বাংলাদেশের জনশক্তি রপ্তানিতে সুখবর

 

বাংলাদেশের জন্য এক সময়ের সবচেয়ে বড় শ্রমবাজার ছিলো সৌদি আরব। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকা সেই শ্রমবাজার আবার নতুন করে খুলতে যাচ্ছে- এ সুখবর পাওয়া গিয়েছিলো গত ফেব্রুয়ারি মাসেই। এরপর থেকে কেবলই অপেক্ষার পালা। কবে খুলবে সেই বাজার, যেখানে বাংলাদেশের জনশক্তি নিজেদের শ্রম ও দক্ষতার বিনিময়ে উপার্জন করবে বৈদেশিক মুদ্রা। সব অপেক্ষা শেষ। গত মাসেই একটি সমন্বিত চুক্তি হয়েছে সৌদি আরব ও বাংলাদেশের মধ্যে। এ চুক্তির ভেতর দিয়ে মালিক ও শ্রমিক উভয় পক্ষের অধিকার সংরক্ষিত হয়েছে; যে চুক্তিতে বলা আছে, বাংলাদেশের কর্মীদের অবশ্যই সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হতে হবে। কখনো কোনো অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হওয়া চলবে না। থাকতে হবে পেশাগত প্রশিক্ষণ।

১৯৭৬ সাল থেকে সৌদি আরবে জনশক্তি রপ্তানি শুরু হয়। ২০০৮ সাল পর্যন্ত সেখানে ২৫ লাখ ৫৮ হাজার ৪৬৩ জন বাংলাদেশি নাগরিকের কর্মসংস্থানের সুযোগ হয়েছে। এর আগে একটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, শেষের দিকে সেখানে প্রতি বছর গড়ে দেড় থেকে দু লাখ কর্মী গেছেন। এখনো সেখানে প্রায় ২০ লাখের বেশি কর্মী রয়েছেন। কিন্তু দুঃখজনকভাবে ২০০৮ সালে ভিসা দেয়া বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সেখানে আর কর্মী পাঠানো সম্ভব হয়নি। কিন্তু এ সম্ভাবনা নতুন করে দেখা দেয় ২০০৯ সাল থেকে। তখন থেকেই সরকার নতুন করে ভিসার জন্য চেষ্টা শুরু করে। সরকারের চেষ্টার ফলেই সৌদি শ্রমবাজার নতুন করে খুলে যাওয়ার ইঙ্গিত পাওয়া যায় গত ফেব্রুয়ারি মাসে। সরকারের ব্যবস্থাপনায় এবার ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা খরচ করে সেখানে কর্মী পাঠানো সম্ভব হবে। এ ছাড়া ভিসা প্রক্রিয়া, মেডিকেল ফি, কর্মীর বিমানের টিকেট- সবই দেবে নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ। এটাও নতুন এক দিগন্ত খুলে দিচ্ছে। এখন অল্প খরচে সৌদি আরবে কর্মসংস্থানের সুযোগ পাওয়া যাচ্ছে। বিদেশে পাড়ি দেয়ার জন্য ভিটেমাটি বিক্রি-বন্ধকের গল্প নতুন করে আর শুনতে হবে না বলে আশা করা যায়। একই সাথে প্রতারিত হওয়ার আশঙ্কাও আর থাকবে না। দু দেশের সরকারের বোঝাপড়ায় সরকারি পর্যায়ে সৌদি আরবে জনশক্তি রপ্তানি করা গেলে দরিদ্র মানুষের জন্যও সেটা আশীর্বাদ হবে। সরকার ইচ্ছা করলে যে কম খরচে বিদেশে জনশক্তি রপ্তানি করতে পারে, তা এরই মধ্যে প্রমাণিত হয়েছে।

শ্রম ও প্রবাসীকল্যাণমন্ত্রী অনেক আগেই জানিয়েছেন, মালয়েশিয়ার জন্য রেজিস্ট্রেশন করা কর্মীরাও সৌদি আরবে যেতে পারবেন। এটাও আমাদের জনশক্তির জন্য বড় সুখবর। এখন প্রয়োজন সবকিছু ঠিকমতো দেখাশোনা করা। সবকিছু ঠিক থাকলে সৌদি আরবের ছয়টি মেগাসিটি ও বাংলাদেশিদের পরিচালিত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বাংলাদেশের কর্মীদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হবে। এ সৌদি বাজারকে আমাদের ধরে রাখতে হবে। আমরা আশা করবো, সেখানে গিয়ে বাংলাদেশের নাগরিকরা কোনো রকম অপরাধমূলক কাজে জড়িয়ে পড়বেন না। পাশাপাশি কর্মীরা কোনো রকম প্রতারণার শিকার হবেন না, এ বিষয়টিও নিশ্চিত করতে হবে। ২০ এপ্রিল থেকে নতুন করে যে সৌদি ভিসা দেয়া শুরু হচ্ছে, তা অব্যাহত থাকবে বলে আমাদের বিশ্বাস।

Leave a comment