হানের স্ত্রীর দাবি অবজ্ঞার সুযোগ নেই : সুষ্ঠু তদন্ত দরকার

কাউকে পিটিয়ে মারা মানে আইন নিজের হাতে তুলে নেয়া। যতো বড় অপরাধীই হোক, তাকে হত্যা দূরের কথা লাঠির আঁচড়েরও এখতিয়ার কারো নেই। তা ছাড়া অপরাধ করার সময় হাতেনাতে ধরা পড়লেও তাকে অপরাধী বলা সঙ্গত নয়। আইনের দৃষ্টিতে আদালত তাকে যতক্ষণ অপরাধী বলে রায় না দেয়, ততক্ষণ অপরাধী বলাও আইনের দৃষ্টিতে অন্যায়। অপরাধীর অপরাধের মাত্রা অনুপাতে আইনেই নির্দিষ্ট করা আছে কোন অপরাধের অপরাধী কতোটা সাজা ভোগ করবে। এসব আইন বলবৎ থাকার পরও চুয়াডাঙ্গা আলমডাঙ্গার পল্লি বটিয়াপাড়ায় কেন একজনকে পিটিয়ে হত্যার উল্লাস? শুধুই কি ক্ষোভ? নাকি আড়ালে হত্যারই চক্রান্ত? এসব প্রশ্নের জবাব সমাজের সুন্দর ভবিষ্যতের জন্যই জেনে উপযুক্ত পদক্ষেপ নেয়া দরকার।

অবশ্যই পান চুরি সমর্থনযোগ্য নয়। পানচোরের উৎপাত বন্ধে পুলিশের আরো দায়িত্বশীল হওয়া দরকার। বটিয়াপাড়া গ্রামের সাধারণ মানুষ পানচোরের উৎপাতে একদিনে অতিষ্ঠ হয়নি। এর মধ্যেও সুপ্তভাবে লুকিয়ে রয়েছে পুলিশের ব্যর্থতা। তারপরও গণপিটুনি দিয়ে একজনকে হত্যার সুযোগ দেশের প্রচলিত আইনে রাখেনি। দেশে আইন আছে, আছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা। ‘মারতে মারতে মরে গেছে, এখন আমরা কী করবো’ বলে দায় এড়ানোর সুযোগ নেই। তা ছাড়া পিটিয়ে হত্যার মতো ঘটনা ঘটলে ঘটনার আড়ালে আরো কোনো ঘটনা লুকিয়ে আছে কি-না তা নিয়েও প্রশ্ন ওঠে। সন্দেহ দানা বাধে। শিয়ালমারীর আমির হামজা ওরফে হান্নান ওরফে হানকে বটিয়াপাড়ায় পিটিয়ে হত্যার পর যে সন্দেহ জনমনে ঘুরপাক খাচ্ছে তা খাটো করে দেখা মানে অন্যায় প্রবণতাকে উসকে দেয়া। হানের স্ত্রী হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। পুলিশি তদন্ত শুরু হয়েছে। হান সত্যি সত্যিই পান চুরির সময় ধরা পড়লেও তাকে পিটিয়ে হত্যা গুরুতর অপরাধ। সত্যিই কি পান চুরি করতে গিয়েছিলো? নাকি মাদক বহনের পাওনা নিয়ে বিরোধের জের ধরে কৌশলে ডেকে নিয়ে চুরির অপবাদে গণরোষে ঠেলে দেয়া হয়েছে? যে গ্রামের মানুষ পানচোরের উৎপাতে অতিষ্ঠ, সেই গ্রামবাসীর মাঝে পানচোর অপবাদে পাওনাদারকে ঠেলে দেয়া মানে পরিকল্পিত হত্যা। হানের স্ত্রী এ হত্যাকাণ্ডকে পরিকল্পিত হত্যা বলে দাবি করেছেন। এ দাবি অবজ্ঞার সুযোগ নেই। যথাযথ গুরুত্বের দাবি রাখে। কারণ, হান ও তার স্ত্রী-সন্তানেরা সমাজের যে পর্যায়েরই মানুষ হোক, তাদের বিচার চাওয়ার এবং পাওয়ার অধিকার দেশের সংবিধানই তাদের দিয়েছে।

সমাজের সকলের জীবনযাত্রার মান এক না হলেও প্রত্যেকের জীবনের মূল্য সামাজিক কারণেই অভিন্ন মূল্যায়নের দাবি রাখে। হান সমাজের যে স্তরেরই মানুষ হোক, তার প্রতি ন্যূনতম যে মানবিকতা দেখানো দরকার ছিলো পিটিয়ে উল্লাসকারীদের মধ্যে তখন তা ছিলো না। ক্ষোভেই হোক, আর হিংসা বা ষড়যন্ত্রেই হোক- পিটিয়ে হত্যার মধ্যে মনুষ্যত্ব থাকে না। পেশিশক্তি প্রয়োগে হত্যার মতো ঘটনা সমাজের দায়িত্বশীলদেরও খাটো করে। হান হত্যার প্রকৃত ঘটনা উন্মোচনে পুলিশের দায়িত্বশীল কর্তাকে অবশ্যই সুষ্ঠু স্বচ্ছ তদন্তে আন্তরিক হতে হবে। সত্যিকারের দোষী শনাক্ত করে বিচারের মুখোমুখি করতে হতে হবে আন্তরিক। সমাজ পরিচালনাকারীদেরও হতে হবে দায়িত্বশীল। অন্যথায় ক্ষতিগ্রস্ত হবে সমাজই।

Leave a comment