বিমান বিধ্বস্ত : প্রশিক্ষণার্থী পাইলটদের ঢাকায় তলব কার্যক্রম বন্ধ

স্টাফ রিপোর্টার: রাজশাহীর শাহ মখদুম বিমানবন্দরে প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় প্রাথমিক তদন্ত শেষ হয়েছে। গত তিন দিন রাজশাহীতে অবস্থান করে বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করেছেন তদন্ত কমিটির প্রধান সিভিল অ্যাভিয়েশনের সিনিয়র ফ্লাইট অপারেশন ইন্সপেক্টর ক্যাপ্টেন এইচএম আক্তার খান। গতকাল দুপুরে তদন্ত শেষে তিনি ঢাকায় ফেরেন। প্রাথমিক তদন্তে পাওয়া তথ্য-উপাত্ত যাচাই-বাছাই করে আগামীকাল চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার কথা জানিয়েছেন তিনি। চার সদস্যের তদন্ত কমিটির অন্যরা হলেন ডা. আবদুল খালেক, লুৎফুল কবির ও আতাউল্লাহ হাশমি। এদিকে রাজশাহীতে বাংলাদেশ ফ্লাইং একাডেমীর প্রশিক্ষণ বিধ্বস্ত হয়ে তামান্না রহমান হৃদি নামে প্রশিক্ষণার্থী পাইলট নিহত হওয়ার পর রাজশাহীর সব ট্রেইনি পাইলটকে ঢাকায় তলব করা হয়েছে। প্রশিক্ষণার্থী পাইলট নিহতের ঘটনায় অন্যান্য পাইলটদের মানসিক অবস্থা বিবেচনা করেই ফ্লাইং কার্যক্রম বন্ধ করাসহ তাদের ঢাকায় ডাকা হয়েছে বলে একাডেমীর একটি সূত্র জানিয়েছে। গত বুধবার দুপুর ২টায় রাজশাহীর শাহ মখদুম বিমানবন্দরে এ দুর্ঘটনার পর সাময়িকভাবে সব বিমান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। সেই সাথে তাৎক্ষণিকভাবে সেখানে প্রশিক্ষণার্থী সব পাইলটকে ঢাকায় ডেকে নেয়া হয়। এতে বাংলাদেশ ফ্লাইং একাডেমীর উড্ডয়ন কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।

গতকাল সকালে তদন্ত কমিটির সাথে কথা বলে জানা গেছে, দুপুরে বিমানটি উড্ডয়নের আড়াই থেকে তিন মিনিটের মাথায় পাইলট বিমানবন্দর অপারেটরের সাথে যোগাযোগ করে জরুরি অবতরণের কথা বলেন। বিমানবন্দর অপারেটর জরুরি অবতরণের জন্য সবুজসঙ্কেত দেয়ার পরই প্রশিক্ষণ বিমানটি অবতরণের চেষ্টা করে। তবে বিমানের কি ধরনের ত্রুটি ছিলো বিমানবন্দর স্টেশন মাস্টারের সাথে সে সম্পর্কে কোনো কথা হয়নি। বিমানবন্দরের স্টেশন মাস্টার ও পাইলট শাহেদ কামালের কথোপকথনের অডিও বার্তা সংগ্রহ করেছে তদন্ত কমিটি। তদন্ত কমিটির প্রধান সিভিল এভিয়েশনের সিনিয়র ফ্লাইট অপারেশন ইন্সপেক্টর ক্যাপ্টেন এইচএম আক্তার খান হতাহত সম্পর্কে জানান, প্রশিক্ষণ বিমানের দু পাখায় ৫৯ লিটার করে ৯৮ লিটার জ্বালানি ছিলো। বিমানটি রানওয়েতে ডান দিকে প্রথমে আঘাত করে। এ সময় বিমানের বাম পাখা আকাশের দিকে উঁচু হয়ে যায়। এরপর ওই পাখার সব জ্বালানি তেল বিমানের মধ্যে থাকা পাইলট ও প্রশিক্ষণার্থী পাইলটের ওপর পড়ে। এর ফলে কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই আগুন ধরে যায় এবং দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। দুটি কারণে আগুন লাগার সম্ভাবনা রয়েছে। বিমানের ভেতরে স্পার্ক থেকে অথবা বিমান রানওয়েতে আছড়ে পড়ার সময় ঘর্ষণে আগুন লাগতে পারে। তবে কি কারণে এ দুর্ঘটনা তা তদন্ত শেষ না করে বলা কঠিন বলে তিনি জানান। তবে তিনি আশা প্রকাশ করেন, আগামীকাল নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই তারা তদন্ত রিপোর্ট জমা দেবেন।

প্রশিক্ষণ উড়োজাহাজ সেসনা-১৫২ সম্পর্কে এইচএম আক্তার খান বলেন, দুনিয়াব্যাপি এ জাতীয় উড়োজাহাজ দিয়েই পাইলট তৈরি করা হয়। এসব উড়োজাহাজ যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি। এর গুণগত মান নিয়ে প্রশ্ন করা যাবে না। আর তার প্রশিক্ষক লে. কর্নেল (অব.) শাহেদ কামাল খুবই দক্ষ। তার পাঁচ হাজার ঘণ্টা প্রশিক্ষণ উড্ডয়নের অভিজ্ঞতা রয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দু বছর ধরে বাংলাদেশ ফ্লাইং একাডেমী রাজশাহীর শাহ মখদুম বিমানবন্দরটি ব্যবহার করে আসছে। রাজশাহীতে তাদের যে দুটি প্রশিক্ষণ বিমান রয়েছে সেগুলো ভাড়া করা। তাদের উড্ডয়ন (ব্যবহারিক) ক্লাসগুলো রাজশাহীতে হয়। তবে ফ্লাইং একাডেমির তত্ত্বীয় সব ক্লাস ঢাকায় শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পরিচালিত হয়।