আলমডাঙ্গায় মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স পরিদর্শন শেষে মতবিনিময়কালে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ.ক.ম মোজাম্মেল হক

৪৪ বছর পর যখন যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হচ্ছে তখন পেট্রোলবোমা মেরে মানুষ হত্যারও বিচার বাংলার মাটিতেই হবে
আলমডাঙ্গা ব্যুরো: আলমডাঙ্গা উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সের নবনির্মিতব্য ভবন পরিদর্শন করলেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ.ক.ম মোজাম্মেল হক। একই দিনে তিনি আলমডাঙ্গার মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষ থেকে আয়োজিত মতবিনিময়কালে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
গতকাল বেলা ১১টার দিকে মন্ত্রী মোজাম্মেল হক নির্মাণাধীন আলমডাঙ্গা উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সের সামনে উপস্থিত হন। সেখানে পূর্ব থেকেই উপস্থিত ছিলেন জাতীয় সংসদের হুইপ সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুন এমপি। এ সময় হুইপকে সাথে নিয়ে মন্ত্রী মুক্তিযোদ্ধা সাংস্কৃতিক সংসদের শিল্পীদের সমবেত কণ্ঠে পরিবেশিত জাতীয় সঙ্গীতের তালে তালে আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন। তিনি হুইপকে সাথে নিয়ে নির্মাণাধীন মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবনটি ঘুরে ঘুরে দেখেন। পরে আলমডাঙ্গার মুক্তিযোদ্ধাদের আয়োজিত সভায় যোগ দেন তিনি। আলমডাঙ্গা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের কমান্ডার শফিউর রহমান সুলতান জোয়ার্দ্দারের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বক্তব্য দেন তিনি। এ সময় তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বর্তমানে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বাস্তবায়নের লক্ষ্যে নানা পরিকল্পনা হাতে নিয়েছেন। মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা ৩ হাজার ছিলো, ৫ হাজার করেছি। এবার প্রধানমন্ত্রী কথা দিয়েছেন, সেই ভাতা বাড়িয়ে ১০ হাজার করা হবে। শুধু ভাতা নয়, ২টা বোনাসও ইনশাআল্লাহ বাজেটের পর জুলাই থেকে দেয়া হবে। তিনি আরও বলেন, মুক্তিযোদ্ধাদের নামের পূর্বে বীর শব্দটি বলেন। কিন্তু তা রাষ্ট্রীয়ভাবে স্বীকৃতি পায়নি। সংসদে আইন করে বীর মুক্তিযোদ্ধা খেতাবটি পাস করা হবে। সারাদেশের সকল মুক্তিযোদ্ধাদের একই ডিজাইনে কবর বাঁধিয়ে দেয়া হবে। যাতে নির্দিষ্ট এ ডিজাইন দেখেই বলে দেয়া যাবে যে সেটি মুক্তিযোদ্ধার কবর। প্রধানমন্ত্রী কথা দিয়েছেন- যে সকল মুক্তিযোদ্ধার বাড়ি-ঘর নেই বাজেটে ২০ ভাগ টাকা বরাদ্ধ রেখে অস্বচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের ভবন নির্মাণ করে দেয়া হবে। সেটা হবে মুক্তিযোদ্ধা পল্লি।
তিনি আরও বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকহানাদার বাহিনি তাদের এদেশীয় দোসর জামায়াত নিরীহ মানুষ হত্যা করেছে। বাড়িঘর জ্বালিয়ে দিয়েছে। সেই ৭১’র পরাজিত শক্তি জামায়াতে ইসলামের অঘোষিত আমির খালেদা জিয়া দেশে আবারও অরাজকতা সৃষ্টি করছে। পেট্রোলবোমা মেরে নিরীহ মানুষ হত্যা করছে। এটা গণহত্যা। ৪৪ বছর পর যদি যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হয়, তাহলে এ গণহত্যারও বিচার এ বাংলার মাটিতে করা হবে।
এ সময় বিশেষ অতিথি থেকে বক্তব্য দিতে গিয়ে হুইপ সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুন বলেন, যে রাজাকারদের বিরুদ্ধে আমরা যুদ্ধ করেছি, যে রাজাকাররা এ বাংলার মাটিতে বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরলো, যারা মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করলো, যারা রাজাকার-আলবদরদের সাহায্য করলো, সেই রাজাকার-আল বদরদেরকে জিয়াউর রহমান এসে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় বসালেন। তিনি প্রশ্ন করেন- এটা কি অপমান না? এতো বড় অপমান বাংলার মাটিতে আর কেউ করে নেই। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস মুছে ফেলার জন্য তিনি সব রকম ষড়যন্ত্র করেছেন। পাঠ্যপুস্তক থেকেও ইতিহাস মুছে দেয়া হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর নাম মুছে দেয়া হয়েছে। ২১ বছর ধরে আওয়ামী লীগকে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার বাইরে রাখা হয়েছিলো। পরিকল্পিতভাবে তারা আমাদের বিরুদ্ধে, মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে, যারা প্রগতিশীল রাজনীতিতে বিশ্বাস করে তাদের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের বিরুদ্ধে, বঙ্গবন্ধুর ইতিহাসের বিরুদ্ধে পরিকল্পিতভাবে কাজ করেছে। একটা জেনারেশন গ্যাপ তৈরি করে দিয়েছে। যারা মুক্তিযোদ্ধা হয়েও রাজাকার আল বদরদের সাথে নিয়ে চলেন, তাদের দলের সাথে সংশ্লিষ্ট হওয়া ঠিক নয়। আবারও ৭১’র অশুভ শক্তি আমাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হচ্ছে, এ অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে আপনাদের সন্তানদের সচেতন করতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা তাদের মাঝে জাগ্রত করতে হবে।
বিশেষ অতিথি ছিলেন- জেলা প্রশাসক মো. দেলোয়ার হোসাইন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বেনজির আহমেদ, উপজেলা চেয়ারম্যান হেলাল উদ্দীন, পৌর মেয়র মীর মহি উদ্দিন, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হাসান কাদির গনু, জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আওরঙ্গজেব মোল্লা টিপু, বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা অ্যাড. আব্দুর রশিদ মোল্লা, জেলা জাসদের আহ্বায়ক বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা এম সবেদ আলী, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান কাজী অরুন, পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু মুসা, উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ইয়াকুব আলি মাস্টার। আলমডাঙ্গা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ডেপুটি কমান্ডার ওহিম উদ্দীনের উপস্থাপনায় উপস্থিত ছিলেন মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ডা. শাহাব উদ্দীন সাবু, উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান শামীম আরা, উপজেলা জাসদের সভাপতি গোলাম সরোয়ার, জেলা আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক কাইসার আহমেদ বাবলু, বঙ্গবন্ধু পরিষদের নেতা বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্দা আব্দুল গনি, এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী আশরাফুল ইসলাম, উপজেলা প্রকৌশলী সুপ্রিয় মুখার্জি, চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার কেএ মামুন উজ্জামান, বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা মঈনুদ্দীন আহমেদ, উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি প্রশান্ত অধিকারী, আওয়ামী লীগ নেতা আহসান মৃধা, আব্দুল হালিম, সমীর দে, আব্দুল হান্নান, রাজ্জাক, বিল্লাল গনি, মুন্নু, উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক আহসানউল্লাহ, পৌর যুবলীগের সম্পাদক আনোয়ার হোসেন সোনাহার, যুবলীগ নেতা ফারুক, ডিটু, পিন্টু, মিজান, বুলবুল, আবুল হাসনাত, সাবেক কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি সোহেল রানা শাহিন, উপজেলা ছাত্রলীগের সম্পাদক আলাল আহমেদ, কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি আরশাফুল হক, সম্পাদক সেলিম রেজা তপন, পৌর ছাত্রলীগের সভাপতি নয়ন সরকার, সম্পাদক তমাল, ছাত্রলীগ নেতা জাইদুল, কাফি, হাসান, রনি, সোহাগ প্রমুখ।