স্টাফ রিপোর্টার: ভোটকেন্দ্রে পোলিং অফিসারের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি চাইলেন ঢাকার একটি কলেজের দারোয়ান, নৈশপ্রহরী, মালি, সুইপার, আয়া, পিয়ন ও ঝাড়ুদার। ভোটগ্রহণের অভিজ্ঞতা না থাকায় বিব্রত হয়ে তারা এ দায়িত্ব পালনে অপারগতা জানান। বিষয়টি গণমাধ্যমে প্রকাশ পাওয়ায় তড়িঘড়ি করে তাদের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
ইসি সূত্রে জানা যায়, আসন্ন ঢাকা উত্তর সিটি নির্বাচনে মিরপুরের শাহ আলী মহিলা স্কুল অ্যান্ড কলেজের ৫৩জন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে পোলিং অফিসার হিসাবে নিয়োগ দেয়া হয়। এর মধ্যে ১১ জন ছিলেন প্রতিষ্ঠানের দারোয়ান, নৈশপ্রহরী, মালী, সুইপার, আয়া, পিয়ন ও ঝাড়ুদার। তারা হলেন- মো. শাহজাহান (দারোয়ান), মো. শুক্কুর আলী (দারোয়ান), মো. মোজাম্মেল হক (দারোয়ান), মো. জামাল (নৈশপ্রহরী), মো. শামসুল হক (দারোয়ান), মো. একরামুল হক (মালি), মো. কবীর হোসেন (সুইপার), পারুল আক্তার (আয়া), মনোয়ারা বেগম (পিয়ন), দেলোয়ারা খাতুন (ঝাড়ুদার) ও রুনা আক্তার (ঝাড়ুদার)। নির্বাচনী কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পাওয়ার পর ওই কর্মীরা নিজেরাই বিব্রত হয়ে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি চেয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তা বরাবর আবেদন করেন। পরে বিষয়টি গণমাধ্যমের নজরে এলে তড়িঘড়ি করে বৃহস্পতিবার রাতে তাদের অব্যাহতি দেয়া হয়।
বিষয়টি নিশ্চিত করে শাহ আলী মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ ময়েজ উদ্দিন বলেন, আমার কলেজের ৬৪ জন জনবলের মধ্যে ৫৩ জনকে নির্বাচনে পোলিং অফিসার হিসাবে নিয়োগ দেয়া হয়েছিলো। এর মধ্যে ১১ জন ছিলেন চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী। গত বৃহস্পতিবার রাতে ১২ জনকে বাদ দিয়ে নতুন একটি চিঠি আমার কাছে এসেছে। নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা যায়, রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে পাঠানো চিঠিতে কয়েকজনকে মিরপুরের পাইকপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে পোলিং অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালনের জন্য বলা হয়। তবে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি চেয়ে নিজেদের দারোয়ান, নৈশপ্রহরী, মালী, সুইপার, আয়া, পিয়ন ও ঝাড়ুদার পরিচয় দিয়ে স্বাক্ষরসহ আবেদন করেন তারা। নিজেদের শুধু অক্ষরজ্ঞানসম্পন্ন দাবি করে নির্বাচনের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি পেতে বৃহস্পতিবার ঢাকা উত্তরের রিটার্নিং কর্মকর্তা ও নির্বাচন কমিশনে দৌড়ঝাঁপ করেন ওই ১১ জন। এ আবেদনের অনুলিপি কমিশনে এসে জমা দেয়ার চেষ্টা করলে তা নেয়নি কমিশনের সংশ্লিষ্ট শাখা। তাদের আবেদন বিবেচনায় নিতে সুপারিশ করেন কলেজের অধ্যক্ষ ময়েজ উদ্দিন। আবেদনের ওপর তিনি লিখেন, আবেদনকারীদের অক্ষরজ্ঞান কম। দায়িত্ব পালনে শুধু কালির ব্যবহার ছাড়া অন্য কাজ করানো কষ্টকর হবে।
আগামী ২৮ এপ্রিল সিটি করপোরেশনের ভোট সামনে রেখে এরই মধ্যে ঢাকা উত্তর, দক্ষিণ ও চট্টগ্রামে ভোট গ্রহণ কর্মকর্তা প্রিজাইডিং, সহকারী প্রিজাইডিং ও পোলিং অফিসারদের প্যানেল চূড়ান্ত করা হয়েছে। ভোট গ্রহণে প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে একজন প্রিজাইডিং ও একজন সহকারী প্রিজাইডিং অফিসারের সঙ্গে পোলিং অফিসাররা থাকেন। কেন্দ্রের সার্বিক কার্যক্রম তদারক করেন প্রিজাইডিং অফিসার, তাকে সহায়তা করেন সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার। আর প্রতিটি বুথে থাকেন দুজন করে পোলিং অফিসার, যারা জাল ভোট ঠেকাতে ভোটারের ছবিসহ যাবতীয় তথ্য যাচাই, যথাযথভাবে ভোট গ্রহণ, ভোটের হিসাবসহ বুথের সার্বিক দায়িত্ব পালন করেন। সিটি করপোরেশন নির্বাচন বিধিমালার বিধি ৮ অনুযায়ী-রিটার্নিং কর্মকর্তা নির্বাচনের জন্য পোলিং কর্মকর্তার প্যানেল প্রস্তুতের জন্য সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী সিটি করপোরেশন এলাকার সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা, সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানদের, তাদের প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত কর্মকর্তা-কর্মচারীর তালিকা পাঠাতে অনুরোধ করে থাকেন। রিটার্নিং কর্মকর্তা সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান প্রধানের পাঠানো তালিকা থেকে প্যানেল প্রস্তুত করে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চাকরি কমিশনের অধীনে নিয়োগ করার জন্য প্রতিষ্ঠান প্রধানদের লিখিতভাবে অনুরোধ করেন এবং তার একটি কপি নির্বাচন কমিশনে পাঠান। এই বিধি মোতাবেক রাজধানীর হজরত শাহ আলী মহিলা কলেজের অধ্যক্ষের কাছে তার প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা ও কর্মচারীর তালিকা চেয়ে অনুরোধ করেন রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. শাহ আলম। অধ্যক্ষ তালিকা পাঠালে ঝাড়ুদার, মালী, দারোয়ানকে পোলিং কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। তাদের দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল মিরপুরের পাইকপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। এ কেন্দ্রে ভোটার সংখ্যা হচ্ছে ২ হাজার ২৭৭ জন। শেষ পর্যন্ত শুক্রবার বিকালে আগারগাঁওয়ের কার্যালয়ে ঢাকা উত্তরের রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. শাহ আলম ওই ১১ জনকে বাদ দেয়ার বিষয়টি সাংবাদিকদের জানান। তিনি বলেন, একজন শিক্ষকের সঙ্গে চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী যাবে কিনা- আমরা এটা মেনটেইন করি। প্রতিষ্ঠান থেকে পাঠানো তালিকায় সংশ্লিষ্টদের পদবি ছিল না। এটা প্রতিষ্ঠানের ভুল। চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের বাদ দিয়েছি এবং উনাকে শোকজ নোটিশ দিচ্ছি। বিড়ম্বনার কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে শাহ আলম বলেন, সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান সম্ভাব্য ভোট গ্রহণ কর্মকর্তাদের তালিকা পাঠায়। আমরা সিডি থেকে কপি করে পেস্ট করে দিই। সে হিসেবে কপিটা চলে গেছে। আমি যখনই জেনেছি সঙ্গে সঙ্গে বাতিল করে দিয়েছি। তাদের পরিবর্তে নতুন করে শিক্ষক নিয়োগ দিয়েছি। উল্লেখ্য, এর আগে সংসদ সচিবালয়ের কর্মকর্তাদের নির্বাচনী কাজে দায়িত্ব দেয়ার জন্য তালিকা চেয়ে চিঠি দিয়েছিলেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের রিটার্নিং কর্মকর্তা মিহির সারওয়ার মোরশেদ। এর আগে কোন নির্বাচনে সংসদ সচিবালয়ের কর্মকর্তাদের নির্বাচনী কাজে অংশ নেয়ার নজির নেই।