আলমডাঙ্গা ব্যুরো: আলমডাঙ্গা পৌর শহরসহ আশপাশের গ্রামে বাল্যবিয়ের প্রবণতা বৃদ্ধি না পেলেও প্রত্যাশা পূরণ হয়নি। বিদেশি আর্থিক সাহায্যপুষ্ট বিভিন্ন এনজিও এ এলাকায় বাল্যবিয়ে বন্ধ ও নিরুৎসাহিত করতে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছে। এর মধ্যে ২-১টি এনজিওর ভূমিকা প্রথম দিকে উল্লেখযোগ্য হলেও বেশ কিছুদিন যাবত সে সংস্থাগুলোর কার্যক্রম ঝিমিয়ে পড়েছে বলেও কারো কারো অভিমত। উপজেলা প্রশাসন বাল্যবিয়ে রোধ করতে সব সময়ই বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করে থাকে। কখনো জরিমানা আদায়, ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা ও পুলিশ পাঠিয়ে বিয়ে বন্ধের মতো ভূমিকা পালন করে থাকে। তারপরও বাল্যবিয়ের প্রবণতা রোধে প্রত্যাশা পূরণ হয়নি। খোদ আলমডাঙ্গা পৌর শহরসহ আশপাশের গ্রামগুলোতে এ বাল্যবিয়ের প্রবণতা রয়েছেই। মাত্র কিছুদিনের ব্যবধানে পৌর শহরের হাউসপুরে ৭-৮টি বাল্যবিয়ের ঘটনা ঘটেছে। বাল্যবিয়ের শিকার হয়েছে হাউসপুরের খোরশেদ আলীর ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ুয়া মেয়ে রেশমা খাতুন, একই পাড়ার মতিয়ার রহমানের ৭ম শ্রেণিতে পড়ুয়া মেয়ে মুক্তা খাতুন, একইপাড়ার মহি উদ্দীনের ৭ম শ্রেণিতে পড়ুয়া মেয়ে উর্মি খাতুন, মুন্নার ৭ম শ্রেণিতে পড়ুয়া মেয়ে রিতু, মফিজের ৭ম শ্রেণিতে পড়ুয়া মেয়ে আশানূরী, একই পাড়ার ৭ম শ্রেণির ছাত্রি রিক্তা খাতুন ও ফারজানা খাতুন। পৌরসভাধীন এরশাদপুরে একই সময়ের মধ্যে বাল্যবিয়ে হয়েছে ৮টি, ডামোশে ঘটেছে ৪টি বাল্যবিয়ের ঘটনা। ডামোশ গ্রামের সম্প্রতি বাল্যবিয়ের অভিশাপগ্রস্তরা হলো বিউটি খাতুন, তাসলিমা খাতুন, তামান্না খাতুন। এরা সকলেই ছিলো ৬ষ্ঠ শ্রেণি থেকে ৮ম শ্রেণির ছাত্রী। পৌরসভাধীন এরশাদপুর গ্রামেও এ প্রবণতা বিপদজনক। সম্প্রতি এ গ্রামে ৮-৯টি বাল্যবিয়ের ঘটনা ঘটেছে। এ গ্রামের বাল্যবিয়ের শিকার হয়েছে- রাণী খাতুন, পাপিয়া খাতুন, একই গ্রামের সাদিয়া খাতুন, বাসনা খাতুন, খুশি খাতুন, খলিলের মেয়ে কামনা খাতুন, সিরাজুল ইসলামের মেয়ে চুমকি খাতুন, শহিদ উদ্দীনের মেয়ে রিতা খাতুন। এদের অধিকাংশই ৭ম শ্রেণির ছাত্রী। এছাড়া পৌরসভার আনন্দধাম ও কলেজপাড়ায়ও হরহামেশা বাল্যবিয়ের ঘটনা ঘটছে। সম্প্রতি সময়ে আনন্দধামের বাবুর মেয়ে ফাতেমা খাতুন, একই এলাকার বিপাশাসহ বেশ কয়েকজন মেয়ের ও কলেজপাড়ার রুবি খাতুন, জানাসহ কয়েকজন মেয়ের বাল্যবিয়ের কথা জানা গেছে। তাছাড়া গোবিন্দপুর গ্রামেও বাল্যবিয়ের হারও আতঙ্কজনক।
গ্রামের মেম্বার ও কাউন্সিলররা বাল্যবিয়ে অনুষ্ঠানে প্রধান অনুঘটক। এমন অভিযোগ এলাকার সচেতন মহলের। তারাই নকল জন্ম সনদ সরবরাহ করেন। অনেকে আবার দায়িত্বপ্রাপ্ত কাজির বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছেন। অনেকেই অতিরিক্ত টাকা পেলেই চোখ বন্ধ করে বাল্যবিয়ে পড়ান বলে তাদের অভিযোগ। সম্প্রতি হাউসপুর এলাকায় সবচে বেশি বাল্যবিয়ে পড়িয়েছেন ডাউকি ইউনিয়নের দায়িত্বপ্রাপ্ত কাজি জহুরুল ইসলাম। তিনি বলেন, বাল্যবিয়ে পড়াতে অস্বীকার করলে মারধর খেতে হয়। মানসম্মান নিয়ে বাঁচতে হলে বাল্যবিয়ে পড়ানো ছাড়া উপায় নেই। কিছুদিন পূর্বে ছত্রপাড়ায় বাল্যবিয়ে পড়াতে রাজি না হওয়ায় শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত হতে হয়েছে। এ ঘটনায় থানায় এজাহার করলেও পরে অসহায়ের মতো যারা লাঞ্ছিত করেছে, তাদের সাথে হাত মিলিয়ে মামলা প্রত্যাহার করে নিতে হয়েছে।