আমাকে হত্যা না করে উনি ঘরে ফিরবেন না : প্রধানমন্ত্রী

স্টাফ রিপোর্টার: প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বিএনপি নেত্রীর গুলশান কার্যালয়ে অবস্থানের আবারো সমালোচনা করে বলেছেন, উনি কীসের আশায় বাড়ি ছেড়ে সেখানে গিয়ে বসে আছেন? মনে হচ্ছে আমাকে হত্যা না করে বোধহয় উনি ঘরে ফিরে যাবেন না! কিন্তু আল্লাহ আমাকে বাঁচিয়ে রাখলে উনি কী করে তা করবেন? মৃত্যু নিয়ে আমি কোনো ভয় করি না। আমার যতোক্ষণ নিঃশ্বাস আছে, ততোদিন দেশের জনগণের কল্যাণে কাজ করে যাবো। এটা থেকে আমাকে বিরত রাখার সাধ্য খালেদা জিয়ার নেই।

গতকাল শুক্রবার মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে রাজধানীর খামারবাড়িস্থ কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। শেখ হাসিনা বলেন, খালেদা জিয়া অবরুদ্ধ নন। উনি নিজেই গেটে তালা লাগিয়ে দলীয় কার্যালয়ে বসে আছেন। ওই কার্যালয়ে বসে দেশ ও জনগণের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছেন। দেশের সম্পদ বিনষ্ট এবং মানুষের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলছেন। একাত্তরের পাক হানাদারদের মতোই জামায়াতকে সাথে নিয়ে খালেদা জিয়া দেশে গণহত্যা চালিয়ে যাচ্ছেন। তিনি বলেন, ৮১ দিন আন্দোলন করেও উনি ব্যর্থ হয়েছেন। সেই ব্যর্থতা থেকে উনি আর উঠে আসতে পারবেন না। গত ৮১ দিনেও (হরতাল-অবরোধ) উনার আক্কেলে পানি পড়েনি, আর পড়বেও না। সবাই তাকে ছেড়ে চলে গেছেন। তার পাশে এখন তো আর কেউ নেই, উনি এখন একা। প্রধানমন্ত্রী কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, আমরা আর কাউকে দেশের মানুষের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে দেবো না। বাংলাদেশে জঙ্গিবাদ সৃষ্টি হবে না, হতে দেবো না। দেশবাসীকে সকল অপশক্তির বিরুদ্ধে রূখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, দেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে। দেশের এ অগ্রযাত্রা কেউই বাধাগ্রস্ত করতে পারবে না। লাখো শহীদের আত্মত্যাগ কখনই বৃথা যাবে না।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, খালেদা জিয়া দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বে বিশ্বাস করেন না বলেই মহান স্বাধীনতা দিবসে জাতীয় স্মৃতিসৌধে একাত্তরের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে যাননি। অমর একুশে ফেব্রুয়ারিতেও ভাষা শহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে উনি কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে যাননি। তিনি বলেন, বাঙালি জাতি এক সাগর রক্তের বিনিময়ে যুদ্ধ করে দেশকে স্বাধীন করেছে। তাই দেশের স্বাধীনতা নিয়ে কাউকে ছিনিমিনি খেলতে দেবো না। তাই কারা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে স্মৃতিসৌধে যায়নি, তাদের একটি তালিকা করার হয়তো সময় এসে গেছে। শেখ হাসিনা বলেন, জিয়াউর রহমানকে বিএনপির নেতারা বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবর্তক বলার চেষ্টা করেন। উনি কীভাবে গণতন্ত্রের পক্ষের লোক হন? উনি তো প্রতি রাতে কার্ফ্যু দিয়ে দেশ চালিয়েছেন। ৭৫-৮৬ পর্যন্ত ১০টি বছরই প্রতি রাতে কার্ফ্যু দিয়ে দেশ চালানো হয়। তাই বহুদলীয় গণতন্ত্র নয়, জিয়াউর রহমান কার্ফ্যু গণতন্ত্র দিয়েছিলেন।

কথিত সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের প্রতি ইঙ্গিত করে শেখ হাসিনা বলেন, দেশে একটি শ্রেণি আছে যারা সবসময়ই যারা দেশের উন্নয়ন করে তাদের পেছনে লাগে, ষড়যন্ত্র করে। কীভাবে পেছনের দরজা দিয়ে ক্ষমতায় গিয়ে কিছু পাওয়া যায় সেই ফাঁক-ফোকর খোঁজে। যিনি এতিমের টাকা পর্যন্ত মেরে খেয়েছেন তাঁর (খালেদা জিয়া) পক্ষ নিয়ে আবার দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলেন! তাঁরা কি কখনো হাসপাতালে গিয়ে পোড়া মানুষের যন্ত্রণার আর্তচিত্কার শুনেছেন? নিহত পরিবারগুলোর কী অবস্থা তার কি কখনো খোঁজ নিয়েছেন? তিনি বলেন, তাদের মানবতাবোধের পক্ষে বিকেক জাগ্রত হয় না, হত্যাকারীর মানবতাবোধের ব্যাপারে তাদের কণ্ঠ সোচ্চার! তারা আক্রান্তদের পক্ষে নন, আক্রমণকারী খুনি-হত্যাকারীর মানবাধিকার রক্ষা নিয়েই ব্যস্ত হয়ে পড়েন। এটা কোনো ধরনের মানসিকতা বা রাজনীতি? তিনি বলেন, যাদের মধ্যে সামান্য বিবেক ও মনুষ্যত্ব আছে তারা কখনোই বীভত্স কায়দায় মানুষকে পুড়িয়ে হত্যার সাথে জড়িত এবং যারা নাশকতা ও ধ্বংসযজ্ঞ চালাচ্ছে তাদের সমর্থন দিতে পারেন না। ভোট দিতে পারেন না। বরং বিবেক ও মনুষ্যত্ব থাকলে মানবতাবিরোধী ও গণহত্যার সাথে জড়িতদের প্রত্যাখ্যান করে সঙ্গ ছেড়ে দেবেন- এটাই দেশের মানুষ প্রত্যাশা করে।

Leave a comment