৬ দিনে খুনিদের কেউ ধরা পড়েনি : উল্টো নিহতের পরিবারই বাড়ি ছাড়া

আলমডাঙ্গার হোসেনপুর থমথমে : জমিজমা নিয়ে নয় এক স্বামী পরিত্যক্তার ভিজিডি কার্ড দেয়া নিয়ে বিরোধের সূত্রপাত

 

হোসেনপুর থেকে ফিরে স্টাফ রিপোর্টার: হোসেনপুর গ্রামবাসীর সাথে জমি নিয়ে কেরু অ্যান্ড কোম্পানির বিরোধ থাকলেও আলোচিত গ্রামবাসীর মধ্যে বিরোধ জমি নিয়ে বিরোধ নেই। তাহলে খুন কেন? স্থানীয়রা বলেছেন, এক বিধবাকে দেয়া একটি ভিজিডি কার্ড নিয়ে যুবলীগের দু পক্ষের মধ্যে সৃষ্ট বিরোধের জের ধরে প্রভাবশালীরা হামলা চালিয়ে খুন করেছে। এ খুন মামলায় গত ৬ দিনে কেউ গ্রেফতার দূরাস্ত, উল্টো নিহতের পরিবারের সদস্যরাই আতঙ্কে বাড়ি ছাড়া।

চুয়াডাঙ্গা আলমডাঙ্গার হোসেনপুর গ্রামটি পূর্বে ছিলো নাগদাহ ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত। বর্তমানে আঁইলহাস ইউনিয়নের একটি গ্রাম। এ গ্রামের প্রতিটি পরিবারই অভিবাসী। অবশ্য দীর্ঘদিনে তারা বসবাস করে অধিবাসী হয়ে উঠেছে। কুষ্টিয়া জেলার দৌলতপুর উপজেলার ভারত সীমান্তবর্তী নদীর তীর ভাঙা চর এলাকা থেকে উঠে এসে পরিবারগুলো বসবাস শুরু করে যে স্থানে, সেই স্থানটির নামই হোসেনপুর। স্থানীয়দের অভিযোগ, আবুল হোসেন চেয়ারম্যান কেরুজ জমি লিজ নিয়ে বহিরাগতদের নিকট অর্থের বিনিময়ে যে জমি তুলে দেয়, সেই জমিতেই গড়ে ওঠে গ্রাম। প্রায় ৫০ বছর আগে কয়েকটি পরিবার বসবাস শুরু করলেও পরে বেশ কয়েকটি পরিবার বসবাস শুরু করে। পাশের জমি আবাদের মাধ্যমে জবরদখলও করে তারা। আবুল হোসেনের নাম অনুসারেই গ্রামটির নাম হোসেনপুর হয়েছে বলে গ্রামের প্রবীণ ব্যক্তিরা জানিয়ে বলেছেন, আবুল হোসেন চেয়ারম্যান কেরুজ জমি বিক্রি করে কেরুর সাথে গ্রামবাসীর যে বিরোধ সৃষ্টি করে গেছেন তা দীর্ঘদিন ধরেই চলে আসছে। কেরু অ্যান্ড কোম্পানির জমি দখল মুক্ত করার আদেশ দিলেও গ্রামবাসী তা না মেনে আইনি লড়াই চালিয়ে যায়।

হোসেনপুর গ্রামবাসীর সাথে কেরু অ্যান্ড কোম্পানির জমি নিয়ে বিরোধ থাকলেও গ্রামের কারো সাথে কারো জমি নিয়ে বিরোধ নেই। এ তথ্য জানিয়ে গ্রামের অনেকেই বলেছেন, গ্রামের দুটি পক্ষ রয়েছে। একটি পক্ষের নেতৃত্বে রেজউল-আসমান-সালাম, অপরপক্ষের নেতৃত্বে ছিলেন মান্নান-আশরাফ-লিটন-আকমল। দু পক্ষের মধ্যে মূলত বিরোধের সূত্রপাত হয়ে আশরাফের ছেলে যুবলীগ নেতা তাদের মহল্লার স্বামী পরিত্যক্তা সালেহা খাতুনকে ভিজিডি কার্ড করে দেয়। এ খবর অপরপক্ষের লোকজন জানার পর কার্ডের অনুকুলে তালিকা কেটে অন্য এক মহিলার নাম অন্তর্ভুক্ত করে। এ নিয়েই মূলত যুবলীগের দু পক্ষের মধ্যে বিরোধ দানা বাধে। গত ৫ ফেব্রুয়ারি দু পক্ষের তুমুল সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। স্থানীয় যুবলীগের অফিস ভাঙচুরসহ অগ্নিসংযোগ করা হয়। পার্শ্ববর্তী চা দোকানের বেশ কয়েকজনকে মারধরও করা হয়। এর প্রতিবাদে পাল্টা হামলার ঘটনাও ঘটে। কিন্তু মামলা হয় যুবলীগের অফিস ভাঙচুর করাদের বিরুদ্ধে। গ্রেফতার এড়াতে আশরাফসহ তার ছেলে, আইনাল হকের ছেলে লিটন, ইছাহকের ছেলে আকমল, হোসেন, মান্নানের ছেলে বিপ্লবসহ তাদের পক্ষের লোকজন গ্রাম ছেড়ে আত্মগোপন করে। এরই এক পর্যায়ে গত ১৮ মার্চ বাড়ি ফিরতে শুরু করে তারা। পরদিন সকালে অপরপক্ষ ধারালো অস্ত্র নিয়ে সজ্জিত হয়ে হামলা চালায়। তাড়িয়ে ধরে ঘাড়ে কোপ মেরে হত্যা করে আশরাফকে (৪৫)। রক্তাক্ত গুরুতর জখম হয় লিটন, আকমল, বিপ্লর, ইদ্রিস। অপরপক্ষের আসমানও গুরুতর আহত হয়।

ঘটনার দিনই ময়নাতদন্ত শেষে আশরাফের মৃতদেহ নেয়া পার্শ্ববর্তী বলেশ্বরপুর গ্রামে। এ গ্রামেরই কবরস্থানে দাফন কাজ সম্পন্ন করা হয়। আশরাফের ছেলে জিনারুল ইসলাম বাদী হয়ে হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলা দায়ের করলেও গত ৬ দিনে পুলিশ আসামিদের একজন কেউ গ্রেফতার করতে পারেনি। উপরন্তু মামলার বাদীসহ নিহতের পরিবারের সদস্যরা ঘর বাড়ি ছেড়ে অজানা ঠিকানায় অবস্থান নিয়েছেন। কেন? স্থানীয়রা বললেন, যে পক্ষ হামলা চালিয়ে প্রকাশ্যে খুন করেছে সে পক্ষ কতোটা প্রভাবশালী তা সহজেই অনুমান করা যায়। প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে মামলা করে কি গ্রামে থাকা যায়? অবশ্য প্রভাবশালী হলেও গ্রেফতার এড়াতে আসামিদের অধিকাংশই রাতে আত্মগোপন করে। গ্রামের সাধারণ পরিবারের পুরুষ সদস্যরাও পুলিশি হয়রানির আশঙ্কায় রাতে ঘরে ঘুমোয় না।

Leave a comment