হুমকির মুখে মুক্তিযুদ্ধের ঐতিহাসিক মুজিবনগর আম্রকানন

মুজিবনগর প্রতিনিধি: মুজিবনগর আম্রকানন। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে প্রথম সরকারের শপথ গ্রহণের এ ঐতিহাসিক স্থানটিতে কালের সাক্ষী হয়ে এখনো দাঁড়িয়ে আছে প্রাচীন আমগাছগুলো। কর্তৃপক্ষের অযত্ন-অবহেলা সেই সাথে প্রায় শত বছর বয়স হয়ে যাওয়ায় এ আমবাগানের বর্তমান অবস্থা খুবই নাজুক। গাছ পরিচর্যায় কোনো পদক্ষেপ না থাকায় বাগান বিলীন হওয়ার আশঙ্কা করছে এলাকাবাসী।

১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল মেহেরপুরের বৈদ্যনাথতলা তথা মুজিবনগর আম্রকাননে বাংলাদেশের প্রথম অস্থায়ী সরকারের মন্ত্রী পরিষদ সদস্যরা শপথ গ্রহণ করেন। স্বাধীনতার পর থেকেই বাগানটি ঐতিহাসিক দর্শনীয় স্থান হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। দেশ-বিদেশের দর্শনার্থী থেকে শুরু করে স্থানীয় মানুষ বারবার ছুটে যান আম্রকাননের অপার সৌন্দর্য উপভোগ করতে। উৎসবের দিনগুলোতে দেখা মেলে হাজারো দর্শনার্থীর। সারিবদ্ধ আমগাছ দেখলে যেকোনো মানুষের দু চোখ জুড়িয়ে যায়। শপথের সেই সময় থেকে মাঝখানে কেটে গেছে ৪৪টি বছর। সেই সময় আম গাছগুলোর বয়স ছিলো পঞ্চায়োর্দ্ধ। এখন একেকটি গাছের বয়স প্রায় শত বছর। মুজিবনগর উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যারয়ের হিসেবে মতে, বর্তমানে কয়েক প্রজাতির ছোট বড় ১ হাজার ৪৫টি আমগাছ রয়েছে। মারা গেছে অসংখ্য গাছ। জীবিত গাছগুলোর বেশির ভাগ অবস্থা জরাজীর্ণ রোগাক্রান্ত। গাছের বিভিন্ন স্থান দখল করেছে আগাছা। স্থানীয় প্রশাসন প্রতি বছর ৬-৭ লাখ টাকায় ফল বিক্রি করে। কিন্তু পরিচর্যা করে না। প্রতি বছর ১৭ এপ্রিল মুজিবনগর দিবস উপলক্ষে বাগান ঝাড়ু দেয়া ছাড়া কোনো পরিচর্যা হয় না। সারাবছর ধরে বাগানের কোনো খোঁজ থাকে না। ফলে ঐতিহ্য হারাতে বসেছে মুক্তিযুদ্ধের গৌরব গাঁথা ইতিহাসের সাক্ষী এ আম্রকাননটি।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, শুধু ইতিহাসের সাক্ষী নয় এলাকার পরিবেশের ভারসম্য রক্ষায় এ বাগানের গুরুত্ব অপরিসীম। শতবর্ষী গাছগুলো ছায়া ও ফলদানের পাশাপাশি পরিবেশ রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছে। তাই যথাযথ পরিচর্যায় বাগানের প্রাণ ফিরিয়ে আনার দাবি জানালেন স্থানীয় মানুষ ও দর্শনার্থীরা।

স্থানীয়রা আরো জানান, মাঝেমধ্যেই আমগাছ মারা যায়। বেঁচে থাকা গাছগুলো রোগাক্রান্ত এবং আগাছায় আবৃত। শুষ্ক মরসুমে এখানে পর্যাপ্ত সেচ দেয়া জরুরি। কিন্তু সেচ কিংবা সার কোনো কিছুই প্রয়োগ করা হয়না। চলতি মরসুমে জেলা প্রশাসনের রাজস্ব শাখা থেকে ৭ লাখ টাকা ফল ইজারা দেয়া হয়েছে। দেশ বিভাগের পর থেকেই আম বাগানটি খাস খতিয়ানে চলে আসে। তখন থেকেই বাগানটি সরকারিভাবে লিজ দেয়া হয়। কিন্তু অদ্যবধি বাগান পরিচর্যা কিংবা নতুন গাছ রোপণের কোনো উদ্যোগ নেয়নি জেলা কিংবা উপজেলা প্রশাসন। তাই বিলীন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের ইতিহাসের সাক্ষী।

মেহেরপুর জেলা প্রশাসক মাহমুদ হোসেন জানান, স্থানীয়ভাবে কিছু পরিচর্যা করা হয়ে থাকে। গাছ ও বাগানের জীর্ণদশা স্বীকার করে তিনি জানান, বাগান রক্ষায় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। জেলা প্রশাসন ও কৃষি বিভাগের কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে গঠিত কমিটি বাগান রক্ষার বিষয়ে দ্রুততম সময়ে একটি প্রতিবেদন জেলা প্রশাসকের কাছে প্রেরণ করবেন। ওই সুপারিশ অনুযায়ী ব্যবস্থ গ্রহণের আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

এদিকে জাতীয় এ সম্পদ রক্ষায় শুধু জেলা প্রশাসন নয় উদ্ভিদ বিজ্ঞানী ও সরকারের উচ্চ মহলের সহযোগিতা চাইলেন মেহেরপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য ফরহাদ হোসেন দোদুল।