স্টাফ রিপোর্টার: রাজশাহীর হজরত শাহ মখদুম বিমানবন্দরে গতকাল বুধবার দুপুরে বাংলাদেশ ফ্লাইং একাডেমী অ্যান্ড সিভিল এভিয়েশনের একটি প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়েছে। এতে বিমানের প্রশিক্ষাণার্থী পাইলট নিহত এবং এর ক্যাপ্টেন গুরুতর আহত হয়েছেন। তাকে উদ্ধার করে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। নিহত প্রশিক্ষাণার্থী পাইলটের নাম তামান্না রহমান (২২)। তার বাবা চিকিৎসক আনিসুর রহমান ঢাকার বাসিন্দা। তামান্নাদের গ্রামের বাড়ি টাঙ্গাইলে। দুর্ঘটনায় বিধ্বস্ত বিমানের ভেতরেই পুড়ে কয়লা হয়ে যান তামান্না।
বিমানের আহত ক্যাপ্টেন লে. কর্নেল (অব.) সাইদ কামালকে দুর্ঘটনার পর উদ্ধার করে প্রথমে রাজশাহী সম্মিলিত সামরিক হাসাপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে ঢাকা থেকে পাঠানো একটি বিমানে তাকে ঢাকায় স্থানান্তর করা হয়। তার শরীরের ৫০ শতাংশ পুড়ে গেছে।
ফ্লাইং একাডেমী সূত্রে জানা গেছে, তামান্না রাজশাহীতে পার্সোনাল পাইলট লাইসেন্স (পিপিএল) কোর্সে ভর্তি হয়েছিলেন। নিয়ম অনুযায়ী, এ কোর্সে এককভাবে ৫০ ঘণ্টা বিমান চালাতে পারলে সনদ দেয়া হয়। এরপর কমার্শিয়াল পাইলট লাইসেন্স (সিপিএল) কোর্সে ভর্তি হতে হয়। সেখানে এককভাবে ১৫০ ঘণ্টা বিমান চালানোর অভিজ্ঞতা অর্জন করলে সনদ দেয়া হয়। গতকাল মঙ্গলবার তামান্নাকে পিপিএল কোর্সের অধীনে এককভাবে বিমান চালানোর অনুমতি দেয়া হয়। গতকাল বুধবার দুপুরে তিনি বিমানে ওঠেন। তার এককভাবে বিমান চালানোর কথা থাকলেও তার সাথে প্রশিক্ষক সাইদ কামাল ছিলেন। সিভিল এভিয়েশনের জ্যেষ্ঠ উপপরিদর্শক এনামুল কবির জানান, বেলা একটা ৫৮ মিনিটে বিমানটি বিধ্বস্ত হয়। উড্ডয়নের পরপর টার্নিং নিতে গিয়ে বিমানটি রানওয়ের পূর্ব পাশে গিয়ে পড়ে। সাথে সাথে বিমানটিতে আগুন ধরে যায়। রানওয়ের পূর্ব পাশের দেয়াল ঘেঁষে পবা উপজেলার নওহাটা পৌর এলাকার চালিকীপাড়া মহল্লা। এ মহল্লার রিকশাচালক মোহাম্মদ ডাবলু (২৮) ও লুৎফর রহমান ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী। ডাবলু বলেন, বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার শব্দ শুনে তিনি দেয়াল টপকে বিধ্বস্ত বিমানের কাছে যান। এ সময় বিমানের মাঝখান থেকে প্রশিক্ষণার্থী পাইলট মেয়েটি হাত ইশারা করে তাকে ডাকছিলেন আর চিৎকার করে বলছিলেন, আমাকে বাঁচান, আমাকে বাঁচান। এ সময় বিমানটি জ্বলছিলো। তার মাঝখানে ছিলেন মেয়েটি। তাদের কাছে পানি ছিলো না। তারা আগুনের তাপের জন্য কাছে ভিড়তে পারছিলেন না। পুরুষ লোকটি বিমানের জানালার কাঁচ ভেঙে বাইরে পড়েছিলেন। তিনি ও লুৎফর মাটিতে গড়াগাড়ি করিয়ে পুরুষ লোকটির শরীরের আগুন নেভান।
লুৎফর রহমান বলেন, তারা বিমান থেকে পুরুষ লোকটিকে উদ্ধার করে আগুন নেভানোর প্রায় ২০ মিনিট পর ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি আসে। তারা যখন আগুন নিভিয়ে ফেলেন, তখন বিমানের ভেতেরে নারী পাইলট পুড়ে কয়লা হয়ে গিয়েছিলো।
ঘটনার পর সেখানে গিয়ে দেখা যায়, যেখানে বিমানটি প্রথমে আছড়ে পড়েছিলো সেখানে বিমানের সামনের চাকাটি ভেঙে পড়ে রয়েছে। খানিকটা জায়গার মাটি গর্ত হয়ে গেছে। সেখান থেকে প্রায় ৫০ হাত দূরে বিমানটির ধ্বংসাবশেষ পড়ে রয়েছে। এর ককপিট, ইঞ্জিন ও পাখা পুড়ে আলাদা হয়ে গেছে।
ঘটনার পরপরই রাজশাহীর জেলা প্রশাসক মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী, পবা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কায়সারুল ইসলামসহ র্যাব, পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা সেখানে উপস্থিত হন। ঘটনা তদন্তে সিভিল এভিয়েশনের ফ্লাইট সেফটি অ্যান্ড রেগুলেশনের পরিচালক নাজমুল আনামকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ কমিটি বিকেলেই একটি হেলিকপ্টারে করে রাজশাহীতে ঘটনাস্থলে পৌঁছান। তারা তদন্তকাজ শুরু করেছেন।