নতুনকে স্বাগত জানাতে বাঙালির প্রাণের উৎসব আজ

আজ পলা বোশেখ : নব আনন্দে জাগো আজি নবরবিকিরণে

 

স্টাফ রিপোর্টার: আজ পয়লা বোশেখ। বঙ্গাব্দ ১৪২২-এর প্রথম দিন। ঐতিহ্য, উৎসব, আনন্দ আর উচ্ছ্বাসে বাঙালির হারিয়ে যাওয়ার দিন। নতুন সূর্য উদয়ের সাথে সাথে পুরনো বছরের গ্লানি আর জরা মুছে দিয়ে নতুনের আবাহনে মেতে ওঠার দিন। ১৪২১’র আনন্দ-বেদনা, হাসি-কান্নার হিসাব চুকিয়ে জীবন অঙ্কের সরল সমীকরণে নতুন বছরের পরিকল্পনায় শুভ-সূচনার দিন। চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর ও ঝিনাইদহসহ সারাদেশে আজ সূর্যাদয়ের সাথে সাথে শুরু হচ্ছে বর্ষবরণের রকমারি আয়োজন।

image_1161_175378

এসো হে বৈশাখ এসো এসো’র হৃদয়হরণী সুরে আজ জাতি-ধর্ম-বর্ণ-গোত্র নির্বিশেষে সর্বজনীন উৎসবে নববর্ষ উদযাপনে মেতে উঠবে বাঙালি। পান্তা থাকলেও এবার ইলিশের আকালে চড়াদামে অনেকেই তা এড়িয়ে গেলেও ফুলকো লুচি, আলুকষা দমসহ বোদের কদর কমেনি। আর মণ্ডা-মিঠাইয়ের সাথে নাচে-গানে, ঢাকে-ঢোলে, শোভাযাত্রায় পুরো জাতি বরণ করবে ১৪২২-কে। গ্রাম থেকে শহর, নগর থেকে বন্দর, আঁকা-বাঁকা মেঠো পথ থেকে প্রকৃতির প্রতিটি নৈসর্গিক দৃশ্যেই ঝলমল করবে বোশেখি উন্মাদনা। খোলা হবে হালখাতা। গতকাল সোমবার বসন্তের শেষদিনে নানা আয়োজনে চৈত্র সংক্রান্তির মধ্যদিয়ে সমগ্র জাতি বিদায় জানিয়েছে ১৪২১-কে।

পয়লা বোশেখ উপলক্ষে রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন এবং সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বিশেষ কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। নববর্ষ উপলক্ষে আজ সরকারি ছুটির দিন। সরকারি-বেসরকারি টেলিভিশন ও রেডিও চ্যানেলগুলো এ উপলক্ষে প্রচার করছে বিশেষ অনুষ্ঠানমালা। সংবাদপত্রগুলো প্রকাশ করেছে ক্রোড়পত্র ও বিশেষ নিবন্ধ। নির্বিঘ্নে উৎসব পালনে দেশব্যাপি কঠোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে।

প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী চুয়াডাঙ্গায় গৃহীত কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে, সকাল ৬টায় চুয়াডাঙ্গা ঝিনুক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে বোশেখি বরণ উৎসব শুরু হবে। এরপর সকাল ৭টায় ভি.জে সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠ থেকে বোশেখি মেলার শোভাযাত্রা বের করা হবে। শহর প্রদক্ষিণ করে সরকারি কলেজ প্রাঙ্গণে আলোচনাসভার পাশাপাশি বোশেখির নাচ ও গান পরিবেশন করা হবে। বেলা ১১টায় জেলা শিশু একাডেমী শিশুদের জন্য জেলা শিল্পকলা একাডেমীর মুক্তমঞ্চে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করবে। জেলা কারাগারে কারাবন্দিদের পরিবেশনায় এবং শিশু পরিবারের শিশুদের নিয়ে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে। এছাড়া সরকারি, বেসরকারি অফিস ও সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যথাযথ মর্যদার সাথে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করা হবে। হাসপাতাল, জেলা কারগার ও সরকারি শিশু সদনে ঐতিহ্যবাহী বাঙালি খাবার পরিবেশন করা হবে।

দেশবাসীকে নতুন বছরের শুভেচ্ছা জানিয়ে পৃথক বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিরোধীদলের নেতা রওশন এরশাদ, জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরিন শারমীন চৌধুরী, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদসহ রাজনৈতিক দলের প্রধানরা।

রমনার বটমূলে ছায়ানটের প্রভাতী অনুষ্ঠান ও চারুকলার মঙ্গল শোভাযাত্রা বোশেখকে আজ মহিমান্বিত করে তুলবে জাতির কাছে। রমনার বটমূল থেকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, চারুকলা, টিএসসি, ছবির হাট, ধানমণ্ডির রবীন্দ্রসরোবরসহ রাজধানীর সর্বত্রই কাকডাকা ভোর থেকে রাত পর্যন্ত বোশেখি উন্মাদনায় হারিয়ে যাবে শিশু-কিশোর, তরুণ-তরুণী, যুবক-যুবতী, বৃদ্ধ-বৃদ্ধাসহ সব শ্রেণি-পেশার ও সব ধর্মের মানুষ। এই একটি মাত্র অসাম্প্রদায়িক উৎসব জাতির জীবনে শুধু আনন্দই বয়ে আনে না, বয়ে আনে মানুষে মানুষে সম্প্রীতি ও ভ্রাতৃত্বের সেতুবন্ধ তৈরির অনন্য সুযোগ। সারা দেশেই সব শ্রেণি-পেশার মানুষের মিলবে সেই স্বপ্ন-মধুর উপলক্ষ। মঙ্গল শোভাযাত্রা ও রমনার বটমূলের প্রভাতী অনুষ্ঠানের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। চারুকলা ও ছায়ানট সোমবার নানা সাংস্কৃতিক আয়োজন ও চৈত্রসংক্রান্তির মধ্যদিয়ে পুরনো বছর ১৪২১-কে বিদায় জানিয়েছে। শিল্পকলা একাডেমী, বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশন, উদীচী শিল্পী গোষ্ঠী, বাংলাদেশ শিশু একাডেমী, বাংলা একাডেমী, বেঙ্গল ফাউন্ডেশনসহ বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন নানা আয়োজনে আজ নতুন বছরেকে বরণ করবে। বাংলা নববর্ষ-১৪২২ জাঁকজমকপূর্ণভাবে উদযাপনে জাতীয় পর্যায়ে ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করেছে সরকার। বাংলা নববর্ষের তাৎপর্য তুলে ধরে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় ও বাংলা একাডেমীর উদ্যোগে বিভিন্ন জাতীয় পত্রিকায় ক্রোড়পত্র প্রকাশ করা হচ্ছে। আজ সরকারি ছুটির দিন হওয়ায় কাল বাংলা নববর্ষের দ্বিতীয় দিন বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি স্বাধীনতা ও একুশে পদকপ্রাপ্ত সুধী, নেতৃস্থানীয় লেখক, কবি, সাহিত্যিক এবং সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বদের সংবর্ধনা প্রদান করবেন। বাংলা নববর্ষ উদযাপন উপলক্ষে বিভাগীয় শহর, জেলা শহর ও সব উপজেলায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন, আলোচনা সভা ও গ্রামীণ মেলার আয়োজন করেছে স্থানীয় প্রশাসন। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমী তিন দিনব্যাপি অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করেছে। বাংলাদেশ শিশু একাডেমী, বাংলা একাডেমী, গণগ্রন্থাগার অধিদফতর, বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক ইন্সটিটিউটগুলো, বিসিক ও ছায়ানট নানা অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করেছে। বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন ঐতিহ্যবাহী বোশেখি মেলার আয়োজন করেছে।

বাংলা নববর্ষের প্রথম দিনে আজ সব কারাগার, হাসপাতাল ও শিশু পরিবারে (এতিমখানা) উন্নতমানের ঐতিহ্যবাহী বাঙালি খাবার দেয়া করা হবে। শিশু পরিবারের শিশুদের নিয়ে ও কারাবন্দিদের পরিবেশনায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে এবং কয়েদিদের তৈরি বিভিন্ন দ্রব্যাদি প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করা হবে। সব জাদুঘর ও প্রত্নস্থান সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত রাখা হবে। হোটেল সোনারগাঁও, ৱ্যাডিসন, ওয়েস্টিন, ঢাকা রিজেন্সিসহ হোটেল-রেস্টুরেন্টেগুলোর উদ্যোগেও উদযাপিত হবে নতুন বছরের উৎসব। ঢাকা ক্লাব, গুলশান ক্লাব, উত্তরা ক্লাবের উদ্যোগে পয়লা বোশেখ উদযাপিত হবে। মোবাইল অপারেটর কোম্পানিগুলোও নিজ উদ্যোগে বিভিন্ন কর্মসূচির আয়োজন করেছে। দুপুর থেকে রাত অবধি কনসার্টের আয়োজন করেছে ফ্যান্টাসি কিংডম ও নন্দন পার্ক। সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিজ নিজ ব্যবস্থাপনায় জাঁকজমকপূর্ণভাবে বাংলা নববর্ষ উদযাপন করা হচ্ছে। বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ মিশনগুলো এ উপলক্ষে বিশেষ অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করেছে।