যই এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তপূর্বক উপযুক্ত ব্যবস্থা নেয়া দরকার।

Leave a comment