পরীক্ষার্থীদের কথা ভেবে সহনশীল মনোভাবের পরিচয় দেয়া জরুরি

 

বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের টানা অবরোধ-হরতাল কর্মসূচি এবং একে কেন্দ্র করে নাশকতা ও সহিংসতার কারণে বিপদে পড়েছে দেশের লাখ লাখ শিক্ষার্থী। বস্তুত রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে দেশের প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষাদান প্রক্রিয়া ব্যাহত হচ্ছে। গত প্রায় তিন মাস ধরে সারা দেশের অন্তত ৪ কোটি শিক্ষার্থী পড়ালেখার কাজটি ঠিকমতো করতে পারছে না। এ রাজনৈতিক ডামাডোলের মধ্যেই ১ এপ্রিল থেকে শুরু হতে যাচ্ছে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা।

উল্লেখ্য, চলমান এসএসসি’র একটি পরীক্ষাও ঘোষিত সময়সূচি অনুযায়ী নেয়া সম্ভব হয়নি। হরতাল-অবরোধের কারণে সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোয় নেয়া হচ্ছে এ পরীক্ষা। এখন পর্যন্ত ১৬ দিনে মোট ৩৬৮টি পরীক্ষা পেছাতে বাধ্য হয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। ফলে ১১ মার্চ এ পরীক্ষা শেষ হওয়ার কথা থাকলেও এপ্রিল মাসের প্রথম সপ্তা নাগাদ শেষ হবে বলে আশা করছে কর্তৃপক্ষ। সিডিউল বিপর্যস্ত এসএসসি পরীক্ষার উদাহরণ সামনে রেখে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় দিন কাটাচ্ছেন অন্তত ১২ লাখ এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবকরা।

বলার অপেক্ষা রাখে না, এইচএসসি পরীক্ষা হচ্ছে শিক্ষার্থীদের জীবনের একটি টার্নিং পয়েন্ট। এ পরীক্ষার ফলাফলের ওপর একজন শিক্ষার্থীর উচ্চশিক্ষা গ্রহণের বিষয়টি অনেকাংশে নির্ভর করে। কাজেই একে হেলাফেলার দৃষ্টিতে দেখলে চলবে না। অন্তত পরীক্ষা চলাকালে এমন রাজনৈতিক কর্মসূচি পরিহার করা উচিত, যা পরীক্ষার্থীদের উদ্বিগ্ন ও আতঙ্কগ্রস্ত করে রাখে। মনে রাখা দরকার, যারা হরতাল-অবরোধের মতো কর্মসূচি দিচ্ছেন, তাদের অনেকেরই সন্তান এইচএসসি পরীক্ষার্থী। কাজেই বিষয়টি বিবেচনার দাবি রাখে। এ ব্যাপারে সরকারকেও দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে হবে। রাজনৈতিক মতদ্বৈততা নিরসন, যৌক্তিক দাবি উপস্থাপন ও আদায়ের জন্য আলোচনাকে প্রাধান্য দিলে হরতাল-অবরোধের মতো কোনো কর্মসূচির প্রয়োজন পড়ে না। সরকারের উচিত, বিরোধী দল যাতে আলোচনার টেবিলে আসে সেই পরিবেশ তৈরি করা। রাজনৈতিক শক্তি প্রদর্শনের নামে জনদুর্ভোগ বাড়িয়ে তোলার বিষয়টি মোটেই কাম্য নয়। দেশের কয়েক কোটি শিক্ষার্থী, বিশেষ করে আসন্ন এইচএসসি ও সমমানের অন্যান্য পরীক্ষার্থীর কথা ভেবে সরকার ও বিরোধী দল উভয়েই সহনশীল মনোভাবের পরিচয় দেবে, এটাই কাম্য।