আলমডাঙ্গা ঘোষবিলার অপহৃত ইটভাটা শ্রমিক ৪ দিন পর মুক্ত

দিনে ভুট্টাক্ষেতে আর রাতে রাখতো ঘরে

 

কেএ মান্নান: আলমডাঙ্গা ঘোষবিলা এনএসবি ইটভাটা থেকে অপহৃত ইটপোড়াই মিস্ত্রি সেকেন আলী প্রামাণিক (৩৫) অপহরকচক্রের ডেরা থেকে মুক্তি পেয়েছে। বাড়ি ফিরে দিয়েছে রোমহর্ষক বর্ণনা। তাকে গত সোমবার রাত ১১টার দিকে ঝিনাইদহ হরিণাকুণ্ডুর তাহেরহুদা গোপিনাথপুরের মাঠে নিয়ে ছেড়ে দেয়। সেখান থেকে ইটভাটা মালিকের লোকজন তাকে উদ্ধার করে। ভাটামালিক স্পষ্টতই বলেছেন, নগদ ৫৫ হাজার টাকা মুক্তিপণ দিয়ে তাকে মুক্ত করা হয়েছে।

জানা গেছে, আলমডাঙ্গার জামজামি ইউনিয়নের ঘোষবিলা গ্রামের গলায়দড়ি ব্রিজের ওপারে সোহরাব হোসেন ব্যাপারীর ছেলে ওয়াজ্জেদ হোসেন ওয়ালের (৪০) এনএসবি ইটভাটা। এ ইটভাটায় ইটপোড়ানো মিস্ত্রি পাবনা ঈশ্বরদীর কৈকুন্ডা গ্রামের মৃত নবীরদ্দিন প্রামানিকের ছেলে সেকেন আলী প্রামাণিককে (৩৫) ইটভাটা থেকে গত বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে অপহরণ করা হয়। সন্ত্রাসীচক্র অপহৃককে নিয়ে পালানোর সময় এ ইটভাটার কর্মরত শ্রমিক সহোদর ভাই জফিরদ্দিন প্রামাণিক (৫৫), একই গ্রামের মাজের উদ্দিন প্রামাণিকের ছেলে মারফত আলি প্রামাণিকে (২৮) বেঁধে টাকাসহ মোবাইলফোন হাতিয়ে নেয়।

ঘটনার পর খবর পেয়ে জামজামি ফাঁড়ি পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে অপহৃতকে উদ্ধারে তৎপরতা শুরু করে। ব্যর্থ হয়। পরের দিন সন্ধ্যায় অপহৃতের মোবাইল দিয়েই মুক্তিপণের দাবি করে অপহরকচক্র। মুক্তিপণের টাকা ১০ লাখ টাকা পরিশোধে নানা হুমকি-ধামকি দিয়ে কখনো ইবির বিত্তিপাড়া, আলমডাঙ্গার হারদী, হরিণাকুণ্ডুর নারায়ণকান্দি ব্রিজে কখনো বা আলমডাঙ্গার আটকপাটে পৌঁছে দিতে চাপ দিতে থাকে। অবশেষে ৪ দিনের মাথায় গত সোমবার ১৩ এপ্রিল রাতে অপহৃতকে অপহরকচক্র হরিণাকুণ্ডুর তাহেরহুদা গোপিনাথপুর মাঠে এনে ছেড়ে দেয়। ভাটামালিক স্পষ্টতই বলেছে, অপহৃত সেকেন প্রামাণিককে অপহরকচক্রের ডেরা থেকে ফেরাতে নগদ ৫৫ হাজার টাকা মুক্তিপণ গুনতে হয়েছে। মহল বিশেষ নিয়েছে আরো ১৫ হাজার টাকা।

অপহরকচক্রের ডেরা থেকে মুক্ত হয়ে ফেরার পর প্রামাণিক জানান, রাতে মুখ-চোখ বেঁধে নেয়া হয় খালের পথধরে কিছুদূর। মাঠের ধানক্ষেত ও বাঁশের সাকোয় টেনেহেঁচড়ে পার করে অল্প দূরেই এক বাড়িতে নেয়। পরদিন চোখ বাঁধা অবস্থায়ই সকালে খেতে দেয় আস্তো মসুরের খেচুড়ি। চোখ বাঁধা অবস্থায়ই দিবালোকে মাঠের ভুট্টাক্ষেতে নিয়ে রেখে। রাতে ধানক্ষেতে হাটিয়ে বেশ দূরে একটি ঘরে তোলে। সেঘরে ছোট কামরায় এজন সার্বক্ষণিক চৌকিতে শুয়ে তাকে পাহারা দিয়েছে। দিনে-রাতে খেয়ে না খেয়ে তিনি অসুস্থ। চোখ একভাবে বাঁধা থাকায় চোখে গতকালও ভালো দেখছিলেন না তিনি।