ডাকাতির প্রস্তুতি নিয়ে গ্রামের প্রবেশ : প্রতিরোধের মুখের বোমা বিস্ফোরণ : গণপিটুনিতে তিন ডাকাত নিহত

মেহেরপুরে রাজাপুর মাঠে কৃষককে মারধর করে মোবাইলফোন ও টাকা ছিনতাই : খবর পেয়ে গ্রামবাসী সজাগ

 

মেহেরপুর অফিস: মেহেরপুর সদর উপজেলার রাজাপুর গ্রামে গ্রামবাসীর গণপিটুনিতে তিন ডাকাত নিহত হয়েছে। এ সময় তাদের কাছ থেকে একটি দেশীয় তৈরি পিস্তল ও এক রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়। ডাকাতি চেষ্টাকালে গত বুধবার মধ্যরাতে এ ঘটনা ঘটে। নিহত তিন ডাকাতের মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেছে পুলিশ। নিহতরা হচ্ছে- সদর উপজেলার চকশ্যামনগর গ্রামের আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে ফারুক হোসেন (৩৬), একই গ্রামের নাজির উদ্দীনের ছেলে রফিকুল ইসলাম (৪০) ও গাংনী উপজেলার কচুইখালী যুগিন্দা গ্রামের আয়ুব আলীর ছেলে শরিফুল ইসলাম (৪০)। নিহতরা এলাকার চিহ্নিত ডাকাত এবং তাদের নামে বেশ কয়েকটি ডাকাতি মামলা রয়েছে বলে জানায় পুলিশ।

মেহেরপুর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আজবাহার আলী শেখ জানান, বুধবার মধ্যরাতে সদর উপজেলার রাজাপুর গ্রামে ১০-১২ জনের এক দল ডাকাত প্রবেশের চেষ্টা করে। এ সময় ডাকাত দল রাজাপুর মাঠে শসার ক্ষেতে সেচ দেয়াকালে গ্রামের কৃষক বাতেন আলীর কাছ থেকে কিছু টাকা ও মোবাইলফোন ছিনিয়ে নিয়ে মারধর করে। খবর পেয়ে গ্রামবাসী প্রতিরোধ করলে ডাকাত দলের সাথে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়। ৫টি বোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়ে কয়েকজন পালিয়ে গেলেও ধরা পড়ে তিনজন। তাদেরকে গণপিটুনি শুরু করেন গ্রামবাসী। পরে খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে একজনকে মৃত ও অপর দুজনকে জীবিত উদ্ধার করে মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে ওই দুজনের মৃত্যু হয়। ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে রাজাপুর গ্রামের কয়েকজন জানান, বাতেনের কাছ থেকে টাকা ও মোবাইলফোন ছিনিয়ে নেয়ার সময় ডাকাতদলের একজন সদস্য পড়ে যায়। এতে তার কোমরে থাকা পিস্তল হারিয়ে যায়। বাতেনকে পিটিয়ে তারা গ্রামে প্রবেশ না করে মাঠের দিকে চলে যায়। এ সময় বাতেন তার মোবাইলফোন খোঁজাখুজি করছিলেন। ডাকাতদলের সদস্যরা কিছু দূর এগিয়ে গিয়ে বুঝতে পারেন তাদের পিস্তল হারিয়ে গেছে। ওই পিস্তল খুঁজতে তারা বাতেনকে পেটানোর স্থানে ফিরে আসে। রাতে বাতেন দেখেন ডাকাত দলের সদস্যরা ফিরে আসে। তার আগেই গ্রামের লোকজন ঘটনাস্থলে পৌছে ডাকাতদের ওই পিস্তলটি খুঁজে পায়। ডাকাত দলের সদস্যরা ঘটনাস্থলে এসে পিস্তল খোঁজার সময় গ্রামবাসী তাদের ধাওয়া করে। এক পর্যায়ে ডাকাতরা ঘুরে দাঁড়িয়ে প্রতিরোধকারী গ্রামবাসী লক্ষ্য করে পর পর ৫টি বোমা নিক্ষেপ করে। বোমার স্প্লিন্টারে গ্রামের দুজন সামান্য আহত হন। তবে এতেও পিছপা হয়নি গ্রামের লোকজন। তারা ধাওয়া করে ডাকাতদলের ওই তিনজনকে আটক করে গণপিটুনি দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই একজনের মৃত্যু হয়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে অস্ত্র-গুলি উদ্ধারের পাশাপাশি মুমূর্ষ অবস্থায় দুজনকে মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালে নেয়। সেখানে ওই দুজনের মৃত্যু হয়। জেলার বিভিন্ন স্থানে মাঝেমধ্যেই বোমা ফাটিয়ে ডাকাতি সংঘটিত হয়। এদিকে গতাকাল বিকেলে তিন জনের মরদেহ ময়নাতদন্ত শেষে স্ব স্ব পরিবারের সদস্যদের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

মেহেরপুর সদর থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আহসান হাবীব জানান, ওই ঘটনায় সদর থানায় দুটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। হত্যা মামলায় এলাকার অজ্ঞাত ৭-৮শ জনকে আসামি এবং অপরটি বিস্ফোরকদ্রব্য ও অস্ত্র আইনের মামলা। আহত অবস্থায় দুজনকে উদ্ধারের সময় পুলিশের কাছে তারা ডাকাতদলের বেশ কয়েকজনের নাম বলে গেছে। তাই রাত থেকেই গোটা দলকে গ্রেফতারের লক্ষ্যে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

Leave a comment