পদে পদে জীবন ঝুঁকির আড়ালে অনিয়ম আর উদাসীনতা

কতোটা ভয়াবহ ঝুঁকির মধ্যে রয়েছি আমরা তা- চুয়াডাঙ্গা জেলা শহরের প্রাণকেন্দ্রের প্রধান সড়কের ওপর উচ্চক্ষমতার বিদ্যুত সঞ্চালন তার ছিঁড়ে পড়া দেখে অনুমান করতে কষ্ট হওয়ার কথা নয়। কিন্তু এরকম তো হওয়ার কথা নয়!

রাজধানী ঢাকার রামপুরায় সরকারি খাসজমির ঝিলপাড় দখল করে গড়ে তোলা টিনের দোতলা দেবে গিয়ে হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। ঘটনার দিন ১১ জনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। পরদিন তথা গতকাল বৃহস্পতিবার উদ্ধার করা হয়েছে আরো ১ শিশুর মৃতদেহ। স্থানীয়দের আশঙ্কা, দেবে যাওয়া টিনের ঘরের মধ্যে আরো অনেক মৃতদেহ রয়েছে। তারাই প্রশ্ন তুলে বলেছেন, অবৈধ দখলদার ক্ষমতাসীনদলের একটি অঙ্গসংগঠনের নেতা। ঘটনার পর থেকে তিনি আত্মগোপন করেছেন বলে পুলিশের দাবি। সঙ্গত কারণেই প্রশ্ন, ওই টিনের দোতলা তো আর একদিনে বা রাতারাতি গড়ে তোলেনি। অবৈধভাবে সরকারি জমি দখল করে অবৈধভাবে স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে যখন, তখন প্রশাসন কোথায় ছিলো? একইভাবে চুয়াডাঙ্গা জেলা সদরের দোস্ত বাজার চিত্রা নদীর ব্রিজের সাথে গড়ে তোলা হচ্ছে অবৈধ স্থাপনা। পত্রিকায় সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশের পরও সেদিকে প্রশাসনের তেমন নজর পড়েছে বলে মনে হয়নি।

ক্ষমতার দাপটে যে প্রশাসন আইন প্রয়োগ করতে অক্ষমতা দেখায় সে প্রশাসন দিয়ে আর যাই হোক আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়। চুয়াডাঙ্গার শহীদ আবুল কাশেম সড়কের দুটি তারের সংস্পর্শে বিস্ফোরণে উচ্চক্ষমতার বৈদ্যুতিক তার ছিঁড়ে পড়ার ঘটনাটি আকাশ ভেঙে পড়ার মতোই নয় কি? ভাগ্যিস প্রাণহানি ঘটেনি। বিদ্যুত কর্তারা যদি বিদ্যুত সঞ্চালনের লাইনগুলো যথাযথভাবে পর্যবেক্ষণ করতেন তা হলে অবশ্যই বৈদ্যুতিক খুঁটিকে অবৈধভাবে অন্য বাণিজ্যিক কাজে কেউ ব্যবহার করতে পারতেন না। বিদ্যুত সঞ্চালন লাইনের দুটি তার সংযুক্ত হয়ে বিস্ফোরণের মতো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাও ঘটতো না। তা ছাড়া মরসুম ভিত্তিক বিদ্যুত সঞ্চালন তারগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বরাদ্দও দেয়া হয়। সে বরাদ্দের অর্থ যথাযথভাবে কাজে লাগানো হলে তারের ওপর ওভাবে ঝুঁকে থাকতো না গাছের ডালপালা। সামান্য ঝড়েই ফল্ট সমস্যা অতোটা প্রকট হতো না। ক্রেনই হোক, আর ট্রাকই হোক তার ধাক্কায়ও ওভাবে তার ছিঁড়ে পড়তো কি?

টিনের দোতলা নির্মাণের সুযোগ দাতাদেরসহ অবৈধ স্থাপনা নির্মাণকারীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা দরকার। একই সাথে দরকার বিদ্যুত সঞ্চালন লাইন নিরাপদ করা। দুর্ঘটনার পরে নয়- দুর্ঘটনার আগেই ব্যবস্থা নেয়া জরুরি।

পুনশ্চঃ সর্বক্ষেত্রে আইনের যথাযথ প্রয়োগই পারে দুর্ঘটনা রোধে দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে।