চাঁদসী ক্ষত চিকিৎসক জরিমানা দিয়ে ফের খুলেছেন দাওয়াখানা

দর্শনা বাসস্ট্যান্ডের সেই কেন্দ্রে ভ্রাম্যমাণ আদালতের সিলগালার আদেশের ১৪ দিন

 

স্টাফ রিপোর্টার: দর্শনা বাসস্ট্যান্ডে একই স্থানে ৩ জন চাঁদসী চিকিৎসক। চাঁদসী চিকিৎসার ক্ষেত্রে কোনো ডিগ্রি না থাকলেও বংশ পরম্পরায় রূপ কুমার ও অজিত কুমার তাদের কার্যক্রম চালাচ্ছেন। তবে হান্নান কোন বংশের দোহাই দিয়ে চালাচ্ছেন চিকিৎসার নামে অপ-চিকিৎসা? কারো কোনো ডিগ্রি না থাকলে কি হবে তাই বলে নিজেকে ডাক্তার দাবি করতে কমতি নেই তাদের মধ্যে। রোগীদের ব্যবস্থাপত্রসহ জটিল ও কঠিন রোগের চিকিৎসা চালিয়ে যাচ্ছেন নির্ধিতায়। দর্শনাসহ আশপাশ এলাকায় হাতুড়ে চিকিৎসালয়ের সংখ্যা বাড়ছিলো ব্যাঙ্গের ছাতার মতো। কয়েক দিন আগে চুয়াডাঙ্গা তৎকালীন এনডিসি মুনিবুর রহমানের নেতৃত্বে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালিত হয়। এ অভিযানে বেশ কয়েকটি চিকিৎসালয়ের অভিযুক্ত ডিগ্রিবিহীন চিকিৎসককে বিভিন্ন অভিযোগে অর্থদণ্ড করা হয়। দর্শনা বাসস্ট্যান্ডের সবজান্তা চিকিৎসক আব্দুল হান্নানকে না পেয়ে তার চিকিৎসালয় সিলগালা করেন ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিচারক মুনিবুর রহমান। পরদিন আব্দুল হান্নান ১০ হাজার টাকা জরিমান পরিশোধ করেন। হান্নানসহ অভিযুক্ত সব হাতুড়ে ডাক্তারের অপচিকিৎসা শুরু হয়েছে ফের। হান্নান তো ইতোমধ্যে ভূরিভোজের আয়োজনের মধ্যদিয়ে চিকিৎসালয়কে জাঁকজমককরণে মেতে উঠেছেন। রোগ ভালো হোক বা না হোক তাতে কিছু এসে যায় না ওই সকল হাতুড়ে চিকিৎসকদের। চাঁদসী চিকিৎসকদের কোনো ডিগ্রি না থাকলেও দম্ভের সাথেই বলতে শোনা যায়, ডিগ্রির কি দরকার? আমরা তো বংশ পরম্পরায় ডাক্তার। কয়েক পুরুষ ধরেই এ চিকিৎসা চালাচ্ছি আমরাই। প্রশ্ন উঠেছে রূপ কুমার ও অজিত বংশ পরম্পরায় চাঁদসী চিকিৎসক তবে হান্নান কোন বংশের পরিচয়ে চাঁদসী চিকিৎসক বনে গেছেন?

জানা গেছে, বরিশালের গৌরনদী উপজেলার একটি গ্রামের নাম চাঁদসী। প্রায় ১শ বছর আগে সেই গ্রামে বসবাস করতেন পদ্ম বিশ্বাস। সে সময় তিনি মানবদেহের কাটা-ছিঁড়া, পচা ও চুলকানির ক্ষত চিকিৎসা করতেন নিজের উদ্ভাবিত ওষুধের মাধ্যমে। সেই থেকে চিকিৎসা শাস্ত্রে চাঁদসী চিকিৎসা হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। পরে কুষ্টিয়ার বিশ্বেস্বর পোদ্দারের মাধ্যমে এলাকায় এ চিকিৎসা প্রচার ছড়িয়ে পড়ে। এদিকে দর্শনা বাসস্ট্যান্ডে একই স্থানে রয়েছে ৩টি চাঁদসী চিকিৎসা কেন্দ্র। একেকটি কেন্দ্রে একাধিক সাইনবোর্ড টানানো রয়েছে। সাইনবোর্ডে বহুরোগ নিরাময়ের মধ্যে উল্লেখ করা হয়েছে- চুলকানি, পাঁচড়া, দাদ, একজিমা, কাটা ঘা, পুড়া ঘা, অর্শ্ব, ভগন্দর, গণরিয়া, সিফিলিস, যৌনসহ জটিল-কঠিন অসংখ্য রোগের নাম। অভিযোগ উঠেছে, কথিত ডাক্তার রূপ কুমার বিশ্বাস, ডাক্তার অজিত বিশ্বাস ও ডাক্তার মো. হান্নান দীর্ঘদিন থেকে নিজেদের চাঁদসী ক্ষত চিকিৎসক দাবি করে রোগীদের ব্যবস্থাপত্রসহ ওষুধ দিয়ে হাতিয়ে নিচ্ছেন মোটা অঙ্কের টাকা। এছাড়া হান্নান তার চিকিৎসালয়ে হারহামেশায় করছেন নাকের পলিপাস ও অশ্বের অস্ত্রোপচার।

এ বিষয়ে অজিত বিশ্বাসের সাথে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তার আরএমপি ডিগ্রি রয়েছে। তবে চাঁদসী চিকিৎসকের ক্ষেত্রে কোনো ডিগ্রি নেই। একই কথা বলনের রূপ কুমার বিশ্বাস। তবে হান্নান বলেছেন, তার বিএমএটিসি (ঢাকা) ডিগ্রি রয়েছে। নিজেরা রোগীদের যে ব্যবস্থাপত্র দিয়ে থাকেন সে ব্যাপারে পরস্পর অভিযুক্ত ৩ কথিত ডাক্তারের কাছে জানতে চাইলে কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি। রাতারাতি আঙুল ফুলে কলাগাছ বনে গেছেন আব্দুল হান্নান। এসব বিষয় খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্তাদের কাছে দাবি তুলেছে ভুক্তভোগী ও সচেতনমহল।