প্রবাসী এসব বাংলাদেশির খোঁজ কি আমরা রাখি?

 

মরুর আগুনে পুড়ে, গহিন অরণ্যে রক্তাক্ত হয়ে কিংবা কলকারখানায় ঝুঁকিপূর্ণ কাজে যারা দেহের রক্ত পানি করছেন তাদের পাঠানো অর্থ জাতীয় অর্থনীতিতে বড় ভূমিকা রাখে। তারা সোনালি মুদ্রা পাঠান, দেশে যেন সেই অর্থই গ্রামীণ অর্থনীতির প্রাণ। তবে প্রবাসী এসব বাংলাদেশির খোঁজ কি আমরা রাখি? তারা তখনই আমাদের খবরের বিষয় হন যখন ইরাক, লিবিয়া, আফগানিস্তান বা অন্য কোনো ঝুঁকিপূর্ণ দেশে মৃত্যু তাদের তাড়া করে। কেউ কেউ তো লাশ হয়ে তারপর গণমাধ্যমের শিরোনাম হন। লিবিয়ায় অপহৃত দু বাংলাদেশি মুক্তি পেয়ে দেশে ফিরছেন- এ খবরের রেশ না কাটতেই মালদ্বীপে দুজন নিহত ও ৯ জনের আহত হওয়ার ঘটনা।

বিদেশে আমাদের কোথাও হাইকমিশন, কোথাও বা দূতাবাস থাকে- কর্মকর্তারাও সেখানে আছেন। সংশ্লিষ্ট দেশের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক উন্নয়নের পাশাপাশি ওখানকার প্রবাসী বাংলাদেশিদের দেখভাল করাটাও তাদের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। কিন্তু আমরা প্রায়ই দেখি ভিন্ন চিত্র। যেমন, এবার রনি নামের একজন প্রবাসীকর্মী বলেছেন, স্থানীয় রাজনৈতিক সহিংসতার মধ্যে বাংলাদেশিরাও আক্রান্ত হচ্ছেন; কিন্তু বাংলাদেশের হাইকমিশন সমস্যাটিকে গুরুত্ব দিচ্ছে না।

আমাদের প্রশাসনে পেশাদারির অনুপস্থিতি নতুন কিছু নয়। অনেকের কাছে সরকারি চাকরি মানেই হচ্ছে দায়িত্ব আছে, দায় নেই। কাজ আছে, কিন্তু করতে হয় না। বরখাস্ত হওয়ার ভয় নেই, মাস শেষে বেতনও কেউ আটকে দেবে না। তার ওপর থাকে রাজনৈতিক খুঁটির জোর- যার দল যতো শক্তিশালী তার ততো বেশি প্রভাব। পরিচয়টি ক্ষমতাসীন দলের হলে তো সোনায় সোহাগা! আচরণবিধি যে নেই তা নয়; কিন্তু লঙ্ঘন করে পার পাওয়া গেলে তত্ত্বকথা কে মানতে চায়! ফলে বঞ্চিত হয় সেই সব মানুষ, যাদের করের টাকায় সরকারি চাকুরেদের বেতন-ভাতা হয়।

দেশে বাংলাদেশের মিশনগুলোর উদাসীনতা নিয়ে মাঝেমধ্যেই অভিযোগ ওঠে, গণমাধ্যমে খবর হয় এবং সেসব পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নজরও নিশ্চয়ই এড়ায় না। কিন্তু আমলাতান্ত্রিকতার বাধা পেরিয়ে কাঙ্ক্ষিত সুফলটি ভোগান্তির শিকার মানুষটির কাছে পৌঁছে না। এমনও দেখা গেছে, কোনো একটি দেশে বিভিন্ন দেশের কর্মীরা স্থানীয় অস্থিরতার শিকার হয়েছেন; তারপর অন্যান্য দেশের মিশন তৎপর হয়ে ত্বরিত গতিতে যখন পাশে দাঁড়ায়, গড়িমসি চলে আমাদের মিশনে।

পেশাদারি, দায়িত্ববোধ, জবাবদিহির মানসিকতা এক দিনে গড়ে ওঠে না। স্বাধীন দেশ প্রাপ্তির পর চার দশকেরও বেশি সময় পার হয়ে গেছে। জনপ্রশাসনে সুশৃঙ্খলা এবং সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সততা নিশ্চিত করা গেলে এই চার যুগে দেশ উন্নতির কোন চূড়ায় উঠে যেতো ভাবা যায়? তারপরও পরিবর্তন আসতেই হবে। দেশ-বিদেশে প্রত্যেক বাংলাদেশি নাগরিকের অধিকারের সুরক্ষা দিতেই হবে। মালদ্বীপে আক্রান্ত বাংলাদেশি নাগরিকদের সব ধরনের সহায়তা প্রদানের পাশাপাশি সেখানে বসবাসকারী বাংলাদেশি নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ দূতাবাস যথাযথ ব্যবস্থা রাখবে বলে আমরা আশা করি।