শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ২২ মাসে ২৭ মণ সোনা

স্টাফ রিপোর্টার: হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে গত ২২ মাসে উদ্ধার করা হয়েছে ২৭ মণ সোনা। এ সময় হাতেনাতে গ্রেফতার হয়েছে ১১৫ জন। আর সোনা উদ্ধারের ঘটনা চার দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ। এর আগে গত দশ বছরের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে প্রতি বছর গড়ে মাত্র ২০ কেজি করে সোনা উদ্ধার হয়েছে। এ তথ্য শুল্ক গোয়েন্দা অধিদফতরের।

বিমানবন্দর কাস্টমসের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, সোনা চোরাচালান হচ্ছে সিন্ডিকেট ভিত্তিক। প্রতিনিয়ত যে সোনা আসে তার খুব কম সংখ্যক চালানই ধরা পড়ে। গত দু বছরে কাস্টমস, শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের ব্যাপক তত্পরতার কারণেই সর্বোচ্চ পরিমাণ সোনা উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। সোনা চোরাচালানিরা প্রতিনিয়ত তাদের কৌশল পাল্টাচ্ছে। এ কারণেই অনেক সময় সবার চোখ ফাঁকি দিয়ে চোরাকারবারীদের কাছে সোনার চালান পৌঁছে যাচ্ছে। কোনোভাবেই সোনার চোরাচালান পুরোপুরি ঠেকানো যাবে না।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ এডিসি (উত্তর) মাহফুজুর রহমান বলেন, তিনি বিমানবন্দরে আটক হওয়া সোনা সংক্রান্ত মামলার তদন্ত করছেন। এসব মামলায় বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করেছেন। বেরিয়ে এসেছে সোনা চোরাচালানের চমকপ্রদ তথ্য। এসব তথ্য যাচাইবাছাই করে সিন্ডিকেটের গড ফাদারদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।

সম্প্রতি সময় বিমানবন্দরে প্রতিনিয়ত সোনার চালান ধরা পড়ার ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, যারা সোনা চোরাচালানের সাথে জড়িত তাদের কাছে এটা নেশার মত। ধরা পড়া নিয়ে তাদের মাথাব্যথা নেই। ধরা পড়তে পারে এমনটা বিবেচনায় নিয়েই তারা এ কাজ করে থাকে।

এদিকে হযরত শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে গতকাল রোববার সাড়ে ৯ কেজি সোনা উদ্ধার করা হয়েছে। জড়িত থাকার অভিযোগে দু নারী, এক শিশু সহ ৪ জনকে আটক করেছে বিমানবন্দর কাস্টমস, শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতর কর্তৃপক্ষ। আটককৃতরা হলেন- মাইন উদ্দিন ( ৪২), তার স্ত্রী আবিদা সুলতানা (৩৩), তাদের সন্তান মোজাক্কির মইন ( ৫) ও একই ফ্লাইটের যাত্রী পলি রানী (২৫)।

শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের মহাপরিচালক (ডিজি) ড. মঈনুল খান বলেন, গতকাল সকাল ৭টার দিকে কুয়ালালামপুর থেকে বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স-এর ( বিজি-০৮৭) ফ্লাইটটি ঢাকায় আসে। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বিমানবন্দর শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের কর্মকর্তারা ওই বিমানের বাংলাদেশি যাত্রী মাইন উদ্দিন, তার স্ত্রী আবিদা সুলতানা, তাদের সন্তান মোজাক্কিরের শরীর ও মালামাল তল্লাশি চালিয়ে ২০টি সোনার বার ও বেশ কিছু সোনার অলংকার উদ্ধার করে। আবিদা সুলতানা ও তার স্বামী মাইন উদ্দিনকে আটক করা হলেও তাদের শিশু সন্তান মোজাক্কির মইনকে স্বজনদের জিম্মায় দেয়া হয়েছে।

অপরদিকে একই বিমানে আসা পলি রানী নামের এক যাত্রীর কাছ থেকে বিমানবন্দর কাস্টমস কর্মকর্তারা তল্লাশি চালিয়ে চার কেজি ৪৬০ গ্রাম সোনা উদ্ধার করে। এ সোনা হেয়ার ড্রায়ার মেশিনের ভেতরে বিশেষভাবে রাখা ছিলো। এ ঘটনায় দায়ের করা মামলায় আসামি করা হয়েছে পলি রানীকে। তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তিনি চোরাচালানের সাথে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন। তার বাড়ি রাজধানীর সূত্রাপুর এলাকায়। তিনি কয়েক দিন আগে মালয়েশিয়া অবস্থানকারী ভাইয়ের কাছে বেড়াতে গিয়েছিলেন।

একই দিন হযরত শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে শুল্ক ফাঁকি দেয়ার অভিযোগে এক কোটি টাকার আতর, টুপি ও একটি সোনার বার উদ্ধার করে বিমানবন্দরের আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন। এতে জড়িত থাকার অভিযোগে হাজি মোশাররফ ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরসের মালিক মোশাররফ হোসেনকে (৫৫) আটক করেছে এপিবিএন।

Leave a comment