অস্ট্রেলিয়ার পঞ্চম নাকি নিউজিল্যান্ডের প্রথম?

মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে আজ বাংলাদেশ সময় সকাল সাড়ে ৯টায় শুরু হচ্ছে শিরোপা জয়ের লড়াই

স্টাফ রিপোর্টার: বিশ্বকাপের ফাইনালের মঞ্চ অস্ট্রেলিয়ার মোটেই অচেনা নয়। এ নিয়ে সপ্তমবার বিশ্বকাপের শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচে খেলতে যাচ্ছে তারা। সোনালি ট্রফিটায় চারবার চুমোও এঁকেছে সোনা রঙের জার্সিধারীরা। অন্যদিকে নিউজিল্যান্ড এ মঞ্চে আগন্তুক; এবারই প্রথম বিশ্বকাপের ফাইনালে পা পড়েছে কিউইদের।
২০১৫ বিশ্বকাপের ফাইনালের আগে ক্রিকেট রোমান্টিকদের মনে তাই একটাই প্রশ্ন-এবার কি পঞ্চম শিরোপা জিতবে অস্ট্রেলিয়া, নাকি প্রথমবারের মতো শিরোপা জিতে ইতিহাস গড়বে নিউজিল্যান্ড? মহামূল্যবান এ প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যাবে আজ রোববার। মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে এ দিন বাংলাদেশ সময় সকাল সাড়ে ৯টায় শুরু হবে দু আয়োজকের শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচ।
ইতিহাসের হাতছানি নিয়ে অস্ট্রেলিয়ায় পা রাখা নিউজিল্যান্ড বিশ্বকাপের শুরু থেকেই চোখ জুড়ানো ক্রিকেট খেলে যাচ্ছে। ব্রেন্ডন ম্যাককালাম, মার্টিন গাপটিল, কেন উইলিয়ামসন, গ্র্যান্ট এলিয়ট-ব্যাটসম্যানরা আছেন দারুণ ছন্দে। বল হাতে উজ্জ্বল ট্রেন্ট বোল্ট আর টিম সাউদিরা। সব মিলিয়ে এ বিশ্বকাপে আক্রমণাত্মক ক্রিকেটের পসরা মেলে ধরেছে নিউজিল্যান্ড। অধিনায়ক ম্যাককালাম সতীর্থদের কানে সবসময়ই জপে এসেছেন উপভোগের মন্ত্র। ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বড় আর গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে নামার আগেও একই মন্ত্র নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার সংকল্প তাদের। আমাদের এরকমই খেলতে হবে। এভাবেই আমরা নিয়মিত দলগুলোকে হারাচ্ছি।
অস্ট্রেলিয়া দলে এতোটা ছন্দ নেই। স্টিভেন স্মিথ ছাড়া ব্যাটসম্যানদের কেউই খুব একটা ধারাবাহিক নন। অধিনায়ক মাইকেল ক্লার্ক বড় ইনিংস খেলতে পারছেন না, টানা পাঁচটি ম্যাচ পর সেমি-ফাইনালে কিছু রান পান উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান অ্যারন ফিঞ্চ। আরেক উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান ডেভিড ওয়ার্নারও রানে নেই।
মিচেল স্ট্যার্ক বিশ্বকাপের শুরু থেকে ভালো বল করছেন ঠিক, কিন্তু নিজ দেশে পরিচিত জল-হাওয়ায় এখনো নিজেকে হারিয়ে খুঁজছেন মিচেল জনসন। ভালো একজন স্পিনারের অভাব আগাগোড়াই ছিলো তাদের। এসব সঙ্কট আছে অস্ট্রেলিয়া দলে, তবে একটি বিষয় চিরন্তন-নিজেদের আঙিনায় এ দলটি সবসময়ই অজেয় রূপে দেখা দেয়। ছয়টি ফাইনাল খেলার অভিজ্ঞতা তো থাকছেই দলটির।
সবকিছু বিবেচনা করেই হয়তো নিউজিল্যান্ডের কিংবদন্তি মার্টিন ক্রো ফাইনালটিকে আখ্যা দিয়েছেন বড় ভাই আর ছোট ভাইয়ের লড়াই হিসেবে। পরিসংখ্যানেও অবশ্য অস্ট্রেলিয়াই বড় ভাই। ওয়ানডেতে ১২৬ বারের মুখোমুখি লড়াইয়ের ৮৫টিই জিতেছে অস্ট্রেলিয়া, ৩৫টিতে জয় পায় কিউইরা। বাকি ছয়টি ম্যাচ পরিত্যক্ত হয়।
পরিসংখ্যানের পরিধিটা ছোট করে আনলেও সেই একই অসম লড়াইয়ের দেখা মেলে। বিশ্বকাপে মুখোমুখি হওয়া ৯ ম্যাচের ৬টিতে জিতেছে অস্ট্রেলিয়া, আর নিউজিল্যান্ড জয় পায় তিনটিতে। হতে পারে নিউজিল্যান্ডে রাগবিসহ আরও অনেক খেলার চেয়ে ক্রিকেট কম জনপ্রিয়; কিন্তু প্রসঙ্গ যখন দেশের লড়াই, নিউজিল্যান্ডের শান্তিপ্রিয় মানুষও তখন উত্তাপ ছড়াতে পারে। ক্রোর প্রীতিভরা কথা অথবা পরিসংখ্যানের অসম অবস্থা, কোনোটির দিকে না তাকিয়েই তারা অনলাইনে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে লড়াই করে চলছে। প্রতিপক্ষকে আক্রমণাত্মক সব কথা বলে উড়িয়ে দিয়ে একটি স্বপ্ন দেখছে তারা-এবার ইতিহাস গড়বে নিউজিল্যান্ড।
তাসমান সাগরের এপার-ওপারে দু জাতির লড়াই। সুরের মন্ত্রে স্বাধীনতার দীক্ষা দু দেশের মধ্যে বেশ ভালো বন্ধুত্বও আছে। ম্যাচের আগের দিন ট্রফি নিয়ে ফটোসেশনে গিয়ে দু অধিনায়ক ক্লার্ক আর ম্যাককালাম নাকি একে অপরের শুভকামনাও করে এসেছেন। এ প্রীতি আর সৌহার্দ্য এবং উত্তেজনার রেণু ছড়ানো লড়াইয়ের মধ্যে ম্যাচের আগের দিন অস্ট্রেলিয়া দলের সংবাদ সম্মেলনের শুরুতেই বেজে ওঠে বিদায়ের সুর। এ ম্যাচ শেষেই ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ইতি টানার ঘোষণা দিয়ে দিয়েছেন মাইকেল ক্লার্ক।
ক্লার্ক এ কথা বলার পরই সবার মনে প্রশ্ন জাগে-অস্ট্রেলিয়ার খেলোয়াড়রা কি অধিনায়কের বিদায়ে একটি বিশ্বকাপ শিরোপাই উপহার দেবেন? ক্লার্ক অবশ্য বিষয়টিকে এভাবে দেখেন না। এমন সময়েও তার চোয়ালে আবেগের শিথিলতা নেই, আছে পেশাদার কাঠিন্য।
এটা বিশেষ ব্যাপার। কিন্তু তা এটা আমার শেষ ম্যাচ বলে নয়। … আবেগ নয়, দক্ষতাই আপনাকে বড় খেলা এবং বড় টুর্নামেন্ট জেতাবে। আর আগামীকাল (রোববার) এর ব্যতিক্রম হবে না।
বিদায়ের রাগ নিউজিল্যান্ড দলেও বাজছে, সেটা ড্যানিয়েল ভেটোরিকে ঘিরে। এ ফাইনালই হয়তো অসাধারণ এক ক্রিকেট যোদ্ধার ক্যারিয়ারের শেষ লড়াই। তার ক্যারিয়ার সায়াহ্নের এ লড়াইটা বিশ্বকাপ ট্রফির সোনালি আলোয় রাঙিয়ে দিতে চায় নিউজিল্যান্ড দল।