আইন প্রয়োগে গড়িমসি সুন্দর সমাজ গঠনে অন্তরায়

মস্তিষ্ক বিকৃত বা পেটের তীব্র যন্ত্রণা ও জটিল রোগের কারণেই শুধু মানুষ আত্মহত্যা করে না, আত্মহত্যার আড়ালে আরো অনেক কিছুই লুকিয়ে থাকে। যে কারণেই হোক, আত্মহত্যার করা যেমন কারোরই আইনগত অধিকার নেই, তেমনই আত্মহত্যায় কেউ প্ররোচনা করলে তাকেও আইনের আওতায় নিয়ে বিচারের মুখোমুখি করার বিধান বিদ্যমান। এরপরও ক’জনের আত্মহত্যার নেপথ্যে লুকিয়ে থাকা মূল কারণ উন্মোচনে পুলিশি তদন্ত হয়? প্রকাশ্যে অবৈধযানের অপঘাতে অপমৃত্যুও যখন বেমালুম আইনের বাইরে থেকে যায়, তখন আত্মহত্যার মতো ঘটনাকে গুরুত্ব দেয়ার যুক্তি কতোটাই আর গ্রহণযোগ্য হতে পারে? তবু…

গতকাল দৈনিক মাথাভাঙ্গা পত্রিকায় একটি অপমৃত্যুর খবর বেশ গুরুত্বসহকারে পত্রস্থ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, এক নারী বিষপান করলে তাকে হাসপাতালে নেয়া হয়। চিকিৎসার এক পর্যায়ে তার অবস্থা সঙ্কটাপন্ন হয়ে পড়লে চিকিৎসককে ডাকা হয়। চিকিৎসক রোগী দেখে রোগীর শয্যাপাশে থাকা লোকজনকে কিছুক্ষণ ধৈর্য ধরার জন্য বলেন। তাতে সাড়া না দিয়ে রোগীর নিথর দেহ আড়কোলা করে তুলে দ্রুত হাসপাতাল থেকে সরিয়ে নেয়া হয়। কেন? কারণ, মূলত থানা পুলিশ এড়িয়ে ময়নাতদন্ত ছাড়াই মরদেহ দাফনের তোড়জোড়। দৃশ্য দেখে কর্তব্যরত চিকিৎসক দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলেন, মানুষ কতোটা অমানবিক না হলে এরকমটি করে?

যে সমাজে অহরহ আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে, সেই সমাজে আত্মহত্যার বিষয়টি গুরুত্বহীন হয়ে পড়লেও এ প্রবণতা সমাজের জন্য আত্মঘাতী বললে ভুল হয় না। দিন দিন যে হারে আত্মহত্যা প্রবণতা ছড়াচ্ছে তা অব্যাহত থাকলে অবুঝ শিশুদেরও যে রক্ষা করা অসম্ভব হয়ে পড়তে পারে তা বলাই বাহুল্য। তার আলামত মাঝে মাঝেই সমাজ টের পায়। তা না হলে স্কুলগামী ছাত্র-ছাত্রী তুচ্ছ বিষয়ে আত্মঘাতী হবে কেন? আত্মহত্যা প্রবণতা রোধে অবশ্যই প্রতিটি ঘটনারই প্রকৃত কারণ উন্মোচন প্রয়োজন। অপমৃত্যুর কারণ উন্মোচনে পুলিশি তদন্তের বিধান বিদ্যমান। আত্মহত্যার অপচেষ্টা চালালেও আইনের দৃষ্টিতে তদন্তের দাবি রাখে। অথচ আত্মহত্যা করা মৃতদেহ দ্রুত সরিয়ে নেয়ার মতো হিম্মত প্রকাশ্যেই দেখাচ্ছে সমাজেরই মানুষ।

পেটের পীড়ায় বা হিস্টোরিয়ায় ভুগছিলো বলে তথ্য দিয়ে থানায় অপমৃত্যু মামলা রেকর্ড করে বিশেষ তদবিরে ময়নাতদন্ত ছাড়াই লাশ দাফনের সুযোগে বহু ঘটনা আড়াল হয়ে যায়। এ সুযোগের আড়ালে হত্যার মতো ঘটনাও ধামাচাপা দেয়ার পাঁয়তারা অমূলক নয়। মূলত আইন প্রয়োগে কিছু কিছু ক্ষেত্রে নমনীয়তা এবং আত্মহত্যার প্রকৃত কারণ উন্মোচন করে প্রকৃত দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেয়া এ প্রবণতা বৃদ্ধির জন্য বহুলাংশে দায়ী। সমাজের ক্ষতিকর প্রবণতা রোধেই আইন প্রণয়ন। সমাজের স্বার্থেই আইন প্রয়োগের কাঠামো গঠন। এসব থেকেও তার যথাযথ প্রয়োগে গড়িমসি সুন্দর সমাজ গঠনে অবশ্যই অন্তরায়।