অচিরেই সরকারি হতে চলেছে আলমডাঙ্গা ডিগ্রি কলেজ

আলমডাঙ্গা ব্যুরো: আলমডাঙ্গা ডিগ্রি কলেজ স্থাপিত হয়েছিলো সেই ১৯৬৫ সালে। এরই মধ্যে কেটে গেছে পাঁচ দশক। বিগত কয়েক বছরে জেলায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে নতুন বেশ কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, আধুনিকীকরণ হয়েছে অনেক সরকারি, আধাসরকারি দফতর। তবে তিমিরেই পড়ে ছিলো আলমডাঙ্গা ডিগ্রি কলেজ। অবশেষে মিলেছে সুসংবাদ। দেশের অন্য আরও ২১টি বেসরকারি কলেজের সাথে আলমডাঙ্গা ডিগ্রি কলেজটিও সরকারিকরণের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্দেশনা মোতাবেক শিক্ষামন্ত্রণালয় সম্প্রতি মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরকে নির্দেশ দিয়েছে বলে জানা গেছে।

চুয়াডাঙ্গা-১ আসনের সংসদ সদস্য হুইপের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় সরকারিকরণ হতে চলেছে আলমডাঙ্গা ডিগ্রি কলেজ। সংশ্লিষ্ট বিভাগের দাপ্তরিক কাজকর্ম শেষে পূর্ণাঙ্গ সরকারি কলেজে রূপান্তর করা হবে জেলার সবচেয়ে পুরোনো এ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি। আর এর মধ্যদিয়ে আদায় হতে চলেছে আলমডাঙ্গা উপজেলাবাসীর দীর্ঘদিনের প্রাণের দাবি।

১৯৬৫ সালে প্রতিষ্ঠিত আলমডাঙ্গা ডিগ্রি কলেজটি এতদাঞ্চলের সবচে পুরাতন ও গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। জনসংখ্যার ভিত্তিতে জেলার অন্যতম প্রধান শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে এ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি। আলমডাঙ্গা উপজেলায় শিক্ষা বিস্তারে এ কলেজের অবদান অনস্বীকার্য। খানিকটা দেরিতে হলেও সম্প্রতি কলেজটিতে অনার্স কোর্স শুরু হয়েছে।

দেশে বর্তমানে সরকারি কলেজের সংখ্যা ৩০৬টি। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ডসূত্রে জানা গেছে, সরকারিকরণের বিষয়ে মন্ত্রণালয় থেকে যে সকল তথ্য চাওয়া হয়েছে, শিগগিরই কর্তৃপক্ষ (মাউসি) কলেজগুলো পরিদর্শন করে সে তথ্যগুলো সংগ্রহ করবে। তারা কলেজভিত্তিক ওই তথ্যসমূহ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। মন্ত্রণালয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠাবে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকেই নেয়া হবে সরকারিকরণের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত।

সরকারিকরণের লক্ষ্যে আলমডাঙ্গা ডিগ্রি কলেজ ছাড়াও অন্যান্য যে সকল কলেজ সরকারিকরণের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে সেগুলো হলো- ঝালকাঠির রাজাপুর ডিগ্রি কলেজ, তফাজ্জল হোসেন ডিগ্রি কলেজ, নেত্রকোনার বারহাট্টা ডিগ্রি কলেজ, খুলনার বটিয়াঘাটা ডিগ্রি কলেজ, শরণখোলা ডিগ্রি কলেজ, খলিলুর রহমান ডিগ্রি কলেজ, গোপালপুর ডিগ্রি কলেজ, রৌমারী ডিগ্রি কলেজ, মুক্তিযোদ্ধা আসাদুজ্জামান কলেজ, পার্বতীপুর ডিগ্রি কলেজ, সুবিদখালী ডিগ্রি কলেজ, জামালগঞ্জ ডিগ্রি কলেজ, মানিকাচর বঙ্গবন্ধু কলেজ, সরিষাবাড়ি বঙ্গবন্ধু কলেজ, আলাউল ডিগ্রি কলেজ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেমোরিয়াল ডিগ্রি কলেজ, জোড়পুকুরিয়া ডিগ্রি কলেজ, ধামরহাট এমএম ডিগ্রি কলেজ, বড়লেখা ডিগ্রি কলেজ, বীর শ্রেষ্ঠ শহীদ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দীন জাহাঙ্গীর কলেজ এবং কচুয়া ডিগ্রি কলেজ।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত ১০ মার্চ প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সচিব-১ স্বাক্ষরিত একটি চিঠি পাঠানো হয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে। এতে বলা হয়েছে-এ সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সরকারিকরণের জন্য এমপি, উপমন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও মন্ত্রীগণ প্রধানমন্ত্রী বরাবর উপানুষ্ঠানিক পত্র দাখিল করেছেন। সে কারণে এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা প্রদান করেছেন। গত মঙ্গলবার শিক্ষামন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব কাউসার নাসরিন স্বাক্ষরিত একপত্রে অতি সত্ত্বর কলেজগুলো পরিদর্শনপূর্বক প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ডকে। প্রতি কলেজের জন্য শিক্ষকের সংখ্যা, শিক্ষার্থীর সংখ্যা, জমির পরিমাণ, অবকাঠামোর আয়তন, খেলার মাঠের পরিমাণ, ব্যাংক স্থিতি, গত ৫ বছরের ফলাফলসহ ১৫টি তথ্য চাওয়া হয়েছে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়সূত্রে জানা গেছে, বর্তমান সরকার প্রত্যেক উপজেলায় অন্তত ১টি করে কলেজ সরকারিকরণ করতে চায়। যাতে উপজেলার অন্যান্য কলেজগুলো ওই কলেজকে মডেল হিসেবে ধরে নিয়ে চলতে পারে। ইতঃপূর্বে কমপক্ষে ৪ বার আলমডাঙ্গা ডিগ্রি কলেজ সরকারিকরণের সুযোগ সৃষ্টি হলেও আলমডাঙ্গা এলাকার কিছু রাজনৈতিক ব্যক্তির গাফিলতিতে সে সুযোগ নষ্ট হয়। অনেকে এটাকে নোংরা রাজনীতিও বলেছেন।

বেগম খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন ১৯৯১ সালের দিকে চুয়াডাঙ্গা ফুটবল মাঠে বক্তব্যে চুয়াডাঙ্গা মহিলা কলেজ ও আলমডাঙ্গা ডিগ্রি কলেজকে সরকারিকরণের ঘোষণা দিলেও তৎকালীন এমপি মিয়া মুনসুরের হঠকারী সিদ্ধান্তে সে সুযোগ হাতছাড়া হয়। ৮১-৮২ সালের দিকে প্রয়াত প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান আলমডাঙ্গা ডিগ্রি কলেজে উপস্থিত হলে আরেকবার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছিলো সরকারিকরণের। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শাহ আজিজ কলেজটি সরকারিকরণের জন্য এমবার্গও করেছিলেন। ফলাফল হয়েছিলো শূন্য। ১৯৮৫-৮৬ সালের দিকে জাতীয় পার্টির সাবেক এমপি মকবুল হোসেন জাতীয় পার্টিতে যোগদানের সময় তৎকালীন প্রেসিডেন্ট হুসাইন মোহাম্মদ এরশাদকে যে সকল শর্ত দিয়েছিলেন, তার মধ্যে আলমডাঙ্গা ডিগ্রি কলেজকে সরকারি করার শর্ত ছিলো অন্যতম। সাবেক প্রেসিডেন্ট আলমডাঙ্গায় এসে কলেজটি সরকারির ঘোষণা দেয়ার মনোভাব ব্যক্ত করলেও এখানকার নেতৃত্বের কোন্দলে তিনি দ্বিতীয়বার যাননি। আর তৎকালীন এমপি মকবুল হোসেনও এ বিষয় নিয়ে ঘাটাঘাটি না করে উপভোগ করেছেন ক্ষমতা, এমনটাই মন্তব্য আলমডাঙ্গার শিক্ষানুরাগীদের।

এভাবে বারবার আলমডাঙ্গার রাজনৈতিক নেতৃত্বের খামখেয়ালিপনায় কলেজটি সরকারিকরণের সুযোগ হাতছাড়া হলেও এবার আলডাঙ্গা ডিগ্রি কলেজ সরকারিকরণের জন্য হুইপ সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুন এমপির ঐকান্তিক প্রচেষ্টাকে সাধারণ মানুষ ইতিবাচক দৃষ্টিতেই দেখছেন।