পদোন্নতি পেলেও দায়িত্ব বাড়ে

সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চাকরিতে পদোন্নতি একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। প্রশাসনে, সুশাসনে কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের জন্য এটি সংশ্লিষ্টদের জন্য একটি স্বীকৃতিও বটে। যিনি পদোন্নতি পান স্বভাবতই তিনিসহ তার সহকর্মী, বন্ধুবান্ধব, স্বজন- সবাই কম-বেশি আনন্দিত হন। সেটাই নিয়ম। যেমনটি বলেছেন ইমেরিটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামান স্বাধীনতা পদক ও ভারতের রাষ্ট্রীয় সম্মাননা পদ্মভূষণ পাওয়ায় তাকে দেয়া এক সংবর্ধনা সভায়। তিনি বলেছেন, সবাই খুশি হলে পুরস্কারের মূল্য বেড়ে যায়। পুরস্কার পেলে দায়িত্বও বেড়ে যায়। একই কথা পদোন্নতির ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। পদোন্নতি পেলেও দায়িত্ব বাড়ে। বাড়তি সে দায়িত্ব কেবল উন্নীত পদের কার্যাবলীর মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে না, প্রাপ্ত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালনের সাথে তা রক্ষা করা, অর্থবহ করে তোলা, সর্বোপরি তাকে সার্থক করার ক্ষমতাও অর্জন করতে হয়। জনপ্রশাসনের পদোন্নতির পর এবার পদোন্নতি দেয়া হয়েছে পুলিশ প্রশাসনে। অতিরিক্ত ডিআইজি ও সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মর্যাদার ১৩৪ জন কর্মকর্তাকে দেয়া হয়েছে পদোন্নতি। দীর্ঘ ছয় মাস ধরে এ পদোন্নতির প্রস্তাব ঝুলে ছিলো। কয়েক দফা মূল্যায়ন, পুনর্মূল্যায়নের পর এ ঘোষণা এসেছে। গত বছর ২৩ অক্টোবর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়-সংক্রান্ত বিভাগীয় পদোন্নতি কমিটি (ডিপিসি) ৩টি পদে ১৮০ জনকে পদোন্নতির সিদ্ধান্ত নেয়। নানা যাচাই-বাছাই, অবজারভেশনসহ সংযোজন-বিয়োজনের পর ১৩৪ জনকে পদোন্নতি দেয়া হলে বাদ পড়া ৪৬ জন অসন্তুষ্ট বলে সংবাদসূত্রে জানা গেছে।

পদোন্নতি-বঞ্চিতরা দাবি করেছেন, পদোন্নতির ক্ষেত্রে এমন ঘটনা এর আগে বাংলাদেশ পুলিশে ঘটেনি। পদোন্নতি নিয়ে অসন্তোষ জনপ্রশাসনেও দেখা গেছে। বস্তুত পদোন্নতিজনিত অসন্তোষ নিয়মতান্ত্রিকতায় বিঘ্ন ঘটায়। সেটা কারোই কাম্য নয়। জনপ্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনে পদোন্নতিজনিত অসন্তোষ হয়-তো সৃষ্টি হতো না যদি যথাযথ কর্মদক্ষতা, যোগ্যতা ও মেধার ভিত্তিতে তা হতো। শরীরে যেমন রোগ বয়ে বেড়ানো অনুচিত, তেমনি জনপ্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনে অসন্তোষ জিইয়ে রাখাও কাম্য নয়। সরকারি কর্মকর্তা ও পুলিশ কর্মকর্তাদের অসন্তোষের বিষয়টি অপনোদনের প্রয়াস নেয়া প্রয়োজন।

বস্তুত পদোন্নতির বিষয়টি অসন্তোষের নিরানন্দে নয়, সন্তোষের আনন্দে সুরাহা হওয়া উচিত। তাহলেই পদোন্নতি হয়ে উঠবে অর্থবহ এবং এতে অর্জিত হবে পদোন্নতি প্রদানের মূল লক্ষ্য তথা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাছ থেকে আরও বেশি জনসেবা প্রাপ্তির বিষয়টি। আমরা আশা করবো, সব ক্ষেত্রেই এমনভাবে পদোন্নতি দেয়া হবে যাতে তা হবে প্রশ্নহীন, প্রশ্নবিদ্ধ নয়।