স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গার ভি.জে সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় ও সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ উপেক্ষা করে অত্যাবশকীয় খাতে বার্ষিক ৩০ টাকার পরিবর্তে মাসিক ৩০ টাকা আদায় করছে। এতে অভিভাবকদের মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। একই সাথে শিক্ষার্থীদের সেশনচার্জ ২০১৪ সালের ৮০০ টাকা হারের পরিবর্তে এবার ২০১৫ সালে আদায় করেছে প্রায় দ্বিগুণ ১৩৫০ টাকা হারে। এতে সন্তানদের পড়াশোনার খরচ জোগাতে অভিভাবকরা হিমসিম খাচ্ছেন।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, দুটি সরকারি স্কুলেই ২০১৪ সালে তৃতীয় থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত প্রতিমাসে টিফিন ফি ৪০ ও টিউশন ফি ৬ টাকা সবমিলে ৪৬ টাকা আদায় করা হতো। ২০১৫ সালে তৃতীয় থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত প্রতিমাসে টিফিন ফি ৭৫ ও টিউশন ফি ৬ টাকার পাশাপাশি আইসিটি ২০ ও অত্যাবশকীয় খাতে ৩০ টাকা সবমিলে ১৩১ টাকা আদায় করা হচ্ছে। ২০১৪ সালে ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত প্রতিমাসে টিফিন ফি ৪০ ও টিউশন ফি ১২ টাকা সবমিলে ৫২ টাকা আদায় করা হতো। ২০১৫ সালে ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত প্রতিমাসে টিফিন ফি ৭৫ ও টিউশন ফি ১২ টাকার পাশাপাশি আইসিটি ২০ ও অত্যাবশকীয় খাতে ৩০ টাকা সবমিলে ১৩৭ টাকা আদায় করা হচ্ছে। ২০১৪ সালে নবম থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত প্রতিমাসে টিফিন ফি ৪০ ও টিউশন ফি ১৫ টাকা সবমিলে ৫৫ টাকা আদায় করা হতো। ২০১৫ সালে তৃতীয় থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত প্রতিমাসে টিফিন ফি ৭৫ ও টিউশন ফি ১৫ টাকার পাশাপাশি আইসিটি ২০ ও অত্যাবশকীয় খাতে ৩০ টাকা সবমিলে ১৪০ টাকা আদায় করা হচ্ছে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব (অডিট ও আইন অধিশাখা) রঞ্জিত কুমার সেন গত বছরের ৬ জুলাই স্বাক্ষরিত এক পরিপত্রে নিরাপত্তা, নৈশপ্রহরী ও অত্যাবশকীয় খাতে বার্ষিক ৩০ টাকা হারে আদায় করতে হবে। এ পরিপত্রের প্রেক্ষিতে ২০১৪ সালের ৩০ নভেম্বর জেলা প্রশাসকের কক্ষে দুটি বিদ্যালয়ের ভর্তি সংক্রান্ত কমিটির এক সভায় বার্ষিক ৩০ টাকা আদায়ের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
অভিভাবকদের অভিযোগ ২০১৪ সাল থেকে ২০১৫ সালে বিভিন্ন খাতে এভাবে বেতন বৃদ্ধি করলেও বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আগেভাগে অভিভাবকদেরকে অবগত করেনি বা জানানোর প্রয়োজনীয়তা মনে করেনি। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিপত্রকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে বার্ষিক অত্যাবশকীয় খাতের ৩০ টাকার পরিবর্তে মাসিক ৩০ টাকা হারে আদায় করা হচ্ছে।
ভি.জে স্কুল কর্তৃপক্ষের হিসেব অনুযায়ী বর্তমানে প্রভাতি ও দিবা শাখায় ২ হাজার ১৬৪ এবং সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ের হিসেব অনুযায়ী ২ হাজার ১শ শিক্ষার্থী পড়াশোনা করে। দুটি স্কুল মিলে ৪ হাজার ২৬৪ শিক্ষার্থীর বার্ষিক আদায় হওয়ার কথা ১ লাখ ২৭ হাজার ৯২০ টাকা। সেখানে আদায় করা হবে ১৫ লাখ ৩৫ হাজার ৪০ টাকা। অর্থাৎ শিক্ষার্থীদের কাছে এ বছরে মাত্র একটি খাতেই বাড়তি আদায় করা হচ্ছে ১৪ লাখ ৭১ হাজার ২০ টাকা। অভিভাবকদের প্রশ্ন বাড়তি আদায় করা প্রায় ১৫ লাখ টাকা বিদ্যালয়ের হাতে গোনা কয়েকজন শিক্ষক ও কর্মচারী যোগসাজশ করে ভাগাভাগি করার পরিকল্পনা নিয়েছে। যা কখনও বাস্তবায়ন করতে দেয়া হবে না। অবিলম্বে সরকারি পরিপত্র অনুযায়ী টাকা আদায় বন্ধ না হলে আন্দোলন গড়ে তোলা হবে। অভিভাবকদের পক্ষ থেকে এজন্য দুর্নীতি দমন কমিশনসহ সংশ্লিষ্ট সকল বিভাগকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানানো হয়েছে।
এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে, ভি.জে সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নুর-ই আলম মোর্শেদা জানান, তিনি ৩ মার্চ বিদ্যালয়টিতে যোগদান করেছেন। তার যোগদানের আগেই সাবেক প্রধান শিক্ষক কিশোরী মোহন সরকার বেতন বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্তবায়ন শুরু হয়। সরকারি পরিপত্রে অত্যাবশকীয় খাতে বার্ষিক ৩০ টাকা আদায়ের সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, ঢাকায় অধিদপ্তরে যোগাযোগ করে জানতে পেরেছেন বিষয়টি মাসিক হিসেবে আদায় করতে হবে। এজন্য শিগগিরই সংশোধনী পরিপত্র পাঠানো হবে। তিনি আরো উল্লেখ করেন, বিদ্যালয়ে বেসরকারিভাবে নিযুক্ত ১১ জন কর্মচারীর বেতন-ভাতা বাবদ প্রতিমাসে ৪৬ হাজার টাকা খরচ হয়ে থাকে। অত্যাবশকীয় খাত থেকে তা মেটানো হবে। কিন্তু এটি বার্ষিক আদায় হলে চাহিদা মেটানো যাবে না।
এ বিদ্যালয়ের সদ্যবিদায়ী প্রধান শিক্ষক কিশোরী মোহন সরকার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমার দায়িত্বকালে সেশনচার্জ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছিলো। তবে অত্যাবশকীয় খাতে মাসিক টাকা আদায়ের কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাহফুজুল হোসেন একই ধরনের কথা বলেন। তিনি দাবি করেন, অধিদপ্তর থেকে শিগগিরই সংশোধনী পরিপত্র হাতে পাওয়া যাবে। বিদ্যালয়টিতে ৯ জন মাস্টাররোলে কাজ করেন। যাদের বেতন-ভাতা বাবদ ৪৫ হাজার টাকা খরচ হয়ে থাকে। অত্যাবশকীয় খাতে আদায় থেকে এ চাহিদা মেটানো হবে।
চুয়াডাঙ্গার বিশিষ্ট আইনজীবী অ্যাডভোকেট এসএম সাইদুজ্জামান গনি টোটন বলেন, সংশোধনী পরিপত্র আসার আগেই দুটি সরকারি বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কোন ক্ষমতাবলে বার্ষিক অত্যাবশকীয় ফি মাসিক হিসেবে আদায় করছেন? এটা একটি ফৌজদারি অপরাধ। আইনগতভাবেই দুটি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অপরাধী। ক্ষতিগ্রস্ত কোনো পক্ষ চাইলে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে আইনের আশ্রয় নিতে পারে।
দুটি সরকারি বিদ্যালয়ের সভাপতি জেলা প্রশাসক মো. দেলোয়ার হোসাইন জানান, দুটি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তাকে বিষয়টি অবগত করেছেন। সংশোধিত পরিপত্রের অপেক্ষায় আছি। সেটি হাতে পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।