তরুণীদের আর্তচিৎকার বাঁচাও বাঁচাও

বর্ষবরণে টিএসসিতে বখাটেদের থাবা

স্টাফ রিপোর্টার: সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, টিএসসি ও শাহবাগ জুড়ে বর্ষবরণ উৎসব। হাজার হাজার তরুণ-তরুণী যোগ দেন এতে। এরই মধ্যে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানসংলগ্ন টিএসসিতে প্রকাশ্যে একদল বখাটের অশ্লীল আক্রমণের শিকার হন নারীরা। কিশোরী থেকে মধ্যবয়সী কেউই রেহাই পাননি এদের হাত থেকে। দেড় ঘণ্টাব্যাপি চলে বখাটেদের নগ্ন উল্লাস। এ সময় আক্রমণের শিকার তরুণীরা বাঁচাও বাঁচাও বলে চিৎকার করলেও কেউ এগিয়ে আসেনি তাদের সাহায্যে। অথচ পাশেই দাঁড়িয়ে থাকা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ছিলেন নিষ্ক্রিয়। তারা কেউ এগিয়ে যাননি। এমনকি পাঁচ বখাটেকে পুলিশের হাতে তুলে দেয়ার পরও ছেড়ে দেয়া হয়। তাৎক্ষণিক বিষয়টি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরকে জানানো হলেও তিনি কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি বলে প্রত্যক্ষদর্শীদের অভিযোগ। নির্যাতিতাদের উদ্ধার করতে গিয়ে গুরুতর আহত হয়েছেন ছাত্র ইউনিয়নের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতিসহ কয়েকজন।

গত মঙ্গলবার বাংলা নতুন বছরকে বরণ উৎসব উপলক্ষে তিল ধারণের ঠাঁই ছিলো না টিএসসি, সোহরওয়ার্দী উদ্যানসহ আশপাশের এলাকায়। এ সুযোগে রাজু ভাস্কর্যের উত্তর দিকে সোহরওয়ার্দী উদ্যানের ফটকের পাশে একের পর এক বস্ত্র হরণের প্রতিযোগিতা শুরু করে বখাটেরা। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, তিনটি গ্রুপে বিভক্ত ছিলো তারা। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের নির্দেশে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ওই ফটকটি ভেতর থেকে বাইরে আসার জন্য ব্যবহৃত হচ্ছিলো। বখাটেদের তিনটি গ্রুপই ওই ফটকের পাশে অবস্থান নিয়ে অসভ্যতায় মেতে ওঠে। নির্যাতিতাদের উদ্ধার করতে গিয়ে গুরুতর আহত ছাত্র ইউনিয়নের ঢাবির সভাপতি লিটন নন্দী জানান, তিনি ও সংগঠনের মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদক সুজন সেনগুপ্ত ও রমনা থানার সাধারণ সম্পাদক অমিত দে শাহবাগ থেকে টিএসসিতে যাচ্ছিলেন। ওই সময় নারী কণ্ঠের চিৎকার শুনে তারা ঘটনাস্থলে যান। সেখানে এক তরুণীকে ঘিরে উল্লাস করছিলো এক দল বখাটে। ইতোমধ্যে ওই তরুণীর শাড়ি-ব্লাউজসহ পরনের সব পোশাক টেনে ছিঁড়ে খুলে ফেলে বখাটেরা। যৌন লালসা পূরণের জন্য বিবস্ত্র তরুণীকে নির্যাতন করতে থাকে তারা।

লিটন নন্দী বলেন, মনে হচ্ছিলো মানুষ না। যেন হায়েনারা ঝাঁপিয়ে পড়েছে নারীদের ওপর। তিনি জানান, ওই বিবস্ত্র তরুণীর সঙ্গী যুবক তাকে জড়িয়ে ধরে রক্ষা করার চেষ্টা করছিলেন। এতে ওই যুবকের প্রতি ক্ষুব্ধ হয়ে তাকে মারধর করতে থাকে তারা। যুবক ও ওই তরুণী বাঁচাও বাঁচাও বলে চিৎকার করছিলেন। এর মধ্যেই ভিড় ঠেলে বিবস্ত্র তরুণীকে উদ্ধারের আপ্রাণ চেষ্টা করেন ছাত্র ইউনিয়নের তিন নেতা। পরনের পাঞ্জাবি খুলে বিবস্ত্র তরুণীকে পরিয়ে দেন লিটন নন্দী। তরুণীকে উদ্ধার করে নিয়ে আনতে গেলে প্রতিবন্ধকতা শুরু করে বখাটেরা। ওই তরুণীকে নিয়ে দু পক্ষের মধ্যে টানাটানি শুরু হয়। একপর্যায়ে ওই তরুণী ও তার সঙ্গী যুবককে উদ্ধার করে রিকশায় তোলে দেন লিটন ও তার সঙ্গীরা। রিকশাটি ধানমণ্ডির শঙ্কর এলাকায় তাদের পৌঁছে দেয়।