কোটচাঁদপুর প্রতিনিধি: তুচ্ছ ঘটনা নিয়ে গ্রাম্য বিচারে ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুরে একটি অসহায় পরিবারকে একঘরে করার অভিযোগ উঠেছে। পরবর্তীতে ওই পরিবারের মহিলাদের ওপর জিয়াউল নামের এক ব্যক্তি হামলা চালিয়ে ৬৫ বছর বয়স্ক বৃদ্ধা মাসহ দু কন্যাকে বেধড়ক পিটিয়ে আহত করেছে। আহতদের মধ্যে বৃদ্ধা মা মৃত্যুর সাথে পাজ্ঞা লড়ছে।
সরেজমিনে জানা যায়, কোটচাঁদপুর উপজেলার হরিন্দিয়া গ্রামের আকালে মোল্লার পরিবারের সদস্যদের সাথে সম্প্রতি পারিবারিক বিষয় নিয়ে প্রতিবেশী কুদ্দুস মোল্লার দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়। এক পর্যায়ে কুদ্দুস মোল্লা আকালে মোল্লার মেয়ে শিউলি খাতুনকে (১৮) মারধর করে হাত ভেঙে দেয়। এ ঘটনায় শিউলির মা মোমেনা বেগম বাদী হয়ে কুদ্দুস মোল্লাকে আসামি করে স্থানীয় থানায় অভিযোগ দাখিল করে। অভিযোগ পেয়ে থানা পুলিশ কুদ্দুস মোল্লাকে গ্রেফতার করে। পরে পুলিশ বাদীপক্ষকে থানায় ডেকে এনে মীমাংসার মাধ্যমে আসামিকে ছেড়ে দেয়। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, এ ঘটনার পরের দিনই আকালে মোল্লার পরিবারকে সায়েস্তা করতে অভিযুক্ত কুদ্দুস মোল্লা গ্রামে বিচার ডাকেন। বিচারে উপস্থিত ছিলেন, আসাদুল মেম্বার, গ্রাম মাতবর সাজ্জাত হোসেন, আহম্মদ হোসেন, লিটু, অভিযুক্ত কুদ্দুস মোল্লার সহযোগী পিন্টু, সাদিম, করম আলীসহ কয়েকজন। এ বিষয়টি আগের দিন থানায় বসে মীমাংসা হওয়ায় আকালে মোল্লার পরিবারের পক্ষ থেকে কেউ ওই বিচারে হাজির না হওয়ায় ওই পরিবারকে একঘরে করার সিদ্ধান্ত নেন মাতবররা। আকালে মোল্লা বয়স ৭৫ বছর। তিনি একজন ভূমিহীন কৃষক। থাকেন সরকারি জমিতে ঘর বেধে। তিনি কানে শোনেন না এবং অসুস্থ। ৫ কন্যা ও ১ ছেলের জনক। ছেলেটি সবার ছোট তাও প্রতিবন্ধী, দু বেলা দু মুঠো ভাতও জোটে না তাদের। এমনি এক অসহায় পরিবারের ওপর একঘরের খড়গ চাপানো হয়। আকালে মোল্লা মেয়ে শিরিনা খাতুন জানান, গ্রাম্য বিচারের পরের দিন সকালে কুদ্দুস মোল্লা ও প্রতিবেশী জিয়ারুল জুতোর মালা ও টিন নিয়ে আমাদের বাড়িতে হাজির হয় আমার অসুস্থ বৃদ্ধা পিতার গলায় জুতোর মালা ঝুলিয়ে ও টিন বাজিয়ে গ্রামে ঘোরানোর জন্য। সে সময় কোনো ঊপায় না পেয়ে মোবাইলফোনে আসাদুল মেম্বারকে জানালে তিনি সাথে সাথে এসে এর প্রতিবাদ করলে তারা চলে যায়। এ বিষয়ে আসাদুল মেম্বারকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, আমি বাঁধা হয়ে দাঁড়ানোর কারণে তারা এ ঘটনা ঘটাতে পারেনি। এরপর থেকে সন্ধ্যার পর আমাদের ঘরের টিনের ওপর ছোট ছোট ইট ফেলে বিরক্ত করতে থাকে। শিরিনা বলেন, এর রেষ ধরে গত ৩ এপ্রিল বাড়ির সামনে বস্তা শুকোতে দেয়াকে কেন্দ্র করে কুদ্দুস মোল্লার প্ররোচনায় নিকট প্রতিবেশী জিয়ারুলও তার ভাইয়েরা হঠাৎ করে আমাদের বাড়ির মধ্যে ঢুকে আমার ২০ দিনের শিশুর বুকের দুধ খাওয়ানো অবস্থায় আমাকে মারধোর করতে থাকে। এ সময় আমার মা আমাকে ঠেকাতে এলে জিয়ারুল আমার বৃদ্ধা মাকে চুল ধরে লাঠি দিয়ে পিটিয়ে রক্তাক্ত করে অচেতন অবস্থায় ফেলে রেখে চলে যায়। মাকে অচেতন অবস্থায় সাথে সাথে কোটচাঁদপুর উপজেলা হাসপাতালে নেয়া হলে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য যশোর আড়াইশ বেড হাসপাতালে রেফার করেন চিকিৎসকগণ। বর্তমানে তিনি মুমূর্ষু অবস্থায় যশোরেই চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
শিরিনা অভিযোগ করেন, এ ব্যাপারে থানায় অভিযোগ করলেও পুলিশ এ পর্যন্ত কোনো আসামি গ্রেফতার করেনি। বিষয়টি থানার ওসি শাহিদুল ইসলাম শাহিন বলেন, অভিযোগ আমি পেয়েছি, দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হবে। বর্তমানে এ অসহায় পরিবার ওই সকল সন্ত্রাসীদের কারণে ভীষণ আতঙ্কের মধ্যে রয়েছে বলে তারা জানান।