ঝড়ে লণ্ডভণ্ড বিদ্যুত ব্যবস্থা : শৈলকুপায় ৩০ গ্রামে ১০ দিন ধরে বিদ্যুত নেই : কৃষকের ধানক্ষেতে সেচ বন্ধ

শাহনেওয়াজ খান সুমন: মৌকুড়ি গ্রামের বাবুল আক্তারের ২৫ বিঘা জমির বোরো ধানক্ষেতে সেচ দিতে পাচ্ছেন না। এলাকায় বিদ্যুত না থাকায় সেচযন্ত্র বন্ধ হয়ে আছে। আর সেচের অভাবে ধানক্ষেত শুকিয়ে যাচ্ছে। এতে ফলন কম হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। একই অবস্থা ছোট-মৌকুড়ি গ্রামের হাফিজুল ইসলামের। তার দু বিঘা জমির ধানক্ষেত শুকিয়ে গেছে। সেচ দেয়ার কোনো সুযোগ নেই। পার্শ্ববর্তী সারুটিয়া গ্রামের নজরুল ইসলামের পাঁচ বিঘা জমির ধানক্ষেত নষ্ট হচ্ছে সেচের অভাবে। আর এইসএসসি পরীক্ষার্থীরা বিদ্যুতের অভাবে ঠিকমতো পড়ালেখা করতে পারছে না। এ অবস্থা গত ১০ দিনের। ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার দুটি ইউনিয়নের ৩০ গ্রামে কোনো বিদ্যুত নেই। ফলে এলাকার সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা মারাত্মক ব্যাহত হচ্ছে।

গত ৬ এপ্রিল প্রচণ্ড ঝড়ে লণ্ডভণ্ড হয়ে যায় শৈলকুপার বেশ কিছু অঞ্চল। তার মধ্যে ৫ নম্বর কাঁচেরকোল ও ৬ নম্বর সারুটিয়া ইউনিয়নের বিদ্যুত ব্যবস্থা ভেঙে পড়ে। এ দুটি ইউনিয়নের ৩৫টি গ্রামই বিদ্যুত বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। সাধারণ মানুষের নানা সমস্যা সৃষ্টি হয়।

সারুটিয়া গ্রামের আকিমুল ইসলাম জানান, বিদ্যুত বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ায় সবচে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়েন কৃষকরা। তাদের ধানের জমিতে সেচ দেয়া বন্ধ হয়ে যায়। তিনি জানান, এখন বোরো ধানের জমিতে প্রতিদিন সেচ দিতে হয়। না হলে দ্রুত জমি শুকিয়ে গেলে ধানের ফলন কমে যায়। তার নিজেরও ৩ বিঘা জমিতে বোরো ধান রয়েছে বলে জানান। এখন বিদ্যুতের অভাবে চাষ দিতে পারছেন না। মৌকুড়ি গ্রামের বাবুল আক্তার জানান, ২৫ বিঘা জমির ধান বিদ্যুতের জন্য নষ্ট হয়ে গেলে তারা মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়বেন। সারুটিয়া ইউনিয়নের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মসলেহ উদ্দিন তুহিন জানান, দুটি ইউনিয়নে প্রায় দু হাজার হেক্টর জমিতে বোরো ধানচাষ রয়েছে। যা পানির অভাবে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

সারুটিয়া ইউপি চেয়ারম্যান মাহমুদুল হাসান মামুন জানান, তার ইউনিয়নে ২১টি গ্রামের কোনো গ্রামেই বিদ্যুত ব্যবস্থা ফিরে আসেনি। গত এক ১০ দিন ধরে সবগুলো গ্রামেই বিদ্যুত নেই। ঝড়ে বিদ্যুত লাইনের অনেকগুলো পোল ভেঙে পড়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে চাড়াবান্দের বিল এলাকায় বেশি পোল ভেঙে পড়েছে। কিন্তু সংশ্লিষ্ট বিভাগ আজো বিদ্যুত লাইন চালু করতে পারেনি। এর কারণে কৃষকের পাশাপাশি এইচএসসি পরীক্ষার্থীরাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। কাঁচেরকোল ইউপি চেয়ারম্যান মামুন জোয়ার্দ্দার জানান, তার ইউনিয়নের ১৪টি গ্রামের মধ্যে ৬টি গ্রামে বিদ্যুত চালু করতে পেরেছে কর্তৃপক্ষ। এখনও ৮টি গ্রামে বিদ্যুত নেই।

এ ব্যাপারে পল্লী বিদ্যুত বিভাগের শৈলকুপা জোনাল অফিসের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার রবিউল হক জানান, তারা দ্রুত কাজ করে যাচ্ছেন। ঝড়ে প্রচুর ক্ষতি হওয়ায় দ্রুত লাইন চালু করা সম্ভব হয়নি। শুধু পোল পড়ে গেছে এটাই নয় তাঁরও ছিড়ে পড়েছে। তিনি ৫-৬টি গ্রামে বিদ্যুত নেই বলে স্বীকার করেন। বাকিগুলো চালু হয়ে গেছে বলে দাবি করেন।